জুমবাংলা ডেস্ক : এক সপ্তাহের ব্যবধানে রাজধানী ঢাকার বাইরে প্রায় সব সবজিরই দাম বেড়েছে। মুরগি–ডিম–মাছ–মাংসের বাজারেও বেশ অস্বস্তি। নানা অজুহাত দিচ্ছেন বিক্রেতারা। এমতাবস্থায় নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে নাভিশ্বাস অবস্থা মধ্যবিত্ত ও সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষের।
গত আগস্টের শুরুতে সরকার বদলের পর নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য পরিবহন ও কাঁচাবাজারগুলোতে চাঁদাবাজি অনেকটা কমে আসে।
এতে বাজারে নিত্যপণ্যের দাম অনেকটা সহনীয় পর্যায়ে চলে আসবে ভেবেছিল ভোক্তারা। কিন্তু পণ্যের দাম না কমে উল্টো বেড়েছে। চাল, মাছ, মাংস, ডিম, সবজিসহ বিভিন্ন নিত্যপণ্যের দাম স্বল্প আয়ের মানুষের নাগালের মধ্যে থাকছে না। জুলাই থেকে অক্টোবরে বেশ কিছু নিত্যপণ্যের দাম ৯ থেকে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে।
শুক্রবার (৪ অক্টোবর) রাজধানীর কচুক্ষেত ও ভাষানটেক কাঁচাবাজার ঘুরে দেখা যায়, প্রতিটি সবজিতে গত সপ্তাহের তুলনায় ১০-১৫ টাকা দাম বেড়েছে।
গত সপ্তাহের তুলনায় প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগিতে ১০-২০ টাকা ও প্রতি হালি ডিমে ১০ টাকা বেড়েছে। গত সপ্তাহে প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি ১৮০ টাকায় বিক্রি হলেও এদিন ২০০ টাকা কেজি বিক্রি করতে দেখা যায়। এছাড়াও পাকিস্তানি কক বিক্রি হচ্ছে ২৭০ টাকায়। গত সপ্তাহে প্রতি ডজন ডিম ১৫৫-১৬০ টাকায় পাওয়া গেলেও এদিন তা ১৮০ টাকায় বিক্রি করতে দেখা যায়।
ডিম বিক্রেতা ফজলুল হক বলেন, মাছ ও সবজির দাম বাড়াতে ডিমের চাহিদা বেড়ে গেছে। ফলে আগের চেয়ে এখন বেশি দামে ডিম বিক্রি হচ্ছে।
এদিন প্রতি কেজি কাঁকরোল ৮০ টাকা, ঢেঁড়স ৮০ টাকা, টমেটো ২০০ টাকা, করলা ৮০ টাকা, শিম ৩০০ টাকা, শসা মানভেদে ৬০-৮০ টাকা, পেঁপে ৫০ টাকা, পটল ৬০ থেকে ৭০ টাকা, চিচিঙ্গা ৮০ টাকা, বরবটি ১৬০ টাকা, গাজর ২০০ টাকা, ঝিঙা ১০০ টাকা, লম্বা বেগুন ৮০ টাকা ও গোল বেগুন ১৬০ টাকা দরে বিক্রি করতে দেখা যায়।
এছাড়াও বাজারে প্রতি কেজি মিষ্টি কুমড়া ৫০ টাকা, প্রতি পিস লাউ ৭০-৮০ টাকা, চাল কুমড়া ৫০-৬০ টাকা, লেবুর হালি ৪০ টাকা, কচুরমুখী ৮০-৯০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
তবে অপরিবর্তিত রয়েছে, পেঁয়াজ, আলু, রসুন ও আদার দামে। গত সপ্তাহের মতই এদিনও প্রতি কেজি পেঁয়াজ ১১৫-১২০ টাকা, আলু ৫৫-৬০ টাকা, রসুন ২০০ টাকা ও আদা ২৬০-২৮০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে।
রাজধানীর পশ্চিম ভাষানটেকের বাসিন্দা আবদুল আউয়াল জানান, ‘মাছ-মাংসের বিকল্প হিসেবে ডিম কিনি। যেভাবে দাম বাড়ছে তাতে ডিম খাওয়াও বাদ দিতে হবে। সব সবজির দামও নাগালের বাইরে। একসময় ডাল ও আলুর ভর্তা দিয়ে একবেলা খাওয়া গেলেও আলুর যে দাম তাতে আলু ভর্তা খাওয়াও ছেড়ে দিতে হচ্ছে।’
বরিশাল
বরিশালের বাজারে বেড়েছে ডিম, মুরগি ও সবজির দাম। মুরগির খাবারের দাম বৃদ্ধির অজুহাতে বাজারে প্রতিহালি ডিম বিক্রি হচ্ছে ৫৫ টাকা দরে। গত সপ্তাহের চেয়ে বাজারে ব্রয়লার কেজিতে ১০ টাকা বেড়ে ১৮০, সোনালি ২৪০, লেয়ার কেজিতে ২০ টাকা বেড়ে ৩১০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
এর পাশাপাশি বেড়েছে সবজির দামও। বাজারে কাঁচামরিচ ৩০০ টাকা কেজি, কাকরোল ৬০, টমেটো ১৮০-২০০, গাজর ১৮০, বেগুন ১০০, শশা ৫৫, ঢেঁরশ ৬০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
পাইকারি মাছ বাজার ঘুরে দেখা গেছে, গত সপ্তাহের তুলনায় আকারভেদে মণ প্রতি ইলিশের দাম ২ হাজার টাকা কমেছে। দেড় কেজি ওজনের ইলিশ ৮০ হাজার, ১২০০ গ্রাম ৭৬ হাজার, ১ কেজি ৭২ হাজার এবং ৭০০ – ৯০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ৬৫ হাজার টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
তবে খুচরা বাজারে ইলিশ বিক্রি হচ্ছে আগের দামেই। দেড় কেজি ২৩০০-২৪০০, ১২০০ গ্রাম ১৯৫০-২০০০, ১ কেজি ১৮০০-১৯০০, ৭০০-৯০০ গ্রাম ১৬৫০-১৭০০, ৫০০-৬০০ গ্রাম ১৩৫০-১৪০০ টাকা এবং একদম ছোট আকারের ইলিশ প্রতি কেজি ৪৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। এদিকে মুদি বাজারে পেঁয়াজ ৯০-১০০ টাকা কেজি, আলু ৫৫ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
ক্রেতারা বলছেন, বাজারে মাছ, মুরগি, সবজি, ডিম সহ সব পণ্যের দাম বেশি। সরকার যদি বাজার নিয়ন্ত্রণ করে তাতে সাধারণ মানুষ ভোগান্তি থেকে মুক্তি পাবে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, তারা বড়তি দামে কিনে আনার কারণে বাড়তি দামে বিক্রি করছেন। তাছাড়া বিভন্ন জায়গায় বন্যা ও বৃষ্টির অজুহাত দিচ্ছেন তারা।
মেহেরপুর
ভারত থেকে আমদানি করার পরও মেহেরপুরের বাজারে কমছে না আলু–পেঁয়াজের দাম। ডিমের দাম রয়েছে ঊর্ধ্বমুখী। আজ শুক্রবার খুচরা বাজারে আলু বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকা কেজি দামে। পেঁয়াজ প্রতিকেজি ১১০ থেকে ১২০ টাকা। ১০ টাকা বেড়ে পাইকারি বাজারে ডিম বিক্রি হচ্ছে ৪০০ টাকা খাঁচি। হাত বদল হয়ে খুচড়া বাজারে সেই ডিম বিক্রি হচ্ছে প্রতিটি ১৫ টাকা। আমদানি কম হওয়ার অজুহাতে দাম বেড়েছে সব ধরনের সবজির।
বাজারের এক বিক্রেতা বলেন, বিভিন্ন বন্দর দিয়ে পেঁয়াজ আসার খবর পাচ্ছি। বামন্দী বাজারে প্রতিকেজি পেঁয়াজ ১১০ থেকে ১২০ টাকা দামে বিক্রি হচ্ছে। এটা কেন হয়েছে আমরা জানি না। এটি প্রশাসন যদি তদারিক করে তাহলে এর সুষ্ঠু বিষয় বেরিয়ে আসবে।
আরেকজন বলেন,আমদানি করা পেঁয়াজ মেহেরপুর জেলায় চলে না, কেউ কেনে না। দেশাল পেঁয়াজের দাম বেশি। ১১০ থেকে ১২০ টাকায় পেঁয়াজ খুচরা বেচাকেনা। কিন্তু এই দাম বেশি।
সিলেট
সিলেটে সপ্তাহের ব্যবধানে বেড়েছে সব ধরনের নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম। গত সপ্তাহের তুলনায় এ সপ্তাহে সবজির দাম কেজিতে ৫ থেকে ১০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। কেজিপ্রতি ১০ টাকা বেড়ে টমেটো বিক্রি হচ্ছে ১৬০ টাকা কেজিতে, কাঁচামরিচের দাম কেজি প্রতি ৪০০ টাকা, আলু বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকা কেজিতে। শসা বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকা কেজিতে, যা গত সপ্তাহে ছিল ৭০ থেকে ৭৫ টাকা, ঝিঙা বিক্রি হচ্ছে ৯০ থেকে ১০০ টাকায়, শিম বিক্রি হচ্ছে ২০০ থেকে ২২০ টাকায়।
মাংসের দামও চড়া। ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ১৮০ টাকা কেজি, খাসির মাংস বিক্রি হচ্ছে ১১০০ টাকায়, গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে ৮০০ থেকে ৮৫০ টাকায়।
রাজশাহী
রাজশাহীর বাজারে কেজিতে ১০০ টাকা বেড়ে কাঁচা মরিচ বিক্রি হচ্ছে ৩২০ টাকায়। কেজিতে ১৫ থেকে ২০ বাড়তি অনান্য সবজির দামও । বেড়েছে ডিম ও ব্রয়লার মুরগির দাম।
আগের দামেই আলু বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকায়। আদা বিক্রি হচ্ছে ১২০ টাকা কেজি দরে। রসুন বিক্রি হচ্ছে ২২০ টাকা । পটল বিক্রি হচ্ছে ৪০ টাকা কেজি, করলা ৮০ টাকা কেজি দরে। বেগুন বিক্রি হচ্ছে ৯০ টাকা কেজি দরে। বেড়েছে মুরগির ডিমের দাম। প্রতি ডজনে ১৮ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ১৬২ টাকায়। কেজিতে ১০ টাকা বেড়ে ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ১৮০ টাকা এবং গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে ৭৫০ টাকা কেজি দরে।
বিক্রেতারা বলছেন, বাজারে সরবরাহ ঘটতি থকলে এর প্রভাব পড়ে পণ্যের ওপর, এতে তাদের করার কিছু নেই। সিন্ডিকেট ভেঙ্গে দেওয়াসহ বাজার গুলোতে নিয়মিত নজরদারিতে বাড়াতে নতুন সরকারের প্রতি আহ্বান জানান ক্রেতারা।
খুলনা
খুলনার বাজারে এক সপ্তাহের ব্যবধানে বৃদ্ধি পেয়েছে অনেক সবজি ও ডিমের দাম। কেজিতে ১০ থেকে ২০ টাকা বৃদ্ধি পেয়েছে সবজির দাম। পেপে ৩০ টাকা থেকে ৪০ টাকা হয়েছে, ঢেঁড়শ ৫০ থেকে ৬০ টাকা, বেগুন ১২০ টাকা থেকে ১৪০ টাকা, লাল শাক ৫০ টাকা ৬০ টাকা, বরবটি ৪০ থেকে ৫০ টাকা, কাঁচা মরিচ ২২০ থেকে ২৬০ টাকা বিক্রি হচ্ছে।
ডিমের দাম প্রতি ডজনে ১২ টাকা বৃদ্ধি পেয়ে বিক্রি হচ্ছে ১৫৬ টাকা থেকে ১৬৮ টাকা। তবে পেঁয়াজ, রসুন, আলুর দাম স্থিতিশীল আছে। দাম নিয়ে কে তাদের মধ্যে রয়েছে অসন্তোষ।
বগুড়া
বগুড়ায় বেড়েছে শাক-সবজির দাম। মরিচ, বেগুন, করলাসহ প্রায় প্রতিটি শাক-সবজিতেই কেজিতে বেড়েছে অন্তত ২০ থেকে ৪০ টাকা। সপ্তাহের ব্যবধানে কাঁচা মরিচ ৮০ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৩২০ টাকায়। এ ছাড়া বেগুন ৪০ টাকা বেড়ে ১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, কেজিতে ২০ টাকা বেড়ে করোলা ৮০ টাকা। স্থিতিশীল রয়েছে আলু এবং পেঁয়াজের দাম। মাছ, মুরগি ও ডিমের বাজার স্থিতিশীল থাকলেও দাম বেড়েছে এসবেরও।
বিক্রেতারা জানান, কয়েকদিনের বৃষ্টিপাতে সবজির দামে চড়া। ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ১৮৫ টাকা আর সোনালি মুরগি ২০ টাকা কমে ২৬০ টাকা। ডিম বিক্রি হচ্ছে ৫২ টাকা হালিতে।
ক্রেতারা জানান, এখনো ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে আসেনি পণ্যে মূল্য। সরকারের কোনো পদক্ষেপই কাজে আসছে না বলে অভিযোগ তাদের।
চট্টগ্রামে
চট্টগ্রামে ক্রমেই বাড়ছে সবজির দাম। শুক্রবার নগরীর নানা বাজার ঘুরে দেখা গেছে, সপ্তাহের ব্যাবধানে বেড়েছে বেশিরভাগ সবজির দাম। এখন টমেটো বিক্রি হচ্ছে ২০০ টাকা, ফুলকপি ২০০ টাকা, বেগুন ১২০ টাকা, বরবটি ১৬০ টাকা, শসা ১০০ টাকায়। এক সপ্তাহের ব্যাবধানে কেজিতে ৩০ টাকা বেড়েছে সোনালি মুরগির দাম। দেশি ও ব্রয়লার মুরগির দাম অপরিবর্তিত আছে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।