রপ্তানি বাণিজ্যে পাওয়া যাবে বড় সুবিধা

অভ্যন্তরীণ শিল্প

জুমবাংলা ডেস্ক : মার্কিন নতুন প্রশাসন অভ্যন্তরীণ শিল্প খাতকে সুরক্ষা দেওয়ার যে কৌশল নিয়েছে তাতে রপ্তানি বাণিজ্যে লাভবান হবে বাংলাদেশ। আমদানি নিরুৎসাহিত এবং সম্পর্কে ভালো বনিবনা না থাকায় চীন থেকে আমদানি করা পণ্যে ৬০ শতাংশ এবং মেক্সিকোর পণ্যে ২৫ শতাংশ শুল্ক বাড়ানো হতে পারে। এতে শুল্ক প্রতিযোগিতায় বড় ধরনের সুযোগ পাবে বাংলাদেশের রপ্তানি খাত। তুলানমূলক কম শুল্ক সুবিধায় বাংলাদেশের পণ্যের কদর বাড়বে মার্কিন ভোক্তাদের কাছে।

অভ্যন্তরীণ শিল্প

সরাসরি রপ্তানি উল্লেখযোগ্য হারে বাড়ানোর সুযোগ ছাড়াও প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই) আসবে বাংলাদেশে। যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানিতে বাংলাদেশের পণ্যে গড়ে সাড়ে ১৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা রয়েছে। কম হারের এ শুল্ক সুবিধা নিতে চীনা উদ্যোক্তারা বাংলাদেশে বিনিয়োগ বাড়াচ্ছেন। ফলে চীন-মার্কিন শুল্ক লড়াইয়ে দুই দিক থেকে লাভবান হবে বাংলাদেশ।

তৈরি পোশাক বাংলাদেশের প্রধান রপ্তানি পণ্য। মোট রপ্তানি আয়ের ৮৫ শতাংশই আসে এ পণ্য থেকে। আবার একক রাষ্ট্র হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র পোশাকের প্রধান রপ্তানি বাজার। মোট রপ্তানি আয়ের ২০ থেকে ২২ শতাংশ আসে দেশটি থেকে। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রে তৈরি পোশাক রপ্তানিতে চীনা দাপট নিরঙ্কুশ। দেশটিতে পোশাক রপ্তানিতে চীনের হিস্যা ২১ শতাংশ। বাংলাদেশের হিস্যা ৯ শতাংশের কিছু বেশি। যুক্তরাষ্ট্রের সরকারি সংস্থা অফিস অব টেক্সটাইল অ্যান্ড অ্যাপারেলের (ওটেক্সা) সর্বশেষ প্রতিবেদন বিশ্লেষণে দেখা যায়, যুক্তরাষ্ট্রে শীর্ষ ১০ পোশাক রপ্তানিকারক দেশের মধ্যে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে ভিয়েতনাম। বাংলাদেশের অবস্থান তৃতীয়।

তৈরি পোশাক রপ্তানিকারক উদ্যোক্তাদের সংগঠন বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি ফারুক হাসান বলেন, চীনের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক লড়াই বাংলাদেশের জন্য সুবিধাজনক পরিস্থিতি তৈরি করেছে। প্রথমত, যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে ব্যাপক হারে রপ্তানি বাড়ানোর সুযোগ তৈরি হবে। শুল্ক বাড়ানোর ইঙ্গিতের মধ্যেই মার্কিন অনেক ব্র্যান্ড বাংলাদেশের উদ্যোক্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়িয়েছে। গত বছর দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি, শ্রমিক অসন্তোষ; এ রকম নানা কারণে যেসব মার্কিন ক্রেতা-ব্র্যান্ড সময়মতো পণ্য পাওয়ার উদ্দেশ্যে বাংলাদেশ ছেড়ে গেছে কিংবা রপ্তানি আদেশ দেওয়ার ক্ষেত্রে কিছুটা ধীর ছিল, তারাও এখন ফিরে এসেছে। দ্বিতীয় বড় সুবিধা হচ্ছে, এফডিআই আকর্ষণ। চীন থেকে পণ্য গেলে ৬০ শতাংশ, আর বাংলাদেশ থেকে গেলে ১৫ শতাংশ। অর্থাৎ বাংলাদেশের পণ্যে তিন-চতুর্থাংশই কম শুল্কের। বাণিজ্যিকভাবে বড় এ সুবিধা নিতে চীনারা এ দেশে বিনিয়োগ বাড়াবেন।

দায়িত্ব নেওয়ার পরই নির্বাহী আদেশে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সব ধরনের আমদানি পণ্যে ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপের আশ্বাস দিয়েছেন। এর মধ্যে কানাডা ও মেক্সিকোর পণ্যের ওপর ২৫ শতাংশ এবং চীনের পণ্যের ওপর ৬০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হতে পারে। এর আগেও ২০১৮ সালে প্রথমবার ক্ষমতায় আসার পর চীনা ২৫ হাজার কোটি ডলার পণ্যে প্রথমে ১০ শতাংশ এবং পরের বছর ২৫ শতাংশ হারে শুল্ক আরোপ করা হয়। পাল্টাপাল্টি ব্যবস্থা হিসেবে চীনও যুক্তরাষ্ট্রের ছয় হাজার কোটি ডলার পণ্যে শুল্ক আরোপ করে। জো বাইডেন ক্ষমতায় আসার পর সে ব্যবস্থা বহাল থাকে। অর্থনীতির দুই পরাশক্তির সেই শুল্ক লড়াইয়েও বাংলাদেশ রপ্তানিতে কিছুটা সুবিধা পেয়েছিল।

গোপন কারাগারে শিশুদেরও আটকে রাখতেন হাসিনা, দেওয়া হতো না মায়ের দুধ

রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো-ইপিবির হালনাগাদ প্রতিবেদন বলছে, সমাপ্ত ২০২৪ পঞ্জিকা বছরে বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রে ৭২০ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি করেছে, যা বছরের মোট পোশাক রপ্তানির প্রায় ১৯ শতাংশ। যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে এক সময় বাংলাদেশের ৯৭ শতাংশ পণ্যে শুল্কমুক্ত বা জিএসপি সুবিধা পাওয়া যেত। অবশ্য তৈরি পোশাক এ সুবিধার আওতায় ছিল না। ২০১৩ সালে রানা প্লাজা ধসের পর আন্তর্জাতিক মানের শ্রম পরিবেশ না থাকার কারণ দেখিয়ে জিএসপি স্থগিত করে যু্ক্তরাষ্ট্র। এর পরই আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী কর্মক্ষেত্রের নিরাপত্তা উন্নয়নে ব্যাপক বিনিয়োগ করে বাংলাদেশ। পোশাক শিল্পে নিরাপদ কর্মপরিবেশের রোল মডেল হিসেবে বাংলাদেশকে বিবেচনা করা হয় এখন। এ সুবিধায় চীনা উদ্যোক্তাদের জন্য বাংলাদেশে বিনিয়োগ আরও সহজ হবে বলে মনে করেন উদ্যোক্তারা।

সূত্র : সমকাল