নিজস্ব প্রতিবেদক, গাজীপুর: দেশের প্রথম রাষ্ট্রায়ত্ত ব্র্যান্ড হিসেবে আনুষ্ঠানিকভাবে নিজস্ব ইলেকট্রিক মোটরসাইকেল বাজারজাত শুরু করেছে এটলাস বাংলাদেশ লিমিটেড (এবিএল)। ‘এটলাস ইভি’ নামের এই পরিবেশবান্ধব মোটরসাইকেল ব্র্যান্ডের উদ্বোধন হয়েছে বুধবার (৫ নভেম্বর) গাজীপুরের টঙ্গীতে প্রতিষ্ঠানটির কারখানা প্রাঙ্গণে।

শিল্প মন্ত্রণালয়ের অধীন বাংলাদেশ ইস্পাত ও প্রকৌশল করপোরেশনের (বিএসইসি) নিয়ন্ত্রণাধীন প্রতিষ্ঠান এটলাস বাংলাদেশ লিমিটেডের উদ্যোগে আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে বাজারজাত কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন শিল্প এবং গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান।
অনুষ্ঠানে শিল্প সচিব মো. ওবায়দুর রহমান, বিএসইসি চেয়ারম্যান মু. আনোয়ারুল আলম (অতিরিক্ত সচিব), এবিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আজিবর রহমানসহ প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা, কর্মচারী, শ্রমিক ও দেশজুড়ে আসা ডিলাররা উপস্থিত ছিলেন।
এটলাস কর্তৃপক্ষ জানায়, চীনের ঝেজিয়াং লুয়ান ইলেকট্রিক ভেহিকেল কোং লিমিটেডের সঙ্গে চলতি বছরের মে মাসে স্বাক্ষরিত সমঝোতা স্মারকের (এমওইউ) সফল বাস্তবায়নের অংশ হিসেবেই এই ইলেকট্রিক মোটরসাইকেল বাজারে আনা হয়েছে।
‘এটলাস ইভি’ চারটি মডেলে (এস-১০০, এস-৯০, এস-৮০, এস-৭০) পাওয়া যাবে। প্রতিটি মডেল বাংলাদেশের আবহাওয়া, রাস্তার অবস্থা ও গ্রাহকের ব্যবহার বিবেচনায় বিশেষভাবে ডিজাইন করা হয়েছে। দাম এখনো নির্ধারণ করা না হলেও এক লাখ টাকার ওপরে হতে পারে বলে জানিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।
এবিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আজিবর রহমান বলেন, “আমরা আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন ও আকর্ষণীয় ডিজাইনের মডেল নিয়ে ‘এটলাস ইভি’র যাত্রা শুরু করছি। আশা করছি, এর আধুনিক ফিচার ও সাশ্রয়ী মূল্য ক্রেতাদের প্রত্যাশা পূরণ করবে।”
তিনি আরও জানান, উদ্বোধনী অনুষ্ঠানেই ১২০টি ইলেকট্রিক মোটরসাইকেল বিক্রি হয়ে গেছে। শিগগিরই দেশব্যাপী এটলাসের ডিলার আউটলেটগুলোতে এই মোটরসাইকেল পাওয়া যাবে।
শিল্প সচিব মো. ওবায়দুর রহমান বলেন, “এবিএলের মতো একটি রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ইলেকট্রিক মোটরসাইকেল বাজারজাত হওয়ায় ক্রেতাদের জন্য গুণগত মান, সাশ্রয়ী মূল্য ও নির্ভরযোগ্য বিক্রয়োত্তর সেবা নিশ্চিত হবে। এটি দেশের উচ্চ প্রযুক্তির উৎপাদন শিল্পকে উৎসাহিত করবে এবং ইভি খাতে আরও উদ্ভাবন ও বিনিয়োগকে অনুপ্রাণিত করবে।”
প্রধান অতিথি আদিলুর রহমান খান বলেন, “বর্তমান সরকার গ্রিন মবিলিটি বা পরিবেশবান্ধব যানবাহন ব্যবস্থার প্রসারে এবং টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। এটলাস বাংলাদেশের এই উদ্যোগ শুধু কার্বন নিঃসরণই কমাবে না, বরং জীবাশ্ম জ্বালানির পেছনে ব্যয় হওয়া মূল্যবান বৈদেশিক মুদ্রাও সাশ্রয় করবে।”
মোটরসাইকেলের বিশেষ বৈশিষ্ট্য
লিকুইড-কুলিং মোটর: বাংলাদেশের যানজটপূর্ণ রাস্তায়ও মোটরের স্থায়িত্ব ও পারফরম্যান্স ধরে রাখতে প্রতিটি মডেলে লিকুইড-কুলিং প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে।
গ্রাফিন ব্যাটারি প্রযুক্তি: উন্নত গ্রাফিন ব্যাটারিতে একবার পূর্ণ চার্জে খরচ হবে প্রায় ১৫ টাকা, যা দিয়ে এস-১০০ মডেল ১০০–১২০ কিলোমিটার পর্যন্ত চলতে সক্ষম।
আধুনিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা: প্রতিটি মোটরসাইকেলে রয়েছে এনএফসি অ্যান্টি-থেফট সিস্টেম, যা সুরক্ষা নিশ্চিত করে।
টেকসই নির্মাণ: রেডিয়াল অ্যান্টি-পাংচার টায়ার ও ওয়াটার রেজিস্ট্যান্স ফিচার থাকায় বর্ষাতেও রাইডিং থাকবে নিশ্চিন্ত।
দেশীয় উৎপাদন শিল্পে এটলাস বাংলাদেশের এই নতুন অধ্যায় শুধু ইলেকট্রিক যানবাহনের প্রসারই নয়, বরং টেকসই, পরিবেশবান্ধব এবং প্রযুক্তিনির্ভর ভবিষ্যতের দিকেও এক প্রতিশ্রুতিময় অগ্রযাত্রা হিসেবে দেখা হচ্ছে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।



