প্রদীপ কুমার দেবনাথ : নরসিংদী জেলার বেলাব উপজেলার সীমান্তবর্তী গ্রাম সুটুরিয়া। অপরপার্শ্বে মনোহরদী উপজেলার কাঁচি কাটা ইউনিয়ন। মাঝখানে দুটি উপজেলাকে বিভক্ত করেছে সুপ্রাচীন কাল হতে শাপলার বিল খ্যাত সুতারের বিল। এই শাপলা বিলে শোভা ছড়াচ্ছে লাল শাপলা ফুল। বিশাল এলাকার বিলটি এখন লাল শাপলার অপরূপ সৌন্দর্যের লীলাভূমি। লাল শাপলার সৌন্দর্যে মুগ্ধ হচ্ছে এলাকা ও উপজেলার হাজার হাজার সৌন্দর্য পিপাসু নানা বয়সের নর-নারী। লোকমুখে প্রচারিত এই বিলের অপার সৌন্দর্য উপভোগ করতে উপজেলার গন্ডি পেরিয়ে বিভিন্ন স্থান থেকে বিলের ধারে ভিড় জমাচ্ছেন পর্যটকরা। বেলাব ও পাশ্ববর্তী মনোহরদী উপজেলার সমদূরবর্তী প্রত্যন্ত অঞ্চল পাটুলী ইউনিয়নের একটি গ্রাম সুটুরিয়া। উভয় উপজেলা সদর থেকে দুরত্ব মাত্র ৭ কিলোমিটার। যা লাল শাপলা রাজ্য হিসেবে পরিচিতি লাভ করছে দিন দিন।
সরেজমিনে গিয়ে জানা গেছে, প্রায় শতবর্ষী এ বিলের সবটাই এখন লাল শাপলার দখলে। আশপাশের প্রকৃতি মিলিয়ে এটি এখন লাল-সবুজের লীলাভূমি। বহু দূর থেকেই এর সৌন্দর্য নজর কাড়ে সবার। কাছে যেতেই মন ভুলিয়ে দেয় জাতীয় ফুল শাপলার মোহনীয় সৌন্দর্য। শাপলায় সৌন্দর্য এমন যে এ যেন প্রকৃতির বুকে আঁকা এক নকশিকাঁথা। সূর্যের আভাকেও যেন হার মানিয়েছে এ বিলে ফোটা লতাপাতা গুল্মসহ লাল শাপলা। নিকট থেকে দেখলে এর সৌন্দর্য আরও মোহিত করে। প্রকৃতি প্রেমিকদের প্রকৃতির নয়নাভিরাম আকর্ষণীয় রুপ উপভোগের একটি চমৎকার স্থান এই সুতার বিল। কাছ থেকে দেখলে মনে হবে লাল-গোলাপি চাদর বিছিয়ে রাখা আছে। প্রাকৃতিকভাবেই এই শাপলার অবারিত সৌন্দর্য যে কাউকে মুগ্ধ করবে। রুপসী বাংলার এই সৌন্দর্যের প্রশংসা এখন গ্রামের মানুষের মুখ থেকে ছাড়িয়ে পৌঁছে গেছে উপজেলা ও জেলাতেও। সাধারণত সেপ্টেম্বর থেকে নভেম্বর পর্যন্ত প্রায় তিন মাস এ বিলে শাপলা ফোটে। শাপলা এখন সবজি হিসেবেও বেশ জনপ্রিয়। শাপলা তুলে স্থানীয় বাজারে বিক্রি করে এলাকার অনেকেই এ সময় জীবিকা নির্বাহ করছেন। এখানকার জমিগুলো মালিকানাধীন। তাছাড়া শাপলা পরিপক্ব হওয়ার পর গুড়াতে যে শালুক হয় তার কদরও অনেক। ডিসেম্বর মাসে শুরুর দিকে শীতের মৌসুমে যখন পানি কমে যায় তখন সব শাপলা মরে যায়। ওই সময় কৃষকরা জমি পরিষ্কার করে ইরি ধান, পেঁয়াজ ও পাট চাষ করেন। পরবর্তী বছর শাপলার গোড়া ও মোথা থেকে আবার জন্ম নেয় লাল শাপলার। বিলপাড়ের বাসিন্দা অমল্য পাল বলেন, ভোরে ফুলের সৌন্দর্য সবচেয়ে বেশি থাকে। এ সময় সতেজ ফুলগুলোর দিকে তাকালে মনটাও ফুরফুরে হয়ে যায়।
সোহরাব হোসেন বলেন, এ বছর ফুলের সংখ্যা একটু কম। তবে মানুষের মাঝে সাড়া পড়েছে বেশি। বিগত বছরগুলোতে ফুলের পরিমাণ বেশি থাকলেও স্থানীয় সৌন্দর্য পিপাসু কয়েকজন ছাড়া তেমন লোকজন দেখা যেত না। যেহেতু বিলের জমিগুলো মালিকানাধীন শুকনো মৌসুমে বিভিন্ন জাতের ধান ও সবজির চাষ করা হয়। এসব জমির কয়েকজন মালিক ও এলাকাবাসী জানান, বিলটির শাপলার সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে প্রতিদিনই বিভিন্ন এলাকার মানুষ পরিবার পরিজনদের নিয়ে ঘুরতে আসছে। বিলটিকে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় মৎস অবমুক্ত করণ পর্যটকদের বসা বা বিশ্রামের ব্যবস্থা করতে পারলে ভালো হত বলে মনে করেন তারা।
বেলাব উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান (ভারপ্রাপ্ত) মনিরুজ্জামান ভূঁইয়া জাহাঙ্গীর বলেন, নৈসর্গিক সৌন্দর্যের পাশাপাশি কোলাহলমুক্ত পরিবেশ মানুষ খুব ভালবাসে। আর বিলটিও চমৎকার পরিবেশে অবস্থিত। এখানে এসে মানুষ লাল শাপলার পাশাপাশি কুমোর পাড়ার মৃৎশিল্প ও দর্শন করতে পারে, যা আমাদের এলাকার ঐতিহ্য বহন করে।’ বিলে ঘুরতে আসা পোড়াদিয়া বাজারের ঔষধ বিক্রেতা আজিজুর রহমান বলেন, সত্যিই স্বপ্নময় বিল এটি। মনোমুগ্ধকর পরিবেশ আর লাল শাপলা হৃদয়কে আন্দোলিত করে।
বেলাব উপজেলা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান ও উপজেলা মহিলা আওয়ামীলীগের সভাপতি শারমিন আক্তার খালেদা বলেন, প্রকৃতির কাছাকাছি এসে লাল-সবুজের অপার মিলন দেখার সৌভাগ্য কমই হয়। তবে এখানে এসে আগের ছোটবেলার মতো পানিতে নেমে শাপলা তুলে বাড়িতে নিয়ে খেলতে ইচ্ছে হয়। প্রকৃতির কত সুন্দর উপহার এই লাল শাপলা।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।