জুমবাংলা ডেস্ক: নানা জল্পনা-কল্পনার পর রাষ্ট্রপতি পদে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রায় চূড়ান্ত পর্যায়ে। সবাইকে ছাড়িয়ে এখন আলোচনায় কেবল দুটি নাম। তারা হলেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এবং প্রধানমন্ত্রীর অর্থনীতিবিষয়ক উপদেষ্টা ড. মসিউর রহমান। সব দিক বিচেনায় ওবায়দুল কাদেরেরই বঙ্গভবনে যাওয়ার সম্ভাবনা বেশি।
বিভিন্ন মহলে ব্যাপক আলোচনা হলেও নানা বিবেচনায় শেষ পর্যন্ত স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর রাষ্ট্রপতি হওয়ার সম্ভাবনা নেই বলে একাধিক সূত্রে জানা গেছে।
জাতীয় দৈনিক কালবেলার আজকের সংখ্যায় প্রকাশিত এনায়েত শাওনের করা একটি বিশেষ প্রতিবেদনে এই তথ্য তুলে ধরা হয়েছে।
আগামী ২৩ এপ্রিল বর্তমান রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের মেয়াদ শেষ হচ্ছে। সংবিধান অনুযায়ী দুবারের বেশি রাষ্ট্রপতি হওয়ার সুযোগ না থাকায় রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পদে নতুন কাউকে নির্বাচন করতে হবে। নির্বাচন কমিশন ঘোষিত তপশিল অনুযায়ী আগামী ১৮ ফেব্রুয়ারি রাষ্ট্রপতি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। আগ্রহী প্রার্থীরা আগামী ১২ ফেব্রুয়ারি মনোনয়নপত্র জমা দিতে পারবেন।
জাতীয় সংসদের সদস্যরা রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের ভোটার। সংসদে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠ দল আওয়ামী লীগের মনোনয়ন যিনি পাবেন, তিনিই রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হবেন। বিষয়টি নিয়ে ক্ষমতাসীন দলের নীতিনির্ধারণী পর্যায়েও আলাপ-আলোচনা চলছে। প্রধানমন্ত্রী ও দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনা নিজেও বিভিন্ন পর্যায়ের মতামত নিচ্ছেন। শেষ পর্যন্ত তিনিই রাষ্ট্রপতি পদের মনোনয়ন চূড়ান্ত করবেন।
দলীয় সূত্রের বরাত দিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়, আগামীকাল মঙ্গলবার জাতীয় সংসদ ভবনে আওয়ামী লীগের সংসদীয় দলের বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে এ সভায় রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে দলের প্রার্থিতা নিয়ে আলোচনা হতে পারে। সভায় দলের সংসদ সদস্যরা রাষ্ট্রপতি পদে মনোনয়ন চূড়ান্ত করার জন্য প্রধানমন্ত্রীকে দায়িত্ব দিতে পারেন। আবার প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী সংসদীয় দলের সভায় রাষ্ট্রপতি প্রার্থীর নাম প্রস্তাব ও অনুমোদন করা হতে পারে।
দেশের ২২তম রাষ্ট্রপতি পদে দলীয় মনোনয়নের জন্য আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে বেশ কয়েকটি নাম নিয়ে আলোচনা হয়েছে। তাদের মধ্যে রয়েছেন সাবেক প্রধান বিচারপতি খায়রুল হক ও বিচারপতি মোজাম্মেল হোসেন, আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমির হোসেন আমু, প্রধানমন্ত্রীর অর্থনীতিবিষয়ক উপদেষ্টা ড. মসিউর রহমান, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, জাতীয় সংসদের স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী এবং আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।
জানা গেছে, এসব নাম নিয়ে আলোচনা হলেও নানা কারণে রাষ্ট্রপতি পদে একজন রাজনীতিবিদকেই দেখতে চান আওয়ামী লীগের বেশিরভাগ নেতা। অতীতের বিভিন্ন ঘটনা বিবেচনায় নিয়ে তারা বলছেন, বিদায়ী রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ একজন রাজনীতিবিদ। তিনি গত ১০ বছর বিতর্কমুক্ত থেকে সফলতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেছেন। ২০১৪ সালের জাতীয় নির্বাচনের পর নতুন সরকারের শপথ নেওয়ার সময় নিয়ে কিছু প্রশ্ন দেখা দিলেও রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ সেই সময় সাহসিকতা ও বিশ্বস্ততার সঙ্গে ভূমিকা রাখেন। আবার সাবেক প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহাকে নিয়ে সৃষ্ট সমস্যা সমাধানেও তার ভূমিকা ছিল গুরুত্বপূর্ণ। অন্যদিকে ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় আসার পর অরাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমেদকে রাষ্ট্রপতি করেছিল আওয়ামী লীগ; কিন্তু ২০০১ সালের নির্বাচনকালে তার ভূমিকা ছিল প্রশ্নবিদ্ধ।
রাষ্ট্রপতি পদের জন্য অদম্য সাহস, বিশ্বস্ততা এবং যে কোনো পরিস্থিতি মোকাবিলার কৌশলী হওয়ার ক্ষমতা ছাড়াও রাজনৈতিক প্রজ্ঞা জরুরি। এসব বিবেচনায় বর্তমানে রাষ্ট্রপতি হওয়ার সম্ভাবনায় সবচেয়ে এগিয়ে আছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপট এবং জাতীয় রাজনীতির নানা দিক বিবেচনায় রাষ্ট্রপতি পদে তাকেই সবচেয়ে বিশ্বস্ত মনে করা হচ্ছে। ষাটের দশকে কলেজ জীবনে রাজনীতিতে হাতেখড়ির পর থেকে তিনি ধারাবাহিকভাবে আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ে দায়িত্ব পালন করে আসছেন। এই দীর্ঘ সময়ে কখনোই তিনি আদর্শ থেকে বিন্দুমাত্র বিচ্যুত হননি।
ওবায়দুল কাদের ১৯৬৬ সালের ৬ দফা আন্দোলনে প্রত্যক্ষ অংশ নেন। ১৯৬৯ সালের গণ আন্দোলন এবং ছাত্রদের ১১ দফা আন্দোলনে তিনি সক্রিয় ভূমিকা রাখেন। একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধে মুজিব বাহিনীতে যোগদান করে কোম্পানীগঞ্জ থানার অধিনায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার পর খুনিরা ওবায়দুল কাদেরকে আড়াই বছর কারাবন্দি করে রাখে। কারাগার থেকেই তিনি ছাত্রলীগের সভাপতি নির্বাচিত হন। তিনি পরপর দুই মেয়াদে এ পদে দায়িত্ব পালন করেন।
১৯৮১ সালে শেখ হাসিনা দেশে ফেরার পর থেকে ওবায়দুল কাদের তার নেতৃত্বের প্রতি সম্পূর্ণ অনুগত রয়েছেন। বঙ্গবন্ধুকন্যার প্রতি তার বিশ্বস্ততা প্রশ্নাতীত। ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউতে আওয়ামী লীগ কার্যালয়ের সামনে আওয়ামী লীগের সমাবেশে ভয়াবহ গ্রেনেড হামলায় দলীয় প্রধানের সঙ্গে তিনিও গুরুতর আহত হন। এক-এগারোর তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে ২০০৭ সালের ৯ মার্চ গ্রেপ্তার হন। ১৭ মাস ২৬ দিন কারাগারে ছিলেন তিনি। সেই সময় আওয়ামী লীগের অনেক সিনিয়র নেতা সংস্কারপন্থি হিসেবে শেখ হাসিনাকে নেতৃত্ব থেকে সরানোর ষড়যন্ত্রে যুক্ত হন; কিন্তু নির্যাতনের মুখেও ওবায়দুল কাদের বঙ্গবন্ধুকন্যার নেতৃত্বের প্রতি অবিচল থাকেন।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতাদের মধ্যে ওবায়দুল কাদের বারবার নিজেকে সাহসী হিসেবে প্রমাণ করেছেন। পরপর তিনবার দলের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হওয়ায় ওবায়দুল কাদেরের জীবনে চাওয়া-পাওয়ার আর কিছু নেই। তবে বর্তমান আন্তর্জাতিক ও জাতীয় প্রেক্ষাপটে রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ পদে তার মতো বিশ্বস্ত নেতৃত্ব প্রয়োজন বলে অনেকে মনে করছেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও একাধিকবার দল ও সরকারের দায়িত্ব পালনে ওবায়দুল কাদেরের দক্ষতার প্রশংসা করেছেন। কর্ণফুলীতে বঙ্গবন্ধু টানেলের একটি টিউবের কাজ সমাপ্তি উদযাপনের অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন, ওবায়দুল কাদেরের মতো কর্মঠ লোক খুব কম আছে। তাকে পার্টির সেক্রেটারি করার পর আমার চাপ অনেক কমে গেছে।
শারীরিকভাবে অসুস্থ থাকার পরও ওবায়দুল কাদের দল ও মন্ত্রণালয় সমানতালে সামলে গেছেন। তার নেতৃত্বেই পদ্মা সেতু, এক্সপ্রেসওয়ে, কর্ণফুলী টানেল, মেট্রোরেলসহ গুরুত্বপূর্ণ অনেক অবকাঠামো নির্মাণ সফলভাবে সমাপ্ত হয়েছে। সারা দেশে সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নের নিদর্শন হিসেবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এক দিনে শত সেতু উদ্বোধন করেছেন। রাষ্ট্রীয় দায়িত্বের পাশাপাশি তিনি দলের কর্মকাণ্ড সামলেছেন সব্যসাচীর মতো। সব মিলিয়ে রাষ্ট্রপতি পদের মনোনয়ন সম্ভাবনায় ওবায়দুল কাদের সবার চেয়ে এগিয়ে রয়েছেন বলে জানা গেছে।
ওবায়দুল কাদের মনোনয়ন না পেলে প্রধানমন্ত্রীর অর্থনীতিবিষয়ক উপদেষ্টা মসিউর রহমান হবেন পরবর্তী রাষ্ট্রপ্রধান। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে গ্রহণযোগ্যতার কারণে ড. মসিউর রহমান রাষ্ট্রপতি হিসেবে জোর বিবেচনায় রয়েছেন। কর্মজীবনে একজন আমলা হিসেবে তিনি নিজের দক্ষতা প্রমাণ করেছেন। স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ব্যক্তিগত কর্মকর্তা হিসেবে যোগ দিয়েছিলেন। এরপর চাকরিজীবনে গুরুত্বপূর্ণ নানা দায়িত্ব পালন করেন। অর্থনৈতিক বিষয়ে একজন বোদ্ধা আমলা হিসেবে নিজেকে প্রমাণ করেছেন। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ড. মসিউর রহমান ইআরডি সচিবের দায়িত্ব পালন করেন। আর ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ দ্বিতীয়বারের মতো সরকার গঠন করলেও মসিউর রহমানকে অর্থনীতিবিষয়ক উপদেষ্টা করেন প্রধানমন্ত্রী। সেই থেকে তিনি এখন পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।