আন্তর্জাতিক ডেস্ক : লিবিয়ায় সেনা মোতায়েনের ঘোষণা তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়্যেব এরদোয়ান। বৃহস্পতিবার আঙ্কারায় নিজ দল ক্ষমতাসীন একে পার্টির এক অনুষ্ঠানে তিনি এ ঘোষণা দেন। এক প্রতিবেদনে এ খবর জানিয়েছে তুর্কি সংবাদমাধ্যম ইয়েনি সাফাক।
এরদোয়ান বলেন, লিবিয়ার পক্ষ থেকে দেশটিতে সেনা মোতায়েনের জন্য তুরস্কের প্রতি অনুরোধ জানানো হয়েছে। আঙ্কারা সে অনুরোধ গ্রহণ করবে।
তুর্কি প্রেসিডেন্ট বলেন, আগামী জানুয়ারিতে তুরস্কের পার্লামেন্ট অধিবেশন শুরু হবে। এ সময় সেখানে লিবিয়ার আহ্বানে সাড়া দিয়ে দেশটিতে সেনা মোতায়েনের বিষয়ে বিল তোলা হবে।
এরদোয়ান বলেন, অভ্যুত্থানকামী জেনারেলের (বিদ্রোহী নেতা খলিফা হাফতার) বিরুদ্ধে আমরা লিবিয়া সরকারকে সব ধরনের সমর্থন দেবো। বিভিন্ন ইউরোপীয় ও আরব দেশ এই জেনারেলকে পৃষ্ঠপোষকতা দিচ্ছে।
জীবনযাপনের মানের দিকে থেকে তেল-সমৃদ্ধ লিবিয়া একসময় আফ্রিকার শীর্ষে ছিল। স্বাস্থ্য এবং শিক্ষা ছিল পুরোপুরি রাষ্ট্রের দায়িত্ব। তবে যে রাজনৈতিক এবং সামাজিক স্থিতিশীলতা ঐ ঐশ্বর্য নিশ্চিত করেছিল, সেটি পুরোপুরি নষ্ট হয়ে যায় ২০১১ সালে যখন পশ্চিমা সমর্থিত বিদ্রোহীদের হাতে কর্নেল মুয়াম্মার গাদ্দাফির পতন হয়। তারপর থেকে লিবিয়ায় চলছে সীমাহীন সংঘাত। গাদ্দাফি ক্ষমতাচ্যুত ও নিহত হওয়ার পর ত্রিপোলিতে জাতিসংঘ সমর্থিত একটি মনোনীত সরকার রয়েছে। ওই কর্তৃপক্ষকে জাতীয় ঐকমত্যের সরকার বা জিএনএ নামে অভিহিত করা হয়। তবে দেশের বেশিরভাগ অঞ্চলের নিয়ন্ত্রণ বিভিন্ন বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর হাতে রয়ে গেছে। পশ্চিমাঞ্চলে জিনএনএ-র কর্তৃত্ব থাকলেও পূর্ব ও দক্ষিণের বেশিরভাগ অঞ্চল হাফতার বাহিনী এলএনএ-র দখলে। ২০১৯ সালের এপ্রিলে এ বাহিনী লিবিয়ায় আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত সরকারের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে।
প্রায় পাঁচ বছর ধরে লিবিয়ায় দুটি সরকার কার্যক্রম পরিচালনা করছে। এদের মধ্যে একটি সরকারকে সমর্থন দিয়েছে জাতিসংঘ ও অন্যান্য দেশ। আরেকটি ফিল্ড মার্শাল হাফতারের নেতৃত্বাধীন। ত্রিপোলির আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত সরকারকে সমর্থন দিচ্ছে জাতিসংঘ। তুরস্ক, ইতালি ও যুক্তরাজ্যও এ সরকারকে সমর্থন দিচ্ছে। আর হাফতার বাহিনীর সমর্থনে রয়েছে মিসর, সংযুক্ত আরব আমিরাত, সৌদি আরব, মিসর ও ফ্রান্স। তবে আন্তর্জাতিক সমর্থনের বিষয়টি স্পষ্ট নয়। যেমন যুক্তরাষ্ট্র আনুষ্ঠানিকভাবে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত সরকারকে (জিএনএ) সমর্থন করে এবং শান্তি আলোচনার আহ্বান জানায়। কিন্তু ২০১৯ সালের এপ্রিলে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প খলিফা হাফতারকে ফোন দিয়ে লিবিয়ার ব্যাপারে ‘যৌথ স্বপ্নের’ কথা বলেন।
কে এই খলিফা হাফতার
লিবিয়ার সাবেক নেতা মুয়াম্মর গাদ্দাফির এক সময়ের ঘনিষ্ঠ সেনা কর্মকর্তা খলিফা হাফতার পরে হয়ে উঠেন মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ-র মদতপুষ্ট বিদ্রোহী। গত চার দশকে লিবিয়ার রাজনীতিতে এক গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে পরিণত হন তিনি। এ সময়ের মধ্য তার অনেক উত্থান-পতন রয়েছে। কখনও ছিলেন লিবিয়ার ক্ষমতা কেন্দ্রের কাছাকাছি খুব গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি, কখনও তাকে ক্ষমতা থেকে দূরে সরে যেতে হয়েছে। পরে আবার তার প্রত্যাবর্তন ঘটেছে ক্ষমতার কেন্দ্রে।
খালিফা হাফতারের অধীনে থাকা বাহিনী লিবিয়ার প্রধান তেল টার্মিনালগুলোর দখল নিয়েছে। তার নিয়ন্ত্রণাধীন পূর্বাঞ্চলীয় শহর টবরুকের পার্লামেন্টের হাতে (এই পার্লামেন্টকে স্বীকৃতি দেয়নি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়) দেশটির গুরুত্বপূর্ণ তেল সম্পদের নিয়ন্ত্রণ। সূত্র: ইয়েনি সাফাক, আনাদোলু এজেন্সি, বিবিসি।