জুমবাংলা ডেস্ক: উঁচু-নিচু টিলা। তার চারপাশে বিরল ও বিপন্ন প্রজাতির উদ্ভিদ। ফুল-ফলের পাশাপাশি ভেষজ উদ্ভিদ রয়েছে। উদ্যানের রাস্তার পাশেই টানানো বোর্ডে রয়েছে উদ্ভিদের বর্ণনা। ক্যাকটাসের স্থির সৌন্দর্য-পাশাপাশি রয়েছে বিলুপ্ত প্রায় বিভিন্ন প্রজাতির বাঁশ ঝাড়। দিনভর লেগে থাকে নানান প্রজাতির পাখির কিচির মিচির ডাক। ফুলে উড়াউড়ি করে ভ্রমর-মৌমাছি। এমন নান্দনিক দৃশ্য চোখে পড়বে কুমিল্লার পর্যটন নগরী খ্যাত কোটবাড়ি এলাকার লালমাই উদ্ভিদ উদ্যানে গেলে। বর্তমান প্রজন্ম ভুলতে বসেছে এমন বিরল প্রজাতির উদ্ভিদ সংরক্ষণের উদ্যোগে হিসেবে গড়ে তোলা হয়েছে এই উদ্যানটি।
কুমিল্লা সামাজিক বন বিভাগ সূত্র জানায়, নগরীর ২৪ নম্বর ওয়ার্ডের কোটবাড়ি ময়নামতি জাদুঘরের কাছে সালমানপুর নামক স্থানে প্রায় ১৭ একর জায়গাজুড়ে গড়ে তোলা হয়েছে উদ্যানটি। এখানে রয়েছে কয়েকশ প্রজাতির উদ্ভিদ। যার অন্তত ৯০ শতাংশ বিপন্ন ও দুষ্প্রাপ্য। ভবিষ্যতে এ উদ্যানটির বিস্তৃতি আরো বাড়ানো হবে। বর্তমান উদ্যানের নিকটবর্তী বনবিভাগের ৩০ একরের মতো প্রাকৃতিক শাল বাগান রয়েছে। মাঝে আরো প্রায় ৩০ একর ভূমি অধিগ্রহণ করা হলে লালমাই উদ্ভিদ উদ্যানটি অনেক সমৃদ্ধ হবে।
সরেজমিনে গিয়ে জানা গেছে, বর্তমান প্রজন্ম ভুলতে বসেছে এমন বিরল প্রজাতির উদ্ভিদ সংরক্ষণের উদ্যোগ নিয়েছে সামাজিক বন বিভাগ। ঢাকার মিরপুর ও চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের পর লালমাই দেশের তৃতীয় বিরল উদ্ভিদ উদ্যান। ২০১৫ সালে এটির কাজ শুরু হয়ে চলতি বছরের শুরুতে শেষ হয়। এ উদ্যানের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে বিরল প্রজাতির উদ্ভিদ সংরক্ষণ, বন্য প্রাণীর নির্ভয় আবাসস্থল তৈরি, শিক্ষা ও গবেষণার সুযোগ সৃষ্টি করা।
বর্তমানে উদ্যানটিতে বিলুপ্তপ্রায় বিরল উদ্ভিদের মধ্যে রয়েছে- রাধাচূড়া, নাগেশ্বর, আগার, নাগলিঙ্গম, কাঞ্চন, অশ্বথ, চন্দন, রক্তচন্দন, চালমুগরা, লোহা কাঠ, চাপালিশ, ধূপ, বাবলা, হরিতকি, বহেরা, হিজল, কনক, তমাল, অশোক, সিভিট, উড়ি আম, বন পেয়ারা, অর্জুন, মহুয়া, তেলশুর, পুঁটিজাম, বাঁশপাতা, কুম্ভি, পিতরাজ, পারুল, জারুল, চম্পা, টগর, বেলি, চিকরাশি, হরিয়ান, লটকন, ফেন্স, বোটলব্রাশ, বাসক, রঙ্গন, করমচা, সোনালু, বট ও কৃষ্ণচূড়ার সমাহার। আরো আছে ক্যাকটাস হাউস, অর্কিড হাউস, বিভিন্ন ফুলের বাগান, বিরল উদ্ভিদ বাগান, বন্যপ্রাণীর জন্য জলাশয়, বিভিন্ন প্রজাতির ঘাস। এছাড়া দর্শনার্থীদের বসার জন্য নির্মাণ করা হয়েছে বেশ কিছু বেঞ্চ, ব্যাঙের ছাতা সাদৃশ্য বিশ্রামাগার। নির্মাণ করা হয়েছে পৃথক শৌচাগারও।
২০২০ সালের ৭ নভেম্বর উদ্যানটির উদ্বোধন করেন বন বিভাগের প্রধান বন সংরক্ষক মো.আমীর হোসেন চৌধুরী। তিনি জানিয়েছিলেন, এখানে দেশের প্রথম ফরেস্ট মিউজিয়াম গড়ে তোলার পরিকল্পনা রয়েছে তাদের। উদ্যানটিকে জাতীয় মানের একটি উদ্যান হিসেবে গড়ে তুলতে মন্ত্রণালয় একটি মাস্টারপ্লান প্রণয়ন করেছে। এছাড়া উদ্যানটির সম্প্রসারণের কাজ চলমান রয়েছে। এটি পূর্ণাঙ্গভাবে প্রতিষ্ঠিত হলে পুরো দেশবাসী বিনোদনের পাশাপাশি শিক্ষা ও গবেষণার কাজ করতে পারবেন এখানে। এই উদ্যোনের ৯০ ভাগ উদ্ভিদই বিরল এবং বিলুপ্ত প্রায় প্রজাতির। এসব উদ্ভিদ আগামী প্রজন্মের জন্য কাজে আসবে। আর কুমিল্লাবাসীর ফুসফুস হিসেবে কাজ করবে এই উদ্যানটি।
উদ্যানটিতে প্রবেশের ক্ষেত্রে অপ্রাপ্তবয়স্ক ও শিক্ষার্থীদের জন্য টিকিট ৫ টাকা, প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য ২০ টাকা এবং বিদেশিদের জন্য ৪০০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত খোলা থাকে এই উদ্যান।
দর্শনার্থী মনোহরগঞ্জের মাদরাসা শিক্ষক আবুল কালাম আজাদ বলেন, এখানে যেসব গাছ আছে, তা এখন খুব একটা দেখা যায় না। গাছগুলো আসলেই বিরল। এই উদ্যানটি বর্তমান প্রজন্মকে ভুলতে বসা অনেক প্রজাতির গাছকে পরিচিত করে তুলবে।
দর্শনার্থী তাহমিনা ইসলাম সাথী বলেন, উদ্যানটি ঘুরলে নতুন প্রজন্ম হারিয়ে যাওয়া অনেক উদ্ভিদ সম্পর্কে ভালো ধারণা পাবে। বিশেষ করে অনেক ওষুধী গাছ রয়েছে উদ্যানটিতে; যা এখন আর গ্রামেও দেখা যায় না। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন শিক্ষা সফর এখানে হতে পারে। তাহলে নতুন প্রজন্ম বেশি উপকৃত হবে।
কুমিল্লা সামাজিক বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মোহাম্মদ আলী বলেন, এই উদ্যানে রয়েছে অবসর কাটানোর সুযোগ। এই উদ্যান নতুন প্রজন্মকে বিরল প্রজাতির উদ্ভিদ সম্পর্কে ধারণা দেবে। চালু হওয়ার পর করোনার কারণে দর্শনার্থীদের পদচারণা কিছুটা কমে গেলেও এখন ধীরে ধীরে তা বাড়ছে। উদ্যানটিকে সম্মৃদ্ধ করতে আমাদের বিভিন্ন পরিকল্পনা আছে। আশা করছি দ্রুত সময়ের মধ্যে লালমাই উদ্ভিদ উদ্যানটি দেশের অন্যতম সেরা বিরল উদ্ভিদের উদ্যানে পরিণত হবে।
চাঁপাইনবাবগঞ্জের আম গাছে শতভাগ মুকুল, বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।