লাইফস্টাইল ডেস্ক : কোষ্ঠকাঠিন্যে ভোগেন না- এমন মানুষ হয়তো খুঁজে পাওয়া মুশকিল। আর কয়েক দিন পরই শুরু হবে মুসলমানদের জন্য পবিত্র মাহে রমজানের রোজা। তাই এখন থেকেই রোজার প্রস্তুতি গ্রহণ করা প্রত্যেক মুসলমানের উত্তম। দরকার একটু বাড়তি সচেতনতা। রমজান মাসে অনেকেরই গ্যাস্ট্রিক ও কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা বেড়ে যায়। কোষ্ঠকাঠিন্য এড়াতে ইফতার থেকে সাহরি অবধি প্রচুর পরিমাণে পানি পান করতে হবে।
রোজার মাসে সবজি কম খাওয়া হয় বলেও কোষ্ঠকাঠিন্য হয়। সবজি, কাঁচা সালাদ, ফলমূল খেলে সমস্যা কমবে। প্রয়োজনে শরবতের পরিবর্তে ইসবগুল খেতে পারেন। গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা এড়াতে ভাজাপোড়া খাবার এড়িয়ে চলুন। ভরপেট খেয়েই শুয়ে পড়বেন না। সাহরি খাওয়ার পর কিছুক্ষণ হাঁটাহাঁটি করুন বা বসে বই পড়ুন। কিডনির রোগীরা অবশ্যই রোজার আগে চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করে নিন।
কারণ দীর্ঘ সময় পানি না পান করার ফলে তাদের ক্রিয়েটিনিন বেড়ে যেতে পারে। ইলেকট্রোলাইট বা রক্তে লবণের সমস্যাও হতে পারে। সাধারণত কারও যদি সপ্তাহে তিনবারের কম মলত্যাগ হয়, চিকিৎসকরা সেটি কোষ্ঠকাঠিন্য হিসেবে চিহ্নিত করেন। অনেকেই বলেন, নিয়মিত মল পরিষ্কার হয় না। স্বাভাবিক মলের পরিবর্তে খুব শক্ত কিছু হচ্ছে- এমন কথাও বলে থাকেন অনেকে। এ রকম উপসর্গ নিয়ে রোগীর ছুটেও যান চিকিৎসকের কাছে।
কোষ্ঠকাঠিন্য হলে যা করবেন : প্রাথমিক অবস্থায় থাকলে পূর্ণবয়স্ক মানুষের প্রতিদিন ১০ থেকে ১২ গ্লাস পানি পান করতেই হবে। বেশি বেশি শাকসবজি ও টাটকা ফলমূল খেতে হবে। নিয়মিত সকালে মলত্যাগের অভ্যাস করা সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন। কোষ্ঠকাঠিন্য হলে ইসবগুলের ভূসি দিনে ২ বার করে ৩ চা-চামচ করে খেতে হবে। নিয়মিত হাঁটাহাঁটি করতে হবে। হাঁটার ব্যবস্থা না থাকলে বাসাতেই প্রতিদিন ৪০ মিনিট করে ব্যায়াম করতে হবে। নিয়মিত ঘুম ও পরিপূর্ণ বিশ্রাম নিতে হবে। উপরিউক্ত ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে অনেক ক্ষেত্রেই কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব।
শিশুদের ক্ষেত্রে বিষয়টি কিছুটা জটিল হয়ে যেতে পারে। তাদের এ রোগকে বলা হয় ‘হাস-নান ডিজিজ’। সংকোচন-প্রসারণের মাধ্যমে মলদ্বার দিয়ে যে মল বের হয়, সেগুলো শুকিয়ে যেতে পারে। শুকিয়ে গেলে স্বাভাবিকভাবে শিশুর পায়খানা হবে না। তখন অবশ্যই একজন শিশুসার্জন বিশেষজ্ঞ বা কোলন ও রেক্টাল সার্জনের শরণাপন্ন হতে হবে। আবার অনেকের ক্ষেত্রে দেখা যায়, আগে স্বাভাবিক পায়খানা হতো। হঠাৎ করে কোষ্ঠকাঠিন্য দেখা দিয়েছে। আবার নরম পায়খানাও হচ্ছে। এ রকম লক্ষণের ক্ষেত্রে ক্ষেত্রবিশেষে কোলন বা রেক্টনি ক্যানসার হওয়ার আশঙ্কা থাকে। কাজেই কোষ্ঠকাঠিন্য ভেবে কারও এ রোগটি হেলাফেলা করা উচিত নয়।
চিকিৎসা : কোষ্ঠকাঠিন্য হলেই যে ক্যানসার হয়েছে, বিষয়টি এমন নয়। ধরে নেওয়া ঠিকও নয়। কিন্তু এ সমস্যা দীর্ঘদিন চলতে থাকলে স্বাভাবিক নিয়ম-কানুনে যদি ভালো না হয়, তাহলে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে। চিকিৎসক রোগীর মুখ থেকে বিস্তারিত তথ্য জেনে বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে কোষ্ঠকাঠিন্যের কারণ উদ্ঘাটন করে যথাযথ চিকিৎসা দেবেন। যাদের আগে থেকেই পায়ুপথের বিভিন্ন রোগ আছে, যেমন- রক্তপাত, ব্যথা, ফোলা ইত্যাদি তাদের রমজানের আগেই এর চিকিৎসা করিয়ে নিতে হবে। যদি রমজান মাসে কোনো সম্মানিত রোজাদারের এ সমস্যা দেখা দেয়, তাহলে এখনই কোলোরেক্টাল সার্জনের মাধ্যমে চিকিৎসা নিতে হবে। প্রাথমিক পর্যায়ে চিকিৎসা নিয়ে রোগী বাকি রোজাগুলো যথাযথভাবে পালন করতে পারবেন।
লেখক : সহযোগী অধ্যাপক
জেনারেল ও কোলোরেক্টাল সার্জন
ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ
চেম্বার : মডার্ন এক্স-রে অ্যান্ড প্যাথলজি ক্লিনিক
(সদর হাসপাতালের পশ্চিম পাশে), ব্রাহ্মণবাড়িয়া
০১৭১৭০৫৭৮৮৪; ০১৭৪৪২৯২২৪৮
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।