আন্তর্জাতিক ডেস্ক : জাতিসংঘের মধ্যস্থতায় করা খ্যাদ্যশস্য রপ্তানি চুক্তি থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের জন্য রাশিয়ার প্রতি আহ্বান জানিয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)।
রোববার (৩০ অক্টোবর) তারা বলছে, এই পদক্ষেপ বিশ্বব্যাপী খাদ্য সংকট কমানোর প্রচেষ্টাকে ব্যাহত করেছে। ইউক্রেন অবশ্য বলেছে, মস্কো আগে থেকেই পরিকল্পনা করে এ পদক্ষেপ নিয়েছে।
শনিবার ব্ল্যাক সি চুক্তিতে অংশগ্রহণ স্থগিত করেছে মস্কো। এতে কার্যকরভাবে বিশ্বের অন্যতম শস্য রপ্তানিকারক দেশে ইউক্রেন থেকে রপ্তানি কমে গেছে। রুশ-অধিভুক্ত ক্রিমিয়ার সেভাস্তোপল বন্দরের কাছে বড় ধরনের ইউক্রেনীয় ড্রোন হামলা চালানোর পরিপ্রেক্ষিতে এ পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে বলে জানায় মস্কো।
ইইউ পররাষ্ট্র নীতির প্রধান জোসেপ বোরেল টুইটারে লেখেন, রাশিয়ার কৃষ্ণ সাগর চুক্তিতে অংশগ্রহণ স্থগিত করার সিদ্ধান্ত ইউক্রেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধের কারণে বিশ্বব্যাপী খাদ্য সংকট মোকাবিলায় অত্যন্ত প্রয়োজনীয় শস্য ও সারের প্রধান রপ্তানি পথকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলেছে। ইইউ রাশিয়াকে এই সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করার আহ্বান জানাচ্ছে।
শনিবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এই পদক্ষেপকে ‘স্পষ্ট আপত্তিকর’ বলে অভিহিত করে বলেছেন, এটি খাদ্য সংকট বাড়িয়ে দেবে। এ ছাড়া মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এন্টনি ব্লিঙ্কেন মস্কোর বিরুদ্ধে খাদ্যকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহারের অভিযোগ এনেছেন।
রোববার ওয়াশিংটনে রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত বলেন, এ পদক্ষেপ নিয়ে মার্কিন প্রতিক্রিয়া ‘আক্রোশজনক’ ও মিথ্যাচার।
রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় বলেছে, শনিবার ভোরে ১৬টি ড্রোন দিয়ে সেভাস্তোপলের কাছে কৃষ্ণসাগরে রুশ নৌবহরে আক্রমণ করেছে ইউক্রেন। ব্রিটিশ নৌবাহিনীর ‘বিশেষজ্ঞরা’ এই সন্ত্রাসী হামলা সমন্বয় করতে সহায়তা করেছে।
রাশিয়া বলেছে, তারা ওই হামলা প্রতিহত করেছে। তবে লক্ষ্যবস্তু করা জাহাজগুলো ইউক্রেনের কৃষ্ণ সাগর বন্দর থেকে শস্য করিডোর নিশ্চিত করার কাজে নিয়োজিত ছিল।
ইউক্রেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী দিমিত্রো কুলেবা বলেন, শস্য করিডোর থেকে ২২০ কিলোমিটার দূরে বিস্ফোরণগুলোকে একটি সুপরিকল্পিত পদক্ষেপের জন্য ‘মিথ্যা অজুহাত’ হিসেবে ব্যবহার করেছে মস্কো।
কোনো প্রমাণ ছাড়াই কুলেবা টুইটারে বলেন, রাশিয়া এটি আগে থেকেই পরিকল্পনা করেছে। রাশিয়া তার ‘ক্ষুধা নিয়ে খেলা’ আবার শুরু করার সিদ্ধান্ত অনেক আগেই নিয়েছিল এবং এখন এটিকে ন্যায্য করার চেষ্টা করছে।
শনিবার প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির চিফ অব স্টাফ রাশিয়াকে তাদের নিজস্ব স্থাপনায় কল্পিত হামলার নাটক সাজানোর জন্য অভিযুক্ত করেছেন।
প্রায়ই রাশিয়াকে ইউক্রেনের বেসামরিক লক্ষ্যবস্তুতে ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপের জন্য কৃষ্ণ সাগরের নৌবহর ব্যবহার করার অভিযোগ করে কিয়েভ।
অন্যদিকে, গত মাসে নর্ড স্ট্রীম গ্যাস পাইপলাইনগুলো গুঁড়িয়ে দেওয়ার জন্য ব্রিটিশ নৌবাহিনীর কর্মীদেরও অভিযুক্ত করেছে মস্কো। তবে লন্ডন বলেছে, এটি মিথ্যা দাবি এবং ইউক্রেনে রাশিয়ার সামরিক ব্যর্থতা ঢাকার জন্য সাজানো হয়েছে।
শস্য চুক্তি থেকে রাশিয়ার সরে যাওয়া ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়ার আক্রমণ শুরু হওয়া পর আট মাসের যুদ্ধে একটি নতুন অগ্রগতি নির্দেশ করে। সেটি হলো সম্প্রতি ইউক্রেনের পাল্টা হামলা এবং রাশিয়ান ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ইউক্রেনের উৎপাদন ক্ষমতার ৩০ শতাংশেরও বেশি ধ্বংস করেছে এবং জনবহুল এলাকায় আঘাত হেনেছে।
উভয় পক্ষ পরস্পরের বিরুদ্ধে তেজস্ক্রিয় বোমা বিস্ফোরণের প্রস্তুতি নেওয়ার জন্য অভিযুক্ত করেছে।
জাতিসংঘ এবং গ্রুপ অব টুয়েন্টি (জি২০) প্রধান অর্থনীতির দেশগুলোর কাছে একটি শক্তিশালী প্রতিক্রিয়া জানানোর আহ্বান জানিয়েছেন জেলেনস্কি। শস্য চুক্তি থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্তকে রাশিয়ার অর্থহীন পদক্ষেপ বলে অভিহিত করেছেন তিনি।
শনিবার এক ভিডিও বার্তায় জেলেনস্কি বলেন, রাশিয়াকে জি-২০ থেকে বের করে দেওয়া উচিত।
শস্য চুক্তিটির কারণে ইউক্রেন থেকে শিপমেন্ট পুনরায় চালু হয়েছিল। বিশ্ব বাজারে দেশটিকে শস্য বিক্রয়ের অনুমতি দেওয়া হয়েছিল। প্রতি মাসে ইউক্রেন থেকে ৫০ লাখ মেট্রিক টন রপ্তানি করার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছিল।
২২ জুলাইয়ের এই চুক্তির আওতায় ৯০ লাখ টনের বেশি ভুট্টা, গম, সূর্যমুখীজাত পণ্য, বার্লি, সরিষা ও সয়া রপ্তানি করা হয়েছে।
কিন্তু ১৯ নভেম্বর চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে রাশিয়া বারবার বলেছে, এতে গুরুতর সমস্যা আছে। ইউক্রেন অভিযোগ করেছে, প্রায় ২০০টি জাহাজকে শস্য ভর্তি কার্গো তুলতে বাধা দিয়েছে মস্কো।
যখন চুক্তিটি স্বাক্ষর করা হয়েছিল, তখন জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি জানিয়েছিল, প্রায় ৪৭ মিলিয়ন মানুষ ‘প্রচণ্ড ক্ষুধায়’ ভুগছে। কারণ যুদ্ধ ইউক্রেনের রপ্তানি চলান বন্ধ করে দেয়, এতে বিশ্বব্যাপী খাদ্যের ঘাটতি দেখা দেয় এবং দাম বেড়ে যায়।
শনিবার জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসকে দেওয়া চিঠিতে রাশিয়া বলেছে, তারা চুক্তিটি ‘অনির্দিষ্টকালের জন্য’ স্থগিত করছে। কারণ এই চুক্তি ‘বেসামরিক জাহাজের নিরাপত্তার নিশ্চয়তা’ দিতে পারে না।
সেভাস্তোপল হামলা নিয়ে আলোচনা করতে সোমবার জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদকে বৈঠক করার আহ্বান জানিয়েছে মস্কো। জাতিসংঘে নিযুক্ত দেশটির উপ-রাষ্ট্রদূত দিমিত্রি পলিয়ানস্কি টুইটারে এ আহ্বান জানান।
শনিবার চুক্তিতে জাতিসংঘের সমন্বয়কারী আমির আবদুল্লাহ বলেন, এদিন ১০টিরও বেশি জাহাজ মানবিক করিডোরে প্রবেশের জন্য অপেক্ষা করেছিল। কিন্তু রোববার জাহাজ চলাচলের বিষয়ে কোনো চুক্তি হয়নি।
সূত্র : রয়টার্স
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।