জুমবাংলা ডেস্ক : গাজীপুরে একটি মাদক নিরাময় কেন্দ্র থেকে মাদক উদ্ধার করা হয়েছে। মাদকাসক্তদের পুনর্বাসনের জন্য কেন্দ্র খোলা হলেও সেখানে চলতো শারীরিক, মানসিক ও যৌন নির্যাতন। রোগীকে পছন্দ হলে তার ওপর যৌন নির্যাতন চালাতেন নিরাময় কেন্দ্রটির মালিক ফিরোজা নাজনীন বাঁধন। ওই কেন্দ্রে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের কাছে থেকে হাতিয়ে নেওয়া হতো লাখ লাখ টাকা। কোনো রোগী তাদের অভিভাবকদের কাছে অভিযোগ করলে নির্যাতনের মাত্রা আরও বাড়িয়ে দেওয়া হতো। র্যাব বলছে, ওই কেন্দ্রটির সব কর্মকর্তা-কর্মচারী ছিলেন মাদকাসক্ত!
গত মঙ্গলবার সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত গাজীপুর জেলা শহরের ভুরুলিয়া কালাসিকদারের ঘাট এলাকায় ‘ভাওয়াল মাদকাসক্ত পুনর্বাসন কেন্দ্র’ নামক একটি প্রতিষ্ঠানে র্যাব ও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের অভিযানের পর এমন তথ্য বেরিয়ে আসে। এ সময় ওই কেন্দ্র থেকে বেশ কিছু মাদক উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় ওই পুনর্বাসন কেন্দ্রের মালিক ফিরোজা নাজনীন বাধনসহ পাঁচজনকে আটক করেছে র্যাব। ওই কেন্দ্র থেকে ৪২০ পিস ইয়াবা উদ্ধার করা হয়। কেন্দ্রটি মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর সিলগালা করে দিয়েছে।
র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন এক প্রেস ব্রিফিংয়ে জানান, সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে গোপন সূত্রে খবর পেয়ে নগরীর ভাওয়াল মাদকাসক্ত পুনর্বাসন কেন্দ্র নামক একটি প্রতিষ্ঠানে অভিযান চালানো হয়। যেভাবে নিরাময় কেন্দ্র পরিচালনা, চিকিৎসা দেওয়া ও রোগীদের সেবা দেওয়ার কথা তা সেখানে দেওয়া হতো না। এ কেন্দ্রে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের মানসিক, শারীরিক ও যৌন নির্যাতন করা হতো বলে কেন্দ্রের মালিক ফিরোজা নাজনীন বাধনের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছেন রোগীরা। তিনি আরও জানান, এখান থেকে শারীরিক নির্যাতনের ফুট প্রিন্ট পাওয়া গেছে। বিশেষ করে রোগীদের ঝুঁলিয়ে পেটানো এবং শারীরিক নির্যাতনের প্রমাণ হিসেবে রশি উদ্ধার করা হয়েছে। বিভিন্ন ধরনের নির্যাতনের প্রমাণ পাওয়া গেছে।
একটি নিরাময় কেন্দ্র পরিচালনার জন্য যে নিয়ম-কানুন আছে তার অধিকাংশই এখানে মানা হতো না। এ কেন্দ্রে নিম্নমানের খাবার সরবরাহসহ ভর্তিকৃত রোগীদের জন্য কোনো চিকিৎসক ছিলনা। এ কেন্দ্রে যে পরিমাণ রোগী থাকার কথা তার চেয়ে বেশি রোগী ছিল। আটক ফিরোজা নাজনিন বাঁধনকে জিজ্ঞাসাবাদের ভিত্তিতে তিনি বলেন, বাঁধন ২০০৯ সালে ভাওয়াল মাদকাসক্তি পুনর্বাসন কেন্দ্রটি অনুমোদনহীনভাবে প্রতিষ্ঠা করেন। ২০১৩-১৪ সালে সাময়িক অনুমোদন পায়। কর্মী সংখ্যা ৪ জন এবং রোগীর সংখ্যা বর্তমানে ২৮ জন। তিনি যে ভবনটিতে থাকতেন সেটির ভাড়া বাবদ প্রতিমাসে ৪০ হাজার টাকা বাড়ির মালিককে পরিশোধ করতেন।
ভিকটিমরা র্যাবকে জানিয়েছে, বাঁধন প্রতি রোগীর কাছ থেকে মাসিক চার্জ হিসাবে ১০-৩০ হাজার টাকা করে আদায় করতেন। নিরাময় কেন্দ্রে দুইজন চিকিৎসক থাকার কথা বললেও কোনো চিকিৎসককে অভিযানকালে পাওয়া যায়নি। সেখানে ২০ জন রোগীর চিকিৎসার অনুমোদন থাকলেও ২৮ জন রোগী পাওয়া গেছে। যেভাবে নিরাময় কেন্দ্র পরিচালনা করার কথা, চিকিৎসা দেওয়ার কথা, রোগীদের সেবা করার কথা তার ব্যাপক অনিয়ম এখানে পাওয়া যায়। নিরাময় কেন্দ্রে রোগীদেরকে চিকিৎসার নামে শারীরিক নির্যাতন, মানসিক নির্যাতন ও যৌন হয়রানি করা হতো। এখানে চিকিৎসার নামে রশির সাহায্যে ঝুলিয়ে শারীরিক নির্যাতন করা হতো। প্রতিষ্ঠানটির মালিক-কর্মচারিদরর তাৎক্ষণিক ডোপ টেস্টের মাধ্যমে প্রমাণ পাওয়া যায় তারা সকলেই মাদকাসক্ত। আসলে মাদকাসক্ত নিরাময় কেন্দ্রের নামে সেখানে মাদক ব্যবসা পরিচালনা করা হতো। এলাকায় মাদক গ্রহীতারা প্রতিষ্ঠানের কর্মচারীদের কাছ থেকে মাদক সংগ্রহ করতেন।
এই নিরাময় কেন্দ্রেই ঢাকাই ছবির অভিনেতাকে অনিক রহমান অভিকে নয় মাস আটকে রেখে যৌন নির্যাতন করার অভিযোগ উঠেছে। একটি মাদকাসক্ত পুনর্বাসন কেন্দ্রে তাকে আটকে রেখে ওই প্রতিষ্ঠানটির মালিক তাকে নির্যাতন করে বলে জানা গেছে। বিষয়টি নিয়ে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির পক্ষ থেকে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটেলিয়ন (র্যাব)-এর কাছে লিখিত অভিযোগ জানালেই র্যাব গতকাল মঙ্গলবার অভিযান চালায়। বিষয়টি গোপন সূত্রের ভিত্তিতে চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির অভিযোগের প্রেক্ষিতে র্যাব অভিযান চালিয়ে সেখানে চিত্রনায়ক অভিসহ আর ২০ জন উদ্ধার করা হয়েছে। সেখানে জানানো হয়েছে সেই প্রতিষ্ঠানের মালিক পক্ষ অভিযান পরিচালনার সময় মাদকাসক্ত অবস্থায় ছিলেন!’
তবে র্যাব বলছে, অভি মাদকাসক্ত হয়ে পড়লে তাঁকে ওই মাদক নিরাময় কেন্দ্রে ভর্তি করানো হয়। র্যাব কর্মকর্তা মঈন বিষয়টির সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, ‘আমরা ২০ জনকে উদ্ধার করেছি। চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে একজনকে উদ্ধার করা হয়েছে। তাঁকেও মেডিক্যাল টেস্টের জন্য পাঠানো হয়েছে। তাঁকে এখানে বিভিন্নভাবে নির্যাতন করা হতো, সে এখান থেকে বের হতে চাইতো তাঁকে বের হতে দিতো না। কিসের জন্য আটকে রাখা হয়েছিল, আমরা সেই বিষয়টিও দেখছি।’ উল্লেখ্য, চিত্রনায়ক অনিক রহমান অভি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পাওয়া অভিনেত্রী পপির সঙ্গে অভিনয় করেছেন সাহসী যোদ্ধা চলচ্চিত্রে, এছাড়াও চটপটি ভালোবাসা, দুষ্টু ছেলে, ভালোবাসা ডটকম সহ একাধিক চলচ্চিত্র অভিনয় করেছেন।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।