ফারুক তাহের, চট্টগ্রাম: বিশ্বে হুমকির মুখে থাকা পরিবেশকে রক্ষায় সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে ভারতের ২৭ রাজ্য ও নেপালের সব জেলা ঘুরে পায়ে হেঁটে আট মাস আগে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে ভারতের তরুণ পরিব্রাজক রোহন আগারওয়াল।
ইতোধ্যে তিনি বাংলাদেশের ৬৪ জেলা পায়ে হেঁটে পরিভ্রমণ করে এখন চট্টগ্রামে থিতু হয়েছেন। এখান থেকে দুয়েকদিনের মধ্যে ত্রিপুরা হয়ে মায়ানমার এবং মায়ানমার থেকে চীন, লাউস, কম্বোডিয়া ঘুরে রাশিয়ায় প্রবেশ করবেন বলে জানিয়েছেন।
প্লাস্টিকের ভয়াবহতা থেকে পরিবেশকে রক্ষায় মানুষকে সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষেই তিনি এই ব্যতিক্রমী কাজ করে যাচ্ছেন। ১৮ বছর বয়স থেকে রোহান এই আন্দোলন শুরু করেন। এখন তার বয়স ২১ বছর। তিন বছর ধরে পায়ে হেঁটে পরিবেশ সচেতনতা সৃষ্টির এই কাজ করতে গিয়ে নিজের ভান্ডারে জমা করেছেন অনেক বিচিত্র অভিজ্ঞতা। তার জানার পরিধিও বেশ সমৃদ্ধ বলা চলে।
গত ১০ জুলাই স্বপ্নবান এই তরুণের সঙ্গে জুমবাংলার আলাপ হয় চট্টগ্রাম সিনিয়র্স ক্লাবের একটি হলে। এখানে ওইদিন ভারতের এই পরিবেশবাদী তরুণকে দেওয়া হয় সংবর্ধনা। তাকে ফুল দিয়ে উষ্ণ অভিনন্দন জানান ক্লাবের প্রেসিডেন্ট ও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. সেলিম আকতার, সিনিয়র্স ক্লাবের সদস্য কবি ও সাংবাদিক এজাজ ইউসুফী, কবি ও পরিবেশ আন্দোলনকর্মী স্বপন মজুমদার, দেবাশিষ পালিত, সদস্য আসাদুজ্জামান উজ্জ্বলসহ ক্লাবের কর্মকর্তারা।
আলাপচারিতায় জানা যায়, ভারতের মহারাষ্ট্রের নাগপুরের যুবক রোহন আগারওয়াল। ছুটে চলেছেন বাংলাদেশের ৬৪ জেলার পথে-প্রান্তরে। পথচারি কিংবা শিক্ষার্থী অথবা চায়ের আড্ডায় প্লাস্টিকের ভয়াবহতা সম্পর্কে বুঝাচ্ছেন ২১ বছর বয়সী এই যুবক।
নিজ দেশ থেকে ২০২০ সালের ২৫ আগষ্ট উত্তর প্রদেশের বারানসিতে গঙ্গার তীর থেকে পায়ে হেঁটে যাত্রা শুরু করেন রোহন আগারওয়াল। এর মধ্যে ভারতের রাজস্থান, হরিয়ানা, দিল্লি, চন্ডিগড়, হিমাচল, উত্তরখন্ড, মধ্য প্রদেশ, মহারাষ্ট্র, অন্ধ্রপ্রদেশ, তেলেঙ্গানা, তামিলনাডু, পন্ডিচেরি, কর্নাটক, কেরালা ও গোয়াসহ ভারতের ২৭টি রাজ্য শেষ করেছেন। বাংলাদেশের সবকটি জেলা ঘুরে তিনি আসেন চট্টগ্রামে।
জুমবাংলাকে রোহন আগারওয়াল বলেন, ‘আমার বয়স ২১ বছর। ১৮ বছর বয়সে আমি এই যাত্রা শুরু করি। আমি ভারত ও নেপাল ভ্রমণ করেছি। এখন বাংলাদেশ ভ্রমণ শেষ করে মায়ানমারের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছি।’
তিনি বলেন, ‘দিনে প্রায় ৪০ কিলোমিটার করে হেঁটে আমি ১৬ হাজার কিলোমিটার ভ্রমণ করেছি। আমার এই যাত্রা শুরু করার মূল উদ্দেশ্য হলো পরিবেশ নিয়ে মানুষকে সচেতন করা। কারণ, পৃথিবী একটাই। হাজার-লক্ষ গ্রহ-নক্ষত্র থাকলেও মানুষের বাসযোগ্য গ্রহ কিন্তু এই একটাই। তাই এই গ্রহকে আরো কিভাবে মানুষের বাসযোগ্য করে রাখা যায় তা সবার দায়িত্ব ও কর্তব্য। কিন্তু আমরা তা না করে প্রতিনিয়ত পৃথিবীর পরিবেশকে বিনষ্ট করে যাচ্ছি। আমাদের সবাইকে সচেতন হওয়া উচিত বলে মনে করি।’
রোহন আগারওয়াল বলেন, ‘আমরা আজ পর্যন্ত যা পেয়েছি তা শুধু পরিবেশই দিয়েছে। বিনিময়ে আমরা শুধুমাত্র সমস্যা আর দূষণই দিয়েছি। আর এটা এখন বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। আজকে আমরা দেখছি বন্যা, ঘূর্নিঝড়, ভূমিকম্প বৃদ্ধি পাচ্ছে। আর এটা শুধু মানুষ কিংবা পশু পাখি নয়, পুরো পৃথিবীর একটি বিপদজনক বিষয়। এটা যদি চলতে থাকে এবং ভবিষ্যতে যদি আরও বেড়ে যায় তাহলে, আমরা চরম হুমকির মুখে পড়ব। এ জন্যই আমি প্লাস্টিক এবং এর বিপজ্জনক প্রভাব সম্পর্কে সচেতনতা তৈরি করার লক্ষ্যে কাজ করছি।’
তার এই অভিযাত্রার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘আমি ভারত ও বাংলাদেশের অনেক স্কুল-কলেজ ও ইনস্টিটিউট পরিদর্শন করেছি। সেখানে একটি বার্তায় দিয়েছি- আমাদেরকে এই পৃথিবীকে বাঁচাতে হবে। আমি এই বার্তা নিয়ে সাইবেরিয়ার ওমিয়াকোমে হেঁটে যাব। যেখানে তাপমাত্রা মাইনাস ৭২ ডিগ্রি এবং এটি পৃথিবীর সবচেয়ে শীতল স্থান। আমার আশা আমিই দক্ষিণ এশীয় হিসেবে প্রথম স্থলপথে সেখানে পৌঁছাব। সাইবেরিয়া যাওয়ার পথে পাঁচ বছরে আমার এশিয়ার ২০টি দেশ অতিক্রম করার ইচ্ছা আছে। আমি সবার ভালোবাসা নিয়ে সামনে এগিয়ে যেতে চাই। আমি একা এই যাত্রা শুরু করলেও আমি যেখানে যাই সর্বস্তরের মানুষ সাহায্য করছে।’
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।