জুমবাংলা ডেস্ক : স্থানীয়ভাবে উদ্ভাবিত ফল ‘লালমি’ চাষে ফরিদপুরের চাষিরা স্বাবলম্বী হচ্ছেন। জেলা কৃষিসম্প্রসারণ অধিদপ্তর বলছে, রোজায় প্রতিদিন ২৫ লক্ষাধিক টাকার লালমি বাজারজাত হচ্ছে ফরিদপুরের সদরপুর থেকে।
রমজানের শুরু থেকেই সদরপুর উপজেলার মাঠে মাঠে দেখা মেলে লালমি তোলায় ব্যস্ত চাষিদের।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, কৃষকরা সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত ক্ষেত থেকে লালমি তুলে রাস্তার পাশে জড়ো করছেন বিক্রির উদ্দেশ্যে।
স্থানীয় চাষিদের ‘উদ্ভাবিত’ ফল ‘লালমি’ দেখতে অনেকটা বাঙ্গির মতো, তবে এর গায়ে শিররেখা নেই। গায়ের রং এবং গন্ধও আলাদা। স্বাদেও আছে পার্থক্য আছে। বাঙ্গি রবি মৌসুমের ফল, পাকতে শুরু করে চৈত্র মাসে। আর লালমির বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, শীতের দুই মাস বাদে বছরের যেকোনো সময় এটি চাষ করা যায়। রোপণের ৬০ দিনের মধ্যে লালমি পেকে যায়। তাই কৃষকেরা এমন সময় এর বীজ বপন করেন, যাতে রমজানে ফলগুলো বাজারে তোলা যায়।
স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান তিতাস মিয়া জানান, ১৫ বছর আগে সদরপুরের কৃষ্ণপুর ইউনিয়নের যাত্রাবাড়ী এলাকায় আলিম খাঁ নামের এক কৃষক প্রথম লালমি চাষ করেন। আলিম খাঁ পরীক্ষাগারে গবেষণা ও সংকরায়ন করে লালমি উদ্ভাবন করেছিলেন- বিষয়টি মোটেও সে রকম নয়। তবে আলিম খাঁ হয়তো প্রাকৃতিকভাবে সংকরায়িত এই ফলটির ধরন প্রথম লক্ষ্য করেন এবং এর চাষ করেন। তার সাফল্য দেখে অন্য কৃষকেরাও লালমি চাষে উৎসাহিত হন।
ফরিদপুরে উৎপাদিত ১৮টি ফলের মধ্যে আর্থিক বিবেচনায় বাঙ্গি ও লালমির অবস্থান ৫ নম্বরে। এ কারণে এই ফল চাষে মানুষের আগ্রহ বেশি থাকাই স্বাভাবিক।
জেলার হাট কৃষ্ণপুর এলাকার চাষি জিয়াউর রহমান, তরিকুল মোল্লা, হাফিজ ফকিরসহ বেশ কয়েকজন চাষির সঙ্গে কথা হয়।
তারা জানান, এই ফলটি ৬০ দিনের মধ্যেই বাজারজাত করা যায়। প্রতিটি লালমি আকার ভেদে পাইকারি ১০ থেকে ৩০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি করা যায়। ঢাকাসহ বিভিন্ন জায়গার পাইকাররা এখানে এসে লালমি কিনে ট্রাকে করে নিয়ে যায়।
ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানের পাইকারা এখানে এসে ট্রাকে করে নিয়ে যাচ্ছেন বাঙ্গিসদৃশ এ ফল।
ফরিদপুর কৃষিসম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক জিয়াউল হক বলেন, “জেলায় চলতি মৌসুমে সাড়ে ৫০০ হেক্টর জমিতে লালমির চাষ হয়েছে।
লালমির জন্য প্রসিদ্ধ জেলার সদরপুর উপজেলা। রমজানকে সামনে রেখে চাষিরা এ ফল চাষাবাদ করে, উৎপাদনও বেশ ভালো হয়। প্রতিদিন এই উপজেলা থেকে ১০০ থেকে ১২৫ ট্রাক লালমি যায় দেশের বিভিন্ন জেলাতে। যার বাজার মূল্য ২৫ লক্ষাধিক টাকা।”
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উপজেলার কৃষ্ণপুর ইউনিয়নের ইউসুফ মোল্লার আড়তে সব থেকে বেশি লালমির আমদানি হয়। যেখান থেকে ট্রাক ট্রাক লালমি দেশের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে পড়ছে।
সেখানে গিয়ে দেখা যায়, ইউসুফ মোল্লার আড়তের আশপাশের মাঠ থেকে প্রতিদিন চাষিরা তাদের এই ফল এখানে নিয়ে আসছেন। এখানে ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলার পাইকাররা সকাল থেকেই লালমি কিনছেন। আকার ভেদে ১০০ লালমি ১ থেকে ৩ হাজার টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
ক্ষেত থেকে লালমি তোলায় ব্যস্ত কৃষক।
এক একটি ট্রাকে ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকার লালমি বহন করে নিয়ে যাওয়া হয়। প্রতিদিন গড়ে ১০০ থেকে ১২৫ ট্রাক লালমি বিক্রি হয় এখানে।
ঢাকার শ্যামবাজার থেকে আসা পাইকারি ক্রেতা হায়দার হোসেন, শ্যামল সাহা জানান, রমজানের সময় তারা সদরপুরে আসেন লালমি কিনতে।
তাদের মত আরও অনেক ক্রেতাই এখান থেকে লালমি কিনে ট্রাকে করে ঢাকাসহ বিভিন্ন জায়গা নিয়ে বিক্রি করেন।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।