জুমবাংলা ডেস্ক : রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) সদ্যবিদায়ী ভিসি প্রফেসর এম আব্দুস সোবহানের দেওয়া ১৪১ জনের নিয়োগ নিয়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ সর্বত্র তোলপাড় চলছে।
এ ঘটনা তদন্তে শনিবার সকালে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের চার সদস্যের কমিটি প্রধান ইউজিসি সদস্য অধ্যাপক মুহম্মদ আলমগীর, ইউজিসির সদস্য অধ্যাপক মো.আবু তাহের, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের যুগ্ম সচিব মো. জাকির হোসেন আখন্দ এবং সদস্যসচিব ইউজিসির পরিচালক (পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়) মোহাম্মদ জামিনুর রহমান রাজশাহী পৌঁছেছেন বলে জানা গেছে।
বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) সদস্য অধ্যাপক মুহম্মদ আলমগীর এ তথ্য জানিয়েছেন।
ক্ষমতাসীন দলের ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগের নাম ভাঙিয়ে তিনি এ ‘নিয়োগ বাণিজ্য’ করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। ৫ মে রাতে ছাত্রলীগের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার কিছু নেতাকর্মীকে নিয়োগ দেওয়া হলেও সিংহভাগই নিয়োগ পেয়েছেন ছাত্রদল ও শিবির ক্যাডার। প্রফেসর সোবহানের নিজের জেলা নাটোর এবং তার মেয়ে-জামাতার জেলা বগুড়ার লোকজন বেশি চাকরি পেয়েছেন।
এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ভিসিপন্থি কিছু শিক্ষকের সন্তান ও আত্মীয়স্বজন নিয়োগ পেয়েছেন। এমন গণনিয়োগে রাবির ভাবমূর্তি মারাত্মকভাবে ক্ষুণ্ন হয়েছে বলে শিক্ষকরা মন্তব্য করেন। এ নিয়োগ নিয়ে তারা বলছেন, এভাবে লুকোচুরি করে গণহারে নিয়োগ দেওয়া নজিরবিহীন ঘটনা। এসব নিয়োগ নিয়ে বিতর্কের জেরে শিক্ষা মন্ত্রণালয় চার সদস্যের তদন্ত কমিটি করেছে। সবাই এখন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দিকে তাকিয়ে আছেন।
জানা গেছে, ২০০৪ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে বহুল আলোচিত ৫৪৪ জনকে একটি অফিস আদেশে নিয়োগ দিয়েছিলেন তৎকালীন উপাচার্য ড. ফাইসুল ইসলাম ফারুকী। নিয়োগপ্রাপ্তদের অধিকাংশই ছিলেন বিএনপি, ছাত্রদল, যুবদল ও শিবিরের ক্যাডার। এমনকি মৃত ব্যক্তির নামও সেই নিয়োগ তালিকায় উঠেছিল। এ নিয়ে আদালতে একাধিক মামলা হয়।
তবে শেষ পর্যন্ত নিয়োগপ্রাপ্তরা শুধু দিনভিত্তিক মজুরিতে কাজ করেন। তাদের মধ্যে ২৪৪ জন এখনো নিয়মিত বা স্থায়ী হতে পারেননি। মাঝেমাঝেই তারা রাবির প্রশাসন ভবনের সামনে চাকরি স্থায়ীকরণের দাবিতে অবস্থান করেন। মিছিল মিটিং করেন। অভিযোগ ছিল ওই সময় চাকরিপ্রাপ্তরা ৫ থেকে ৭ লাখ টাকা দিয়েছিলেন স্থানীয় নেতা ও বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো কোনো কর্মকর্তাকে।
এবারও ১৪১ নিয়োগের ক্ষেত্রে টাকা-পয়সার বড় লেনদেনের আলোচনায় সরব রয়েছেন রাবির শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা। এদিকে বিদায়ী ভিসির হাতে নিয়োগ পাওয়াদের ভবিষ্যৎ কী হবে জানতে চাইলে-
রাবির ভারপ্রাপ্ত ভিসি প্রফেসর ড. আনন্দ কুমার সাহা যুগান্তরকে বলেন, বিদায়ী ভিসি সোবহান সিনেটের ভোটে ভিসি প্যাানেল থেকে নির্বাচিত ভিসি ছিলেন না। শিক্ষা মন্ত্রণালয় তাকে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দিয়েছিলেন পাঁচ বছরের জন্য। এ কারণে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা মেনে চলা তার উচিত ছিল।
তিনি সেটা করেননি। মন্ত্রণালয় সব ধরনের নিয়োগের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিল। সেটা লঙ্ঘন করেই তিনি গণনিয়োগ দিয়েছেন।
এখন নিয়োগপ্রাপ্তরা কেউ যদি অফিস করতে শনিবার বিশ্ববিদ্যালয়ে যায়-এমন পরিস্থিতিতে তিনি কী করবেন-জানতে চাইলে ভারপ্রাপ্ত ভিসি আরও বলেন, এ সুযোগ তিনি দিতে পারবেন না। কারণ শিক্ষা মন্ত্রণালয় জারি করা আদেশে এসব নিয়োগকে অবৈধ বলা হয়েছে। সুতরাং নিয়োগপ্রাপ্তরা অফিসে আসবেন অফিস করবেন-এ সুযোগ নেই। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী তিনি সব পদক্ষেপ নেবেন। এর বাইরে নয়।
এ বিতর্কিত নিয়োগের বিষয়ে জানতে চাইলে রাবির সাবেক ছাত্র উপদেষ্টা প্রফেসর ড. গোলাম সাব্বির সাত্তার তাপু বলেন, ঠিক বিদায়ের প্রাক্কালে ভিসি সোবহান যেভাবে ঢালাও নিয়োগ দিয়েছেন তা কোনোভাবেই বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম-পদ্ধতির সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়। এর আগে সাবেক ভিসি ফারুকী ৫৪৪ জনকে গণনিয়োগ দিয়ে চরম বিতর্কিত হয়েছিলেন। এসব বিদায়ের আগেই করতে পারতেন প্রফেসর সোবহান। কিন্তু ঠিক বিদায়ের কয়েক ঘণ্টা আগে রেজিস্ট্রারকে বাইপাস করে এসব করেছেন। এর উদ্দেশ্য সৎ বলার কোনো অবকাশ নেই।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।