‘রোমাঞ্চকর’ অভিযান, পাথরের খাঁজে আটকে গেল মাথা: অতঃপর মর্মান্তিক মৃত্যু

জুমবাংলা ডেস্ক: তার নাম কাফলিন। আমেরিকার ইলিনয়ের ওক ফরেস্টের বাসিন্দা। সেখান থেকে দুই বন্ধুর সঙ্গে গিয়েছিলেন কেন্টাকির কেভ সিটিতে। ঐ শহরে মাইলের পর মাইল জালের মতো ছড়িয়ে আছে গুহা। সেই গুহা অভিযানই ছিল কাফলিনের উদ্দেশ্য। সময়টা ১৯৯৩ সাল। ২৮ মে তিন বন্ধু বুজার্ড রুস্ট গুহায় অভিযান শুরু করেন। নতুন অভিযাত্রীদের জন্য এই গুহা ছিল মারাত্মক। কারণ এর গঠন সম্পূর্ণ হয়নি। তাই গুহার অনেক অংশই ছিল বিপজ্জনক।

ঐ বুজার্ড রুস্ট গুহায় পর্যটকদের জন্য দুইধরনের ট্যুরের ব্যবস্থা ছিল। যারা ইতিহাস জানতে চাইতেন, তাদের গুহার নিরাপদ জায়গায় ঘুরিয়ে নিয়ে আসা হত। আর যারা রোমাঞ্চকর কিছু করতে চাইতেন, তাদের গুহার অভ্যন্তরে নিয়ে যাওয়া হত। সেই অভিযান যথেষ্ট কঠিন। কাফলিন এবং তার সঙ্গী জেমস জাকালা প্রথম অভিযানের পর দ্বিতীয়টির জন্য প্রস্তুত হন। তাদের তৃতীয় সঙ্গী কেভিন ফিলে যেতে রাজি হননি। তিনি ওই কঠিন অভিযান থেকে সরে আসেন।

২৮ মে দুপুরেই জেমসের সঙ্গে সেই রোমাঞ্চকর অভিযান শুরু করেন কাফলিন। দলে ছিলেন মোট ছয় জন। তাদের গাইড ছিলেন ডেভিড হার্ডিন।

দলের ছয় সদস্যকে হাতে দুইটি করে টর্চ দেন ডেভিড। নির্দেশ দেন, তিনি ঠিক যে ভাবে পা ফেলবেন, বাকিদেরও তা-ই করতে হবে। হার্ডিন এবং বাকি ছয়জনের দলটির সঙ্গে ছিল ৩০ ফুট এবং ২০ ফুটের দড়ির মই। প্রথমে ৩০ ফুট পরে ২০ ফুটের মই বেয়ে গুহার গভীরে একে একে নেমে যান অভিযাত্রীরা। নামার সময় গুহার প্রথম সুড়ঙ্গেই আটকে পড়েন কাফলিন। সেই সুড়ঙ্গ এতটাই সরু ছিল যে, তা আর পেরিয়ে যেতে পারছিলেন না তিনি।

কাফলিনের উচ্চতা ছিল ছয় ফুট। ওজন প্রায় ৯১ কেজি। ঐ অপ্রশস্ত সুড়ঙ্গ আর পার হতে পারছিলেন না তিনি। সকলে ভেবেছিলেন, এখানেই বুঝি কাফলিনের অভিযান শেষ। কিন্তু তিনি থামার পাত্র নন। ফের সুড়ঙ্গ ঠেলে এগোতে থাকেন বাকিদের সঙ্গে। এরপর গুহার আরো গভীরে নামতে থাকে অভিযাত্রীদের দলটি। গাইড ডেভিড পরে আদালতে জানিয়েছিলেন, নির্ধারিত সময়ের থেকে দেরিতে এগোচ্ছিলেন তারা।

এক সময় জরুরি একটি ফোন করতে উপরের দিকে উঠেছিলেন হার্ডিন। ৩০ মিনিট কেটে গেলেও তিনি ফেরেননি। এ দিকে সময় গড়িয়ে যাচ্ছে। তখন দলের বাকিরা নিজেদের মতো করেই দড়ির মই বেয়ে উপরে উঠতে থাকেন। তাতেই হয় বিপত্তি। দ্বিতীয় মই বেয়ে উপরে ওঠার সময় পিছলে পড়ে যান কাফলিন। কয়েক ফুট নিচে পড়ে গিয়ে তার মাথা আটকে যায় পাথরের খাঁজে। ভয়ংকর রক্তপাত শুরু হয় কাফলিনের।

বন্ধু জেমস বাকি অভিযাত্রীদের পাঠিয়েছিলেন গাইডকে খুঁজে আনতে। কিন্তু তাকে খুঁজে পাননি। উদ্ধারকারি দলকেও তারা আর খবর দেননি। শেষ পর্যন্ত নিজেরাই কাফলিনকে উদ্ধারের চেষ্টা করেন। দুইটি পাথরের খাঁজে তখনো আটকে কাফলিন। তার একটি হাত পেট এবং পাথরের মাঝে রাখা ছিল। যা অনেক চেষ্টাতেও বার করতে পারেননি তিনি। অন্যটি পিঠ এবং অন্য পাথরের মাঝে আটকে ছিল। দুইটি হাত আটকে থাকায় কোনও ভাবেই পাথরের খাঁজ থেকে বার হতে পারছিলেন না কাফলিন।

সাত ঘণ্টা ও ভাবে আটকে ছিলেন কাফলিন। উদ্ধারকারী দল এসে তাকে টেনে বার করেন। হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। পরের দিন সেখানেই তার মৃত্যু হয়। ময়নাতদন্তে দেখা গিয়েছিল, শ্বাসরোধ হয়ে মৃত্যু হয়েছে কাফলিনের। সরু জায়গায় পড়ে গিয়ে শ্বাস নিতে পারছিলেন না তিনি। তাতেই চরম পরিণতি। এই মৃত্যুর জন্য ঐ গুহার মালিকের বিরুদ্ধে মামলা হয়। বলা হয়, বুজ়ার্ড রুস্ট গুহা কতটা বিপজ্জনক, তা অভিযাত্রীদের স্পষ্ট করে নির্দেশিকায় বলা হয়নি।

সূত্র: আনন্দবাজার

কুমিরের মমি ঘিরে নতুন রহস্য