রঞ্জু খন্দকার ও সোহান আমিন, রাজশাহী থেকে: ঢাকা থেকে কাজে রাজশাহী গিয়েছিলেন আসমাউল হুসনা। কাজ শেষ করেই ছুটে এসেছেন রেশম কারখানার প্রদর্শনী দোকানে (শো রুম)। এখান থেকে ৫টি শাড়ি কিনেছেন। এর মধ্যে ৩টি গরদের, ২টি প্রিন্টের।
আসমাউল বলেন, ‘শাড়ি আমার ভীষণ প্রিয়। আর রাজশাহী মানেই সিল্ক সিটি অর্থাৎ রেশমের নগরী। সেখানে এসে সিল্কের শাড়ি কিনব না, এটা হয় না।’
শুধু আসমাউল ও তাঁর স্বজনেরা নন, রাজশাহী সিল্কের ভক্ত নন, এমন শাড়িপ্রিয় নারী খুব কমই আছেন। বিশেষ করে শাড়িতে যারা আভিজাত্য ফুটিয়ে তুলতে চান, তাদের কাছে রাজশাহী সিল্কের জুড়ি নেই।
রাজশাহীর সিল্কে মজেছেন ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও। সম্প্রতি রাজ্যটির সচিবালয় নবান্নে আয়োজিত এক সভায় তিনি রাজশাহী সিল্কের গুণগান গান।
ওই সভায় মমতাকে বলতে শোনা যায়, ‘বাংলাদেশে যে শাড়িটা খুব পাতলা, খুব ফিনফিনে সিল্ক। ওটাকে যেন কী বলে?… একটা শাড়ি পাওয়া যায় বাংলাদেশে খুব সফট। আমি ঐটা দেখে নতুন করে তৈরি করতে দিয়েছি।… রাজশাহী সিল্ক। মুর্শিদাবাদের সিল্কটা কড়কড়া আছে। এখনকার মেয়েরা কড়কড়াটা পরে না।’
সম্প্রতি রাজশাহী নগরীর শিরোইল বাসস্ট্যান্ড এলাকায় রেশম কারখানার শোরুমে গিয়ে দেখা যায়, মমতার কথিত ফিনফিনে সিল্ক শাড়ি কিনতে এসেছেন অনেকে। বিক্রয়কর্মীরা তাঁদের কাপড় বের করে দেখাচ্ছেন। দোকানে টাঙানো দর অনুযায়ী ক্রেতারা তা কিনছেন।
দোকানে টাঙানো তালিকায় দেখা যায়, গরদের প্রতিটি শাড়ি সাড়ে ৫ হাজার ও প্রিন্টের শাড়ি সাড়ে ৫ হাজার টাকা। টু-পিস জামার দাম ৩ হাজার ৮৯০ টাকা, ওড়না ১ হাজার ৯২৫ টাকা। স্কার্ফ বা হিজাবের দর ৯৫০ টাকা।
আরিফা আলম নামের এক নারী ১টি প্রিন্টের শাড়ি এবং টু-পিস জামা ও ওড়না কিনলেন। তিনি জানান, তিনি এসেছেন খুলনা থেকে কাজে। কাজ শেষ করে তিনিও সিল্কের জামা কিনতে এসেছেন এখানে। নিজের জন্য শাড়ি ও বোনের জন্য জামা কিনেছেন।
শোরুমের বিক্রয়কর্মীরা জানালেন, সিল্কের কাপড় কিনতে অনেক ক্রেতা এখানে আসেন। তবে এখানকার শোরুমের প্রচার কম হওয়ায় অনেকেই বাইরের দোকানে যান। নগরীর বিসিক শিল্প এলাকায় কিছু দোকান রয়েছে।
স্থানীয় লোকজন জানান, নগরীর মঠপুকুরের পাশে বিসিক শিল্প এলাকা সিল্কের এলাকা হিসেবে পরিচিত। এখানে সপুরা, ঊষা ও আমেনাসহ বেশকিছু সিল্কের দোকান রয়েছে। এসব দোকানে ৩ থেকে ২২ হাজার টাকার শাড়ি, ২ থেকে ২০ হাজার টাকায় থ্রি-পিস এবং সাড়ে ৫ থেকে ১০ হাজার টাকায় পাঞ্জাবি পাওয়া যায়। তবে এখানে রাজশাহী রেশম কারখানার সুতো ছাড়াও বিদেশ থেকে আমদানি করা সুতোয় কাপড় তৈরি করা হয়।
সপুরা সিল্কের ব্যবস্থাপক সাইদুর রহমান বলেন, স্থানীয় উৎপাদন কম হওয়ায় বিদেশ থেকে আমদানি করা সুতায় এখন রাজশাহীর রেশম শিল্প চলছে। এতে সুতার দাম বেশি পড়ায় মুনাফা কমে গেছে।
রেশম উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা যায়, শিরোইল এলাকায় ১৯৬১ সালে সাড়ে ১৫ বিঘা জমির ওপর গড়ে ওঠে রাজশাহী রেশম কারখানা। টানা লোকসানে থাকায় ২০০২ সালে সরকার এটি বন্ধ ঘোষণা করে। সে সময় কারখানায় ৬৩টি লুম ছিল। এর মধ্যে উৎপাদন চলত পুরোনো ৩৫টি লুমে। নতুন ২৮টি লুম চালুর আগেই বন্ধ হয়ে যায় কারখানাটি। বন্ধের আগে কারখানাটিতে বছরে বস্ত্র উৎপাদন ছিল এক লাখ ৬ হাজার মিটার।
একই সূত্র আরও জানায়, দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর ২০১৮ সালের ২৭ মে পরীক্ষামূলকভাবে রেশম কারখানার ৫টি লুম চালু করা হয়। এরপর ধাপে ধাপে চালু হয় আরও ১৪টি লুম। এখন ১৯টি লুম নিয়ে রেশমবস্ত্র উৎপাদন চলছে কারখানায়। এতে বছরে উৎপাদন হচ্ছে ২৫ থেকে ২৬ হাজার মিটার রেশম কাপড়। পর্যায়ক্রমে কারখানার আরও ২৩টি লুম চালুর পরিকল্পনা রয়েছে। ৬৩টি লুম চালু হলে বছরে উৎপাদন দাঁড়াবে দুই লাখ ৮৭ হাজার মিটার।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।