রাজশাহী প্রতিনিধি : রাজশাহীর পবা উপজেলায় বাড়ির আঙিনায় এবং পতিত জমিতে পারিবারিক পুষ্টি বাগান গড়ে তুলে স্বাবলম্বী হয়ে উঠছে অনেক পরিবার।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কারিগরি সহযোগিতায় ইতোমধ্যে পুষ্টি বাগান গড়ে তুলেছেন ৯০০ দরিদ্র কৃষক পরিবার। এতে তাদের পরিবারে প্রতিদিনের পুষ্টি চাহিদা যেমন মিটছে ঠিক একইভাবে উদ্ধৃত সবজি বাজারে বিক্রি করে বাড়তি টাকা আয়েরও সুযোগ পাচ্ছেন তারা।
উপজেলার নওহাটা পৌরসভার কুমড়াপুকুর গ্রামের গৃহিনী জেসমিন খাতুন জুমবাংলাকে জানান, বসতবাড়ির আঙিনায় সবজি বাগান ও মসলাজাতীয় ফসল হিসেবে বস্তায় আদা চাষ করার কারণে তার পরিবারের দৈনন্দিন সবজির চাহিদা পূরণের পাশাপাশি গত এক বছরে বাড়তি আয়ও হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘আগে তরকারি কিনে খাওয়ার পয়সা ছিল না। এছাড়া বাজারে তরিতরকারির যে দাম, তাতে কিনে খাওয়া সম্ভব হতো না। কিন্তু নতুন এ প্রযুক্তিতে সবজি চাষের কারণে এখন নিজেরাও খেতে পারছি, আবার বাড়তি সবজি বাজারে বিক্রি করে আয় করতে পারছি। এই চাষ প্রযুক্তিতে তেমন কোন খরচ নেই, শুধুমাত্র শারীরিক পরিশ্রম করতে হয়।’
জেসমিন খাতুনের মতো এই প্রকল্পের আওতায় উপজেলার অনাবাদি পতিত জমি ও বসতবাড়ির আঙিনায় পারিবারিক পুষ্টি বাগানের ধারণা বদলে দিচ্ছে অসংখ্য গ্রামীণ নারীর ভাগ্য। তারা নতুন এ পদ্ধতিতে নিজের বাড়ির আশেপাশে বিভিন্ন ধরণের শাক-সবজি ও ফলমূল উৎপাদন করে পরিবারের পুষ্টি চাহিদা পূরণের পাশাপাশি বাড়তি টাকাও রোজগার করছে।
পারিবারিক পুষ্টি বাগান থেকে সারাবছর নিজেদের প্রয়োজনীয় সবজির চাহিদা মেটানো সম্ভব বলে জানান একই গ্রামের গৃহবধু মর্জিনা বেগম।
পুষ্টি বাগান নিয়ে কথা হয় পবা উপজেলাধীন কুমড়াপুকুর গ্রামের গৃহিনী নাসরিন বেগমের সঙ্গে। তিনি জানান, কোনোরকম কীটনাশক ব্যবহার না করে শুধুমাত্র ভার্মি কম্পোষ্ট সার ও জৈব বালাইনাশক পদ্ধতি অবলম্বন করে এই পুষ্টি বাগান প্রকল্পের মাধ্যমে তিনি লাউ, মিষ্টি কুমড়া, কলমিশাক, লালশাক, বেগুন ও কাঁচামরিচ আবাদ করেছেন। এখন কোন সবজি তাকে বাজার থেকে কিনতে হয় না। এমনকি ৪০০ টাকা কেজি দরে কাঁচামরিচ বিক্রি করেছেন তিনি। বসতবাড়ির আঙিনায় সাতটি বেড ও দুটি মাচা স্থাপনের মাধ্যমে তিনি সারা বছরের প্রয়োজনীয় সকল সবজির চাষাবাদ করছেন।
নিজের পরিবারের সবজির চাহিদা পূরণ করে গ্রামের অন্যান্যদের এমনকি আত্মীয়-স্বজনদের মাঝেও সবজি বিতরণ করছেন বলে জানান একই গ্রামের নওহাটা পৌর এলাকার মহিলা খামারি রহিমা খাতুন।
প্রকল্পটি কিভাবে মহিলাদের আর্থিকভাবে লাভবান করছে, সে প্রসঙ্গে রহিমা খাতুন বলেন, দৈনিক পরিবারের চাহিদা মিটিয়ে ৪-৫শ টাকার সবজি বাজারে বিক্রি করেছেন। আগে স্বামীর কাছে প্রয়োজনে টাকা চাইতে হতো কিন্তু এ প্রকল্প গ্রহণের পর তাকে আর স্বামীর কাছে কোন টাকা-পয়সা চাইতে হয় না।
সরকারের সম্পূর্ণ নিজস্ব অর্থায়নে প্রকল্পটি কুমড়া পুকুর এলাকায় ২০২৩ সালের ডিসেম্বর মাসে শুরু হয়।
পবা উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ ফারজানা তাসনিম বলেন, ‘প্রকল্পটির মাধ্যমে কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে অনাবাদি পতিত ও অব্যাবহৃত বসতবাড়ি চাষের আওতায় আনা ও দরিদ্র কৃষক পরিবারের পারিবারিক পুষ্টি চাহিদা মেটানোর জন্য সবজি ও মসলা জাতীয় ফসল উৎপাদন করাই এর লক্ষ্য।’
তিনি আরও বলেন, বসতবাড়ির আঙিনায় অনাবাদি পতিত জমিতে কালিকাপুর মডেলের মাধ্যমে পারিবারিক পুষ্টি বাগান করে কৃষকের শাক-সব্জি, ফল ও মসলার চাহিদা পূরণ, আয়-বৃদ্ধিসহ পুষ্টি নিরাপত্তা অর্জনে সহায়ক হবে। সেই লক্ষ্যে পতিত জমিতে পুষ্টি বাগান গড়তে পরিবারগুলোকে প্রশিক্ষণসহ বিনামূল্যে চারা-বীজ ও অন্যান্য উপকরণ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়াও বাগানের মাটির উর্বরতা বৃদ্ধি জন্য ইউরিয়া, ডিএমপি, এমওপি ও জৈবসার ব্যবহার করা হয়েছে। বাগান পরিচর্যা ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য ঝাঁঝরি, বীজ সংরক্ষণের পাত্রের পাশাপাশি ঘেরাবেড়ার জন্য নেটসহ বিভিন্ন ধরনের বীজ ও গাছের চারা দেওয়া হয়েছে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।