জুমবাংলা ডেস্ক : রানা প্লাজা ধসে পড়ার আগে ভবনটির পাঁচ কারখানায় ৩১টি ক্রেতা প্রতিষ্ঠানের জন্য পোশাক উৎপাদনের কাজ চলছিল। এর মধ্যে ক্ষতিপূরণ তহবিলে ১৯টি প্রতিষ্ঠান অর্থসহায়তা দেয়। বাকি ১২ ক্রেতা প্রতিষ্ঠান কোনো ধরনের সহযোগিতায় অংশ নেয়নি। অথচ এখনও তারা বাংলাদেশে ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। এই প্রতিষ্ঠানগুলোকে ক্ষতিপূরণ না দেওয়ার অপরাধে ক্ষমা চাইতে হবে এবং ক্ষতিপূরণ তহবিলে অর্থ সহায়তা দিতে হবে। বাংলাদেশ থেকে পোশাক সংগ্রহে ব্র্যান্ড ও ক্রেতাদের আরও ন্যায়ভিত্তিক এবং স্বচ্ছ বাণিজ্য চর্চা করতে হবে।
রানা প্লাজা ধসে নিহত শ্রমিকদের স্মরণে আয়োজিত বিভিন্ন সভা এবং সমাবেশ থেকে গতকাল সোমবার এ দাবি তোলা হয়। রানা প্লাজা ধসের ১০ বছর উপলক্ষে সাভারে রানা প্লাজার সামনে এবং জুরাইন কবরস্থানে বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠন নানান কর্মসূচি পালন করে। এসব সংগঠনের অন্যান্য দাবির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে, ২৪ এপ্রিলকে শ্রমিক নিরাপত্তা ও শোক দিবস হিসেবে ঘোষণা করা। পোশাক শ্রমিকের জন্য ২৫ হাজার টাকা মজুরি নির্ধারণ। ক্ষতিপূরণের আইন বদল করে এক জীবন আয়ের সমপরিমাণ ক্ষতিপূরণ নির্ধারণ। আহতদের পুনর্বাসনের দায়িত্ব মালিক-সরকার ও ক্রেতাদের নিতে হবে। সব শ্রমিকের জন্য মালিক-সরকার ও ক্রেতাদের সমন্বয়ে জরুরি তহবিল গঠন করতে হবে।
২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল সাভারে রানা প্লাজা ধসে পড়ে। ওই ভবনে অবস্থিত ৫ পোশাক কারখানার এক হাজার ১৩৮ জন শ্রমিক নিহত হন। আহত হন আরও আড়াই হাজার শ্রমিক।
রানা প্লাজার ভিকটিম এবং জাতীয় গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশন
সকাল ১০টায় সাভারে রানা প্লাজা শহীদ বেদিতে আয়োজিত সংগঠনের এক সমাবেশ থেকে ‘রানা প্লাজা দিবস’কে রাষ্ট্রীয় শোক দিবস ঘোষণার দাবি জানানো হয়। অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন ফেডারেশনের সভাপতি আমিনুল হক আমিন। উপস্থিত ছিলেন ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় নেতা ফরিদুল ইসলাম, সুইটি সুলতানা, মো. জাহিদ এবং রানা প্লাজার ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সদস্যরা। বক্তারা বলেন, আগামী বছর থেকে দেশের সরকারপ্রধান কিংবা তাঁর প্রতিনিধি, বিজিএমইএ, বিকেএমইএ ও ক্রেতাদের সংগঠন বায়ার্স ফোরামের পক্ষ থেকে রানা প্লাজা দিবসে শ্রদ্ধা জানাতে হবে। শ্রমিকদের সংগঠিত হওয়া, দরকষাকষি করা এবং ধর্মঘট করার মৌলিক অধিকারকে বাধাহীন এবং ইপিজেড ও ইইজেড শ্রমিকদের ট্রেড ইউনিয়ন অধিকার নিশ্চিত করতে হবে।
বাংলাদেশ গার্মেন্ট শ্রমিক সংহতি
সকাল সাড়ে ৯টায় রানা প্লাজার সামনে সংগঠনের এক প্রতিবাদী র্যালি থেকে মে দিবসের মতো ২৪ এপ্রিল পালন করার আহ্বান জানানো হয়। সভা থেকে রানা প্লাজা ট্র্যাজেডির জন্য দায়ীদের সর্বোচ্চ শাস্তিসহ ৭ দফা দাবি জানানো হয়। এসব দাবির মধ্যে রয়েছে– সোহেল রানাসহ সকল দোষীর সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত, পোশাক শ্রমিকের জন্য ২৫ হাজার টাকা মজুরি এবং ক্ষতিপূরণের আইন বদল করে এক জীবনের আয়ের সমপরিমাণ ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। এছাড়া সকল শ্রমিকের জন্য মালিক-সরকার ও ক্রেতাদের সমন্বয়ে জরুরি তহবিল গঠন করতে হবে। বক্তব্য দন সংগঠনের সভাপ্রধান তাসলিমা আখতার, সাংগঠনিক সম্পাদক প্রবীর সাহা, নিহত আঁখি আক্তারের মা নাছিমা বেগম, আহত শ্রমিক রূপালী আক্তার, নিহত শ্রমিক শাওনের বাবা আজিজুর রহমান, ট্রেড ইউনিয়ন ফেডারেশনের সদস্য সোহেলা রুমী প্রমুখ।
শ্রমিক নিরাপত্তা ফোরাম এসএনএফ
জুরাইন কবরস্থানে অনুষ্ঠিত সংগঠনের এক স্মরণসভা থেকে সাভার এবং জুরাইন কবরস্থানে নিহতদের স্মরণে স্মৃতিফলক স্থাপনের দাবি জানানো হয়। দুর্ঘটনায় দায়ীদের শাাস্তি এবং নিরাপদ কর্মপরিবেশ নিশ্চিৎ করার দাবি জানানো হয় এ সময়। এছাড়া আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী ক্ষতিপূরণের স্থায়ী কাঠামো নির্ধারণের দাবি জানানো হয়। বক্তব্য দেন জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দলের সভাপতি আনোয়ার হোসাইন, জাতীয় শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি কামরুল আহসান, বিলসের ভাইস চেয়ারম্যান ও জাতীয় শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক আমিরুল হক আমিন প্রমুখ।
ব্লাস্ট
বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্টের (ব্লাস্ট) এক বিজ্ঞপ্তিতে ক্ষতিগ্রস্ত সকল শ্রমিক পরিবারের পুনর্বাসন দাবি করা হয়। এছাড়া ক্ষতিপূরণের যথাযথ মানদণ্ড নির্ধারণে শ্রম আইন সংশোধন এবং ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণে ভবিষ্যৎ প্রাপ্য মজুরি, চাকরি শেষে গ্র্যাচুইটি, অনুমিত চিকিৎসা, পরিবারের পোষ্যদের অনুমিত খরচ বিবেচনার দাবি জানানো হয়।
সাভার প্রতিনিধি জানান, রানা প্লাজার সামনে নির্মিত অস্থায়ী স্মৃতিস্তম্ভে কয়েকজন আহত শ্রমিক তাদের পঙ্গুজীবনের অবর্ণনীয় কষ্টের কথা তুলে ধরেন। আহত শ্রমিক তাসলিমা বেগম জানান, পঙ্গু জীবন নিয়ে দুর্বিষহ জীবনযাপন করছেন তিনি। দুর্ঘটনার সময় তাঁর মেরুদণ্ড ভেঙে যায়। শরীরের অন্যান্য অংশেও আঘাত পান তিনি। ন্যায্য ক্ষতিপূরণের জোর দাবি জানান তিনি।
রানা প্লাজায় আহত শ্রমিকদের সংগঠন রানা প্লাজা সার্ভাইভার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মাহমুদুল হাসান জানান, আহত শ্রমিকদের মধ্যে প্রায় ১০/১২ জন শ্রমিক এখন ভিক্ষা করে জীবন চালাচ্ছেন। আহত নীলুফা বেগম, হাওয়া বেগমসহ অনেক আহত শ্রমিকও অভাব-অনটনে দুর্বিষহ জীবনের বর্ণনা দেন। তাদের সবাই ন্যায্য ক্ষতিপূরণ দাবি করেন।
রানা প্লাজা দুর্ঘটনায় বাবা-মা হারানো ৬৪ শিশু যত্নে বড় হচ্ছে ওল্ড রাজশাহী ক্যাডেট অ্যাসোসিয়েশন্স (ওরকা) হোমসে। এখানকার শিশু-কিশোরদের সঙ্গে কথা বলেছেন আমাদের ফুলছড়ি (গাইবান্ধা) প্রতিনিধি। শিশু-কিশোররা জানায়, বাবা-মার অভাব ছাড়া আর কোনো অভাব নেই তাদের। রানা প্লাজা ধসে দুই পা হারান দিনাজপুরের ফুলবাড়ীর রেবেকা খাতুন। এখন গ্রামের বাড়িতেই পঙ্গু জীবনযাপন করেন তিনি। ফুলবাড়ী প্রতিনিধি কথা বলেছেন তাঁর সঙ্গে। পঙ্গুত্ব এবং বেকার জীবন নিয়ে দুর্বিষহ জীবনের বর্ণনা তুলে ধরেন রেবেকা। ক্ষতিপূরণ না হোক অন্তত বেঁচে থাকার মতো কোনো একটা অবলম্বনের জন্য সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছেন তিনি।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।