নিজস্ব প্রতিবেদক: রাজশাহী জেলা প্রশাসন ও মহিলা বিষয়ক অধিদফতরের আয়োজনে বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্য দিয়ে বেগম রোকেয়া দিবস পালিত হয়েছে।
দিবসটি উপলক্ষে শনিবার (৯ ডিসেম্বর) বেলা সাড়ে ১১টায় জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।
উক্ত সভায় জেলা প্রশাসক শামীম আহমেদের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিভাগীয় কমিশনার ড. দেওয়ান মুহাম্মদ হুমায়ূন কবীর।
এসময় বিশেষ অতিথি ছিলেন পুলিশ সুপার মোঃ সাইফুর রহমান, বিশিষ্ট সমাজসেবী শাহীন আকতার রেনী, জাতীয় মহিলা সংস্থা চেয়ারম্যান মর্জিনা পারভীন, মহিলা বিষয়ক অধিদফতর রাজশাহীর উপপরিচালক শবনম শিরিন প্রমুখ।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিভাগীয় কমিশনার বলেন, ‘নারীর অধিকার নিশ্চিত করতে হলে সবার আগে মানসিকতার পরিবর্তন আনতে হবে। তাদের শুধু কাজ-কর্ম করার সুযোগ করে দিলেই হবে না, দিতে হবে প্রতিটি ক্ষেত্রে সমান অধিকার ও মর্যাদা।’
তিনি আরও বলেন, ‘অতীতে যে প্রাচীনত্ব ও হিংস্রতা আমাদের সমাজের মধ্যে ছিল- সেখান থেকে বের হয়ে এসে একটি দেশকে পরিচালনার দায়িত্ব নেওয়ার কাজটি বাংলাদেশ করতে পেরেছে। আর সেই জন্যই মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জননেত্রী হয়েছেন, হয়েছেন অনন্য ও অদ্বিতীয়।’
বেগম রোকেয়ার জীবনের ওপর আলোকপাত করে জেলা প্রশাসক শামীম আহমেদ বলেন, ‘বেগম রোকেয়ার স্বপ্ন ও আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়নে নারীদের কাজ করতে হবে। একজন নারীকে কীভাবে প্রতিকূল পরিবেশ পার করে এগোতে হয়, সেটা বেগম রোকেয়া দেখিয়েছেন। তাঁর আদর্শকে বুকে ধারণ করে, নারীদের এগিয়ে যেতে হবে। সব ধরনের স্বার্থ ত্যাগ করে সমাজ ও দেশের জন্য কাজ করতে হবে।’
তিনি আরো বলেন, ‘নারী জাগরণের অগ্রদূত বেগম রোকেয়ার দেখানো পথে আজ নারীরা বিভিন্ন ক্ষেত্রে কৃতিত্বের স্বাক্ষর রাখছেন। এর ফলে নারী-পুরুষের বৈষম্য ভেদ করে সকল ক্ষেত্রে সমানাধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এছাড়াও নারী-পুরুষের অংশগ্রহণে দেশ আজ উন্নয়নের অগ্রযাত্রায় এগিয়ে।’
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বিশিষ্ট সমাজসেবী শাহীন আকতার রেনী বলেন, বাংলার নারী জাগরণের স্বপ্নদ্রষ্টা বেগম রোকেয়া সাখাওয়াত। তার স্বপ্ন ছিল সমাজে নারী-পুরুষ সমান মর্যাদা ও অধিকার নিয়ে বাঁচবে। সারা জীবন তিনি সেই স্বপ্নের কথা লিখে গেছেন তাঁর গল্প-উপন্যাস-প্রবন্ধগুলোতে। যা আজও দিকনির্দেশনা হিসেবে সামনে রয়েছে। তাই তো বেগম রোকেয়ার জীবন আচরণ ও নারী শিক্ষার প্রসারে তাঁর কাজ চির স্মরণীয় হয়ে রবে। তিনি এই লড়াই চালিয়ে গেছেন আমৃত্যু। সেই জন্যই তিনি ২০০৪ সালে বিবিসি বাংলার সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জরিপে ষষ্ঠ স্থানে ছিলেন।
আলোচনা সভা শেষে জেলা পর্যায়ে পাঁচ জন ও সিটি করপোরেশন পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ পাঁচ জয়িতার হাতে সম্মাননা পদক তুলে দেওয়া হয়।
তাঁরা হলেন- অর্থনৈতিক ভাবে সাফল্য অর্জনকারী নারী ক্যাটগরীতে জেলা ও মহানগর উভয় পর্যায়ে জয়িতা হয়েছে সোনিয়া খাতুন, নির্যাতনের বিভীষিকা মুছে ফেলে নতুন উদ্যমে জীবন শুরু করেছে যে নারী ক্যাটগরীতে জেলা ও মহানগর উভয় পর্যায়ে জয়িতা হয়েছে মর্জিনা, সমাজ উন্নয়নে অসামান্য অবদান রেখেছেন যে নারী ক্যাটগরীতে জেলা ও মহানগর উভয় পর্যায়ে জয়িতা হয়েছে মুহিত (মোহনা), সফল জননী নারী ক্যাটগরীতে জেলা পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ জয়িতা হয়েছে মোসা. জায়েদা বেগম ও মহানগর পর্যায়ে জয়িতা হয়েছে জাহানারা করিম।
এছাড়াও শিক্ষা ও চাকুরী ক্ষেত্রে সাফল্য অর্জনকারী নারী ক্যাটগরীতে জেলা পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ জয়িতা হয়েছে শিউলী আক্তার এবং মহানগর পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ জয়িতা হয়েছে রেজওয়ানা করিম।
নারী জাগরণের পথিকৃৎ মহীয়সী নারী বেগম রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন ১৮৮০ সালের ৯ ডিসেম্বর রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার পায়রাবন্দের এক নিভৃত পল্লীতে জন্মগ্রহণ করেন। এ মহীয়সী নারী ১৯৩২ সালের ৯ ডিসেম্বর মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুর পর তাকে উত্তর কলকাতার সোদপুরে সমাহিত করা হয়। তাই প্রতিবছর ৯ ডিসেম্বর ‘রোকেয়া দিবস’ হিসেবে দিনটি সরকারিভাবে পালন করা হয়।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।