আন্তর্জাতিক ডেস্ক : ভারতের দক্ষিণ চব্বিশ পরগনার পাথরপ্রতিমা ব্লকের দক্ষিণ রায়পুরের ৯ নম্বর ঘেরীর বাসিন্দা বছর আটত্রিশের আলফাজুদ্দিন পাইক। নিজের ঘরেই শুয়েছিলেন বুধবার রাতে। হঠাৎই উধাও। কোনও খোঁজ নেই আর মানুষটার। উদ্বিগ্ন পরিবারের লোকজন চারদিকে খোঁজাখুঁজি করেও কোনও হদিশ না পেয়ে শেষমেশ পুলিশের দ্বারস্থ। পুলিশি তল্লাশিতেই বৃহস্পতিবার ভোরে কলাবাগানে খুঁজে পাওয়া গেল তাঁকে। আর তাঁর লুকিয়ে থাকার কারণ জেনে হতবাক পুলিশ। উদ্বেগ তো দূর, গোটা বিষয়টি জানতে পেরে পরিবার ও প্রতিবেশীরা আনন্দে আত্মহারা।

ব্যাপারটা কী আসলে? আলফাজুদ্দিন পাইক পেশায় দিনমজুর। স্ত্রী, দুই ছেলে ও এক মেয়েকে নিয়ে থাকেন পূর্তদপ্তরের জমিতে বেড়ার ঘরে। কখনও করেন অ্যাসবেস্টসের কাজ তো কখনও বাজারে আলু-পেঁয়াজের বস্তা মাথায় নিয়ে দোকানে-দোকানে পৌঁছে দেন তিনি। স্থায়ী কোনও কাজ না থাকায় সংসারও চলছিল বেশ কষ্টে। নুন আনতে পান্তা ফুরোনোর সংসারে যেটুকু রোজগার তার বেশিরভাগটাই উড়িয়ে দিতেন লটারির টিকিট কিনে। ধারদেনা করেই চলছিল সংসার। এসব নিয়েই স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে নিত্য অশান্তি লেগেই ছিল। লোকে বলত ‘পাগলা ফৈজুদ্দিন’। পরিবার ও প্রতিবেশীদের কাছে হেলাফেলার সেই মানুষটারই রাতারাতি পরিচয় গিয়েছে পালটে। ‘পাগল ফৈজুদ্দিন’ এখন কোটিপতি। রীতিমত তাঁকে সমীহ করে চলেছেন পাড়া প্রতিবেশীরাও।
জানা গিয়েছে, বুধবার বিকালে ঢোলাহাটের মিলনমোড়ে লটারির দোকান থেকে লটারির টিকিট কাটেন আলফাজুদ্দিন। বাড়ি ফিরে সামান্য কিছু মুখে দিয়েই শুয়ে পড়েছিলেন নিজের ঘরের মেঝেতে। হঠাৎই মোবাইলে ফোন লটারির দোকানদারের। তিনি আলফাজুদ্দিনকে জানান, প্রথম পুরস্কারের কোটি টাকা জিতেছেন তিনি। শোনামাত্রই আর দেরি করেননি তিনি। টিকিটটি ডাকাতি হওয়ার ভয়ে সেটি পকেটে নিয়ে বাড়িতে কাউকে কিছু না জানিয়েই ঘর থেকে বেরিয়ে পড়েন। তারপর থেকে তাঁর আর কোনও খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিল না। আপনজনেরা চারদিকে খোঁজাখুঁজি করেও না পেয়ে শেষে রাতে ঢোলাহাট থানায় বিষয়টি জানান। পুলিশও নিখোঁজ ওই ব্যক্তির সন্ধানে তল্লাশিতে নামে। অনেকক্ষণ ধরে খোঁজাখুঁজির পর বৃহস্পতিবার ভোরে তাঁর খোঁজ মেলে। পুলিশকে দেখেই কলাবাগান থেকে গুটিগুটি পায়ে বেরিয়ে আসেন আলফাজুদ্দিন। জানান, লুকিয়ে থাকার আসল কারণ।
পুলিশি জেরায় ওই ব্যক্তি জানান, লটারিতে কোটি টাকা পেয়েছেন শুনেই টিকিট পকেটে নিয়ে সারারাত অগুণতি মশার কামড় খেয়েও লুকিয়ে ছিলেন ওই কলাবাগানে। যদি দুষ্কৃতীরা জানতে পেরে টিকিটটি ডাকাতি করে নেয়, এই ভয়ে। সব শুনে হতবাক উপস্থিত সকলেই। আলফাজুদ্দিনের নিরাপত্তার কথা ভেবে পুলিশই উদ্যোগী হয়ে তাঁকে থানায় নিয়ে যায়। কোটিপতি ওই ব্যক্তি জানিয়েছেন, টাকা পেলে আগে ধারের টাকা শোধ করবেন তিনি। তারপর অন্য সব কিছু। অত টাকা নিয়ে তিনি কী করতে চান এখনও সেভাবে কিছু ঠিক না করলেও তাঁর ইচ্ছা সরকারি জায়গার দখলদারি ছেড়ে এবার জমি কিনে একটা পাকা বাড়ি করা।
Get the latest News first— Follow us on Zoombangla Google News, Zoombangla X(Twitter) , Zoombangla Facebook, Zoombangla Telegram and subscribe to our Zoombangla Youtube Channel.