কোয়ান্টাম বলবিদ্যার গাণিতিক কাঠামো নিয়ে গবেষণা করেই অনিশ্চয়তা নীতির সন্ধান পেয়েছেন হাইজেনবার্গ। দীর্ঘ কয়েক মাস আমেরিকায় কাটিয়ে এশিয়া ট্যুরে এলেন তিনি। জাপান ও সিঙ্গাপুর হয়ে এবার তাঁর গন্তব্য ভারতবর্ষ, তথা বাংলা। ৪ অক্টোবর ১৯২৯, জাহাজে কলকাতায় এসে নামলেন হাইজেনবার্গ। ঘটনাচক্রে সত্যেন্দ্রনাথ বসুও তখন কলকাতায়। সত্যেন্দ্রনাথ, কে এস কৃষ্ণাণ, ডি এম বোস, আর রাও এবং অন্যান্য পদার্থবিদ্যার অধ্যাপক ও শিক্ষকেরা সেদিন অবাক হয়ে গিয়েছিলেন, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে তাঁর আকস্মিক আগমনে।
কলকাতায় আসার আরেকটি কারণ অবশ্যই ভারতীয় কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। বছর তিনেক আগে রবীন্দ্রনাথের কথা তিনি প্রথম শুনেছিলেন অধ্যাপক ম্যাক্স বর্নের স্ত্রী হেডভিগের কাছে। গ্যোটিংগেন বিশ্ববিদ্যালয়ে হাইজেনবার্গের শিক্ষক ছিলেন বর্ন। ভারতীয় কবি তখন জার্মানির বিভিন্ন শহরে বক্তৃতা দিয়ে বেড়াচ্ছেন। কবির লেখা ঘরে–বাইরে উপন্যাসটির উচ্চ প্রশংসা করেছিলেন অধ্যাপক–পত্নী। মা–বাবাকে নিয়ে মিউনিখে রবীন্দ্রনাথের বক্তৃতা শুনতে গিয়েছিলেন হাইজেনবার্গ।
কানায় কানায় ভরে ওঠা বক্তৃতাকক্ষে প্রবেশ করতে না পেরে বাইরে গন্ডগোলের মতো ঘটনা প্রায়ই ঘটত। কী অনাবিল দক্ষতায় ছান্দিক স্বর ক্ষেপণে শ্রোতাদের মুগ্ধ করে রাখেন কবি! সেই থেকে ভারতীয় দর্শনের প্রতি আগ্রহ জন্মেছে ওয়ার্নারের। মনে হচ্ছিল, একবার মানুষটির সঙ্গে সরাসরি কথা বলতে পারলে বেশ হতো।
অবশেষে সেই সুযোগ হয়েছে দেবেন্দ্রমোহনের সৌজন্যে। ঠাকুর পরিবারের সঙ্গে অনেক দিনের ঘনিষ্ঠতা আচার্য জগদীশ চন্দ্র বসুর ভাগনে দেবেন্দ্রমোহনের। কবির প্রিয় পাত্র তিনি। মধ্যাহ্নভোজের পর হাইজেনবার্গকে সঙ্গে নিয়ে তিনি পৌঁছে গেলেন জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়িতে।
কবিপুত্র রথীন্দ্রনাথ দোতলায় একটি ঘরে চমৎকার চায়ের আয়োজন করেছেন। দেবেন্দ্রমোহন কিছুক্ষণ পর উঠে গেলেও রবীন্দ্রনাথ দীর্ঘ সময় ধরে কথা বলেছিলেন ওয়ার্নার হাইজেনবার্গের সঙ্গে। গাছের ফাঁক গলে পড়ন্ত বেলার আলো জানালার শার্সি দিয়ে ঢুকে পড়েছে ঘরে। বিজ্ঞান ও দর্শনের বাস্তব সত্য নিয়ে কথা বলছেন এক আগ্রহী জার্মান তরুণ ও প্রবীণ ভারতীয় কবি।
কলকাতা থেকে মাদ্রাজে এলেন হাইজেনবার্গ। মাদ্রাজ প্রেসিডেন্সি কলেজে তাঁকে স্বাগত জানাতে আগেই পৌঁছে গিয়েছিলেন কে এস কৃষ্ণাণ। এই বিদেশি অতিথিকে সঙ্গ দেওয়ার ভার পড়েছে বিজ্ঞান বিভাগের চূড়ান্ত বর্ষের ছাত্র চন্দ্রের ওপর। ছেলেটির পুরো নাম সুব্রহ্মণ্যন চন্দ্রশেখর। কয়েক মাস আগেই এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এসেছিলেন হাইজেনবার্গের শিক্ষক আর্নল্ড সমারফেল্ড। তাঁর সঙ্গেও সাক্ষাৎ করেছিল চন্দ্র।
সমারফেল্ডের কাছেই সে প্রথম শুনেছিল শ্রোঙ্গিগারের ওয়েভ মেকানিকস এবং হাইজেনবার্গ, ডিরাক, পাউলি ও অন্যান্য তরুণের হাতে কণাপদার্থবিজ্ঞান জগতের অগ্রগতির কথা। ফলে এবার হাইজেনবার্গের সাহচর্য ওর কাছে স্বপ্নের মতো।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।