আন্তর্জাতিক ডেস্ক: ইউক্রেন সীমান্তে দুই মাস ধরে রাশিয়ার সেনাদের উপস্থিতি নিয়ে উত্তেজনা বিরাজ করছে পশ্চিমা বিশ্বে। এদিকে চলমান রাশিয়া-ইউক্রেন উত্তেজনা যুদ্ধে রূপ নেওয়ার আশঙ্কার মধ্যেই দিন দু’য়েক আগে ইউক্রেন সীমান্ত থেকে কিছু সংখ্যক সেনা ফিরিয়ে নেওয়ার কথা জানিয়েছিল মস্কো। তবে সেনা সরোনার বিষয়ে মস্কোর এই দাবিকে মিথ্যা বলে আখ্যায়িত করেছে যুক্তরাষ্ট্র। খবর বিবিসি’র।
উপরন্তু গত কয়েকদিনে আরও কয়েক হাজার রুশ সেনা ইউক্রেন সীমান্তে গেছেন বলেও জানিয়েছে দেশটি। যুক্তরাষ্ট্রের জ্যেষ্ঠ এক কর্মকর্তার বরাত দিয়ে বৃহস্পতিবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।
মার্কিন ওই জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তার নাম প্রকাশ করেনি বিবিসি। তবে ওই কর্মকর্তা বলেছেন, সর্বশেষ কয়েকদিনে ইউক্রেন সীমান্তে নতুন করে আরও ৭ হাজার সেনা জড়ো করেছে রাশিয়া। একইসঙ্গে মিথ্যা অজুহাতে রাশিয়া যেকোনো সময় ইউক্রেনে হামলা করতে পারে বলেও জানিয়েছেন তিনি।
ইউক্রেন সীমান্তে দীর্ঘদিন ধরেই প্রায় এক লাখ সেনাসদস্য মোতায়েন রেখেছে প্রতিবেশী রাশিয়া। এর মধ্যে ট্যাংক ও কামানসহ যুদ্ধবিমানের বহরও ইউক্রেন সীমান্তে পাঠিয়েছে দেশটি। যেকোনো মুহূর্তে রুশ সেনারা দেশটিতে আক্রমণ করতে পারে বলেও আশঙ্কা রয়েছে। যদিও ইউক্রেনে হামলার কোনো পরিকল্পনা নেই বলে বরাবরই দাবি করে আসছে মস্কো।
তবে যুক্তরাষ্ট্র বরাবরই বলছে যে, যেকোনো মুহূর্তে ইউক্রেনে হামলা করে বসতে পারে রাশিয়া। একই আশঙ্কা প্রকাশ করছে ওয়াশিংটনের অন্যান্য মিত্র দেশগুলোও। এমনকি বুধবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) এই হামলা হতে পারে বলেও ইঙ্গিত দিয়েছিল মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থাগুলো। যদিও হামলার বিষয়ে নির্দিষ্ট কোনো তারিখের কথা নিশ্চিত করেনি বাইডেন প্রশাসন।
এই পরিস্থিতিতে গত মঙ্গলবার রাশিয়া জানায়, সামরিক মহড়া শেষে ইউক্রেনে সীমান্ত থেকে ঘাঁটিতে ফিরতে শুরু করেছে রুশ সেনারা। কিন্তু পশ্চিমা দেশের কর্মকর্তারা বলছেন, মস্কোর এই দাবির পক্ষে কোনো প্রমাণ তারা পাননি।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের বাসভবন হোয়াইট হাউসের জ্যেষ্ঠ এক কর্মকর্তা বুধবার সংবাদিকদের বলেন, ‘মঙ্গলবার ইউক্রেন সীমান্ত থেকে সেনা ফিরিয়ে নেওয়ার কথা জানিয়েছে রুশ সরকার। সেনা সরানোর বিষয়ে মস্কোর এই দাবি যুক্তরাষ্ট্রসহ সারা বিশ্বের ব্যাপক মনোযোগ পেয়েছে। কিন্তু আমরা জানি এটি (সেনা সরানোর দাবি) মিথ্যা।’
বেশ কয়েকটি বার্তাসংস্থার বরাত দিয়ে এই কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘গত কয়েকদিনে ইউক্রেন সীমান্তে আরও ৭ হাজার সেনা জড়ো করেছে রাশিয়া। এর মধ্যে বুধবারও সেখানে অনেক সেনা পৌঁছেছে।’
এদিকে রাশিয়ার সেনা সরানোর দাবির পর বুধবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছিলেন, ইউক্রেনে রাশিয়ার সামরিক হামলার এখনও জোরালো আশঙ্কা রয়েছে। তিনি বলেন, পূর্ব ইউরোপের এই দেশটিতে হামলা হলে বহু সংখ্যক মানুষের মৃত্যু হবে এবং রাশিয়ার অর্থনীতির বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়বে।
জাতির উদ্দেশে দেওয়া এই ভাষণে প্রেসিডেন্ট বাইডেন আরও বলেন, রাশিয়া ইউক্রেনে হামলা চালালে যুক্তরাষ্ট্র তার কঠোর জবাব দিতে প্রস্তুত রয়েছে। তার ভাষায়, ইউক্রেন সীমান্তে রাশিয়া এখনও প্রায় ১ লাখ ৫০ হাজার সেনা মোতায়েন করে রেখেছে। এমনকি রুশ সেনা ফিরিয়ে নেওয়ার খবরের সত্যতা নিশ্চিত করা যায়নি বলেও মন্তব্য করেছিলেন তিনি।
বাইডেন বলেন, ‘রুশ সেনাদেরকে তাদের ঘাঁটিতে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়া হবে একটি ভালো ঘটনা কিন্তু আমরা এখনও এ বিষয়টি নিশ্চিত করতে পারছি না। প্রকৃতপক্ষে আমাদের বিশ্লেষকরা বলছেন, এসব সেনা এখনও ইউক্রেনকে হুমকিতে রাখার মতো অবস্থায় রয়ে গেছে।’
এর আগে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন টুইটার দেওয়া এক বার্তায় বলেন, রাশিয়া থেকে পরস্পরবিরোধী খবর আসছে। দেশটি ইউক্রেন সীমান্তে একাধিক ফিল্ড হাসপাতাল নির্মাণ করছে। এটিকে শুধু যুদ্ধের প্রস্তুতি হিসেবেই ধরে নেওয়া যায়।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।