জুমবাংলা ডেস্ক : পেঁয়াজের দর লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। গত বৃহস্পতিবার খুচরা পর্যায়ে বিক্রি হয়েছে ১৩০-১৪০ টাকা কেজি। শনিবার তা ১৪০-১৫০ টাকায় ওঠে। গতকাল আরও বেড়ে ১৫০-১৬০ টাকায় গিয়ে ঠেকে। ভারত থেকে পর্যাপ্ত আমদানি সত্ত্বেও পেঁয়াজের বাজারে নৈরাজ্য শুরু হয়ে গেছে।
রবিবার (২৭ অক্টোবর) রাজধানীর শ্যামবাজার, টাউন হল বাজার, কারওয়ান বাজার, হাতিরপুলসহ বিভিন্ন বাজার ঘুরে ক্রেতা-বিক্রেতা এবং আমদানিকারকদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
সরকারি প্রতিষ্ঠান ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশও (টিসিবি) বলছে, এক মাস আগে পেঁয়াজের কেজি ছিল ১০৫-১১৫ টাকা। এ পর্যায়ে কেজিতে বেড়েছে ২৫ থেকে ৩৫ টাকা বা ২৪ থেকে ৩০ শতাংশ। গত বছর এই সময়ে দর ছিল ৯৫-১০৫ টাকা কেজি। সেই তুলনায় কেজিতে বেড়েছে ৩৫-৪৫ টাকা বা ৩৭ থেকে ৪৩ শতাংশ। আমদানিকারক ও পাইকারি বিক্রেতারা বলছেন, বিভিন্ন স্থলবন্দর দিয়ে ভারত থেকে প্রচুর পেঁয়াজ আমদানি হচ্ছে। মিসর থেকেও আসছে। গতকাল ৯০-৯৫ টাকা কেজি দরে ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি করা হয়েছে। সেটা ঢাকার পাইকারি বাজারে ৯৫-১০০ টাকা। কিন্তু খুচরা বাজারে ভারতের পেঁয়াজ ১২৫-১৩০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে।
দামের ব্যাপারে জানতে চাইলে মোহাম্মদপুরের টাউন হল বাজারের খুচরা বিক্রেতা রাকিব খবরের কাগজকে বলেন, ‘পেঁয়াজের বাজার চড়ছেই। কোনো দাম ঠিক নেই। প্রতিদিন বাড়ছে। গত সপ্তাহে পেঁয়াজ ১১০-১২০ টাকা কেজি বিক্রি হলেও গত শুক্রবার ছিল ১৩০-১৪০ টাকা। শনিবার ১০ টাকা বাড়ে পাইকারি বাজারে। তাই ১৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করেছি। গতকালও কারওয়ান বাজারে পেঁয়াজের দাম বেশি ছিল। ১৫০ টাকা কেজিতে কিনতে হয়েছে। তাই আমরাও বেশি দামে- ১৬০ টাকা কেজিতে বিক্রি করছি।’
হাতিরপুলসহ বিভিন্ন বাজারের খুচরা বিক্রেতারা বলছেন, ‘পাবনা ও ফরিদপুরের পেঁয়াজ এখন বাজারে নেই। তাই দাম বাড়ছে। অসাধু ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে দাম বাড়াচ্ছে। শেষ সময়ে বেশি দাম ধরছে। এ জন্য আড়তে বেশি দাম। আমাদেরও বেশি দামে কিনতে হচ্ছে। তাই কম দামে বিক্রি করতে পারছি না। তবে ভারতের পেঁয়াজ ১২০-১৩০ টাকা কেজি, মিসরের পেঁয়াজ ১০০ টাকা কেজি বিক্রি করা হচ্ছে।’
তাদের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে পাইকারি বাজার শ্যামবাজার, কারওয়ান বাজার ও কৃষি মার্কেটে যোগাযোগ করা হয়। এ সময় কৃষি মার্কেটের বিক্রমপুর স্টোরের আরশাদ হোসেন বলেন, দেশি পেঁয়াজের সময় শেষ। মোকাম থেকেই বেশি দামে খুচরা বাজারে পাঠানো হচ্ছে। তাই পেঁয়াজের দাম বেশি, পাইকারি পর্যায়ে দেশিটা ১৫০ ও ভারতেরটা ১২০ টাকা কেজি। কারওয়ান বাজারের মিনহাজ স্টোরের খলিল বলেন, বর্তমানে দেশি পেঁয়াজের দাম ঠিক নেই। প্রতিদিন বাড়ছে। গতকাল ১৪০-১৫০ টাকা কেজিতে বিক্রি করা হয়।
শ্যামবাজারের পেঁয়াজ আড়তদার সমিতির সহসভাপতি আবদুল মাজেদ বলেন, ‘মৌসুম শেষ পর্যায়ে। মোকাম থেকে অল্প পেঁয়াজ বাজারে ছাড়া হচ্ছে। এ জন্য দাম বেশি। তারা দাম বেঁধে দিচ্ছে। গতকাল ১২০-১২৫ টাকা কেজি বিক্রি করা হয়েছে। আড়তদাররা শুধু কেজিতে ১-২ টাকা কমিশন পান। ভারতের পেঁয়াজ প্রচুর আসছে। দামও কম ৯৫-১০০ টাকা কেজি।’
হঠাৎ করে পেঁয়াজের বাজার বেসামাল কেন? এমন প্রশ্নের উত্তরে আবদুল মাজেদ বলেন, ‘পাবনা, কুষ্টিয়া, ফরিদপুর মোকামের বড় ব্যবসায়ীরা এ কাজটা করেছে। তারা বলছে পেঁয়াজ নেই। এ জন্য দাম বেশি। কৃষকরা উৎপাদনের পর পেঁয়াজ ধরে রাখতে পারেন না। বিভিন্ন মোকামের বেপারিরা কিনে মাচা করে রাখেন। সুযোগ বুঝে বেশি দামে বিক্রি করেন।’
সরকার গত বছর খুচরা পর্যায়ে দেশি পেঁয়াজ ৬৫ টাকা কেজি বিক্রি করার ঘোষণা দেয়। কিন্তু বাজারে এর কোনো চিত্র ছিল না। এর কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘রেট দিয়ে পেঁয়াজে কাজ হবে না। আমরাও চাই ভোক্তারা কম দামে পেঁয়াজ পাক। কারণ বেশি দামে বিক্রি হলেও তো সেই লাভ আমরা পাই না।’
সরকার কী করলে পেঁয়াজের দাম কমবে? এ ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘যেহেতু দেশি পেঁয়াজের দাম বেশি হওয়ায় আমদানি করা পেঁয়াজ খেতে হবে। কারণ মিসর থেকেও পেঁয়াজ আসছে। সেটা ৮০ টাকা কেজি।’
জাতীয় ভোক্তা অধিদপ্তরের অভিযান সত্ত্বেও দাম বাড়ছে কেন প্রশ্নের উত্তরে এই পেঁয়াজ ব্যবসায়ী বলেন, ‘যারা সিন্ডিকেট করছে তারা কাউকে মানে না। এ জন্যই দাম কমে না। জরিমানা করা হলেও সেই টাকা জনগণের কাছ থেকে তারা তুলে নিচ্ছেন। এ জন্যই বিভিন্ন অজুহাতে দেশি পেঁয়াজের দাম বাড়ছে।’
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।