জাহাঙ্গীর কবীর বাপপি : নতুন আইডি কার্ড প্রক্রিয়াধীন থাকায় লটারির টিকেট কিনতে গেলে তাকে ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছিল। পরে আবার বিক্রেতাই ডেকে পাসপোর্টের বিপরীতে টিকেট বিক্রি করেন। আর সে-ই টিকেটই ভাগ্য পরিবর্তন করে দেয় আমিরাত প্রবাসী আরিফ খানের।
গত ৩ জুন সংযুক্ত আরব আমিরাতের আবুধাবি এয়ারপোর্টের প্রমোশনাল লটারি ‘দ্য বিগ টিকেট’ র্যাফেল ড্র- এর পর শীর্ষ পুরস্কারটি পান আরিফ খান। জিতে নেন ২ কোটি দিরহাম, টাকায় যার মূল্যমান প্রায় ৫০ কোটির কাছাকাছি।
ফরিদপুরের চরভদ্রাসন উপজেলার বিএস ডাংগি গ্রামের আবদুল কুদ্দুস খানের কনিষ্ঠ পুত্র আরিফ খান এক সাক্ষাৎকারে টিকেট জেতার পেছনের নাটকীয়তার গল্পটি বলেন।
তিনি বলেন, “২৭ মে শারজাহ থেকে একটা কাজে আবুধাবি এসে লটারির টিকেট কিনতে গিয়েছিলাম। তখন আমি নতুন কোম্পানিতে ভিসা পরিবর্তনের প্রক্রিয়ায় ছিলাম। আবুধাবি এয়ারপোর্টের ডিউটি ফ্রি কাউন্টারে এমিরেটস আইডি দেখিয়ে টিকেট কিনতে হয়।
“নতুন কোম্পানির আইডি তো প্রক্রিয়াধীন ছিল। পুরনো আইডি দিয়ে টিকেট কিনতে গেলে ফিলিপাইনের নাগরিক নারী টিকেট বিক্রেতা জানালেন- আইডি ইনভ্যালিড, এটি দিয়ে টিকেট কেনা যাবেনা। আমি হতাশ মনে ফিরে আসছিলাম, তখন কী মনে করে আবার ফিলিপাইনের ওই নারী আমাকে ডেকে বললেন, ‘তোমার কাছে পাসপোর্ট কপি থাকলে দাও, ট্রাই করি।’ ওটা দিয়ে কোনও ঝামেলা ছাড়াই টিকেট কিনতে পারলাম।”
লটারির টিকেট জিতবেন এ কথা কেনার মুহূর্তে ভাবতেও পারেননি আরিফ।
তিনি বলেন, “টিকেট কেনার সময়ও মনোযোগ দিয়ে নম্বর পছন্দ করিনি। যেটা চোখে লেগেছে সেটাই কিনেছি। অনেকের মতো নিজের ভাগ্য পরীক্ষার কৌতূহল থেকে এই লটারিতে অংশ নিয়েছি। এর আগে তিন বন্ধু মিলে একবার এবং পরে ছয়বার নিজের একার নামেই কিনেছি টিকেট। লটারির টিকেট গাড়িতে পড়ে থাকতো কখনো চেকও করিনি কে ওতে বিজয়ী হয়েছেন।”
লটারিতে বিজয়ী হওয়ার খবর কিভাবে পেলেন- এই প্রশ্নের জবাবে আরিফ বলেন, “সেদিন ছিল ৩রা জুন, শুক্রবার। ডে অফ আমার। সারাদিন অলসভাবে শুয়ে বসে, দেশে পরিবারের সদস্যদের সাথে কথা বলে, নামাজ-কালাম পড়ে কাটিয়েছি। আর পরের দিনের কাজের পরিকল্পনা করেছি।”
নিজের শিশুপুত্রের সাথে আরিফ খান।নিজের শিশুপুত্রের সাথে আরিফ খান।“আমাদের বন্ধুরা সবাই মিলে একটা সঞ্চয়ী সমবায় সমিতি করেছি। সে সমিতির মিটিংয়ে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। সকাল ১০টার দিকে একটা ফোন এলো অপরিচিত এক নম্বর থেকে। বললো, আমি লটারি জিতেছি ।ফোন পেয়ে মনে হয়েছে ফেইক কল। কিন্তু পরে ওরা আমাকে ‘বিগ টিকেটের লাইভ শো’র সাথে সংযুক্ত করলে এবং আমার টিকেট নম্বর জানালে বিশ্বাস হলো।”
লটারি পাওয়ার আগে ও পরে জীবনে এখন পর্যন্ত তেমন কোনও পরিবর্তন আসেনি জানিয়ে আরিফ খান বলেন, “আগে যেমন ছিলাম এখনো তেমনি আছি। বিষয়টি নিয়ে আমার তেমন কোনও ফিলিংস নেই। বাবা ব্যবসায়ী ছিলেন। সৌদি আরবের মদিনায় ১২ বছর ছিলাম। গ্রিল ওয়ার্কশপ আর কাপড়ের ব্যবসা ছিল। এমনও মাস গেছে আমি এক লাখ রিয়ালেরও বেশি আয় করেছি। টাকার মোহ আমার নেই।”
“সৌদি আরব থেকে ফিরে গিয়ে দেশে ব্যবসা করতে চেষ্টা করেছি, হয়নি। পরে ২০১৯ এর ফেব্রুয়ারিতে ইউএই এসেছি। এখানে আজমানে বড় ভাইয়ের ব্যবসা আছে। সেই সূত্রে এসে শারজাহতে মোটর ওয়ার্কশপ করলাম।”
শারজাহতে ৪ নং সানাইয়া ইন্ডাস্ট্রিয়াল এরিয়াতে নিজের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ১০ জন বাংলাদেশি কাজ করেন বলে জানালেন আরিফ। মানুষের কর্মসংস্থান তৈরি করতে পেরে তিনি তৃপ্ত।
নিজের জীবন নিয়ে সন্তুষ্টি প্রকাশ করে এই প্রবাসী বলেন, “আমি সুখি মানুষ। স্ত্রী, দুই শিশুপুত্র, বাবা-মা ভাই-বোন নিয়ে সুখেই আছি। কাজকে আমি ভালবাসি। এই ব্যবসাই চালিয়ে যাবো, কারণ এটি আমার শেকড়। তবে মহৎ কিছু কাজ করে যাওয়ার ইচ্ছা বরাবরই আমার আছে। মৃত্যুর পরও সবাই যেন আমায় মনে রাখে এমন কিছু কাজ করে যেতে চাই।”
নিজের সে স্বপ্নের কাজের কথা অবশ্য আরিফ খান জানাননি।
তিনি জানান, আগামী জুলাইয়ে বিগ টিকেট এর পরবর্তী র্যাফেল ড্র- এর প্রথম পুরস্কার বিজয়ীর টিকেটটি তাকে দিয়ে ওঠানো হবে এবং সেই অনুষ্ঠানেই তার হাতে পুরস্কারের চেক তুলে দেওয়া হবে। সূত্র : বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।