বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের শুরুর দিকে জেনারেল ফিজিকস পরীক্ষায় ফেল করেছেন। অথচ ১৯২৯ সালে সেই মানুষটি নোবেল পুরস্কার পেয়ে গেলেন পদার্থবিজ্ঞানে। তিনি লুই ভিক্টর পিয়েরে রেমন্ড ডি ব্রগলি। ইলেকট্রনের তরঙ্গধর্ম আবিষ্কারের জন্য তাঁর খ্যাতি কিংবদন্তীতুল্য। আজ ১৫ আগস্ট তাঁর জন্মদিন।
৯১১ সালে ব্রাসেলসে অনুষ্ঠিত প্রথম সলভে কনফারেন্সের অন্যতম সেক্রেটারি ছিলেন মরিস ডি ব্রগলি। তিনি ব্রাসেলসে যাওয়ার সময় ছোট ভাই লুইকেও সঙ্গে নিয়ে গেলেন। ইউরোপের প্রথম সারির সব পদার্থবিজ্ঞানীর মধ্যে কোয়ান্টাম মেকানিকসের ক্রমবর্ধমান গতিপথ লক্ষ করে ১৯ বছরের তরুণ লুই ডি ব্রগলি তাঁর ভবিষ্যতের পথ খুঁজে পেলেন। তত্ত্বীয় পদার্থবিজ্ঞানের প্রতি সত্যিকারের ভালোবাসা অনুভব করলেন। ১৯১৩ সালে সরবোন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ‘লাইসেনসিয়েট ইন সায়েন্স’ বা বিজ্ঞানে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করলেন।
কোয়ান্টাম মেকানিকসের অগ্রগতি তিনি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছিলেন। আলোর তরঙ্গ ও কণার দ্বৈত ধর্ম প্রমাণিত হয়ে গেছে। লুই ডি ব্রগলি ১৯২৩ সালে পরপর তিনটি ছোট গবেষণাপত্রে প্রমাণ করে দিলেন যে আলো তরঙ্গ হয়েও যেভাবে কণার ধর্ম প্রদর্শন করে, তেমনি ইলেকট্রন কণা হয়েও তরঙ্গের ধর্ম প্রদর্শন করতে পারে; অর্থাৎ যেকোনো বস্তুকণা ও তরঙ্গের দ্বৈত ধর্ম ধারণ করে।
লুই ডি ব্রগলির বস্তু-তরঙ্গের গাণিতিক ভিত্তি কয়েকটি সহজ সমীকরণের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব। আইনস্টাইনের শক্তি ও পদার্থের সমীকরণ E = mc2, যেখানে E = শক্তি, m = বস্তুর ভর, c = আলোর বেগ। আবার শক্তি ও তরঙ্গের সমীকরণ লেখা যায়, E = hf, যেখানে E = শক্তি, h = প্ল্যাঙ্কের ধ্রুবক = 6.63×10-34 জুল-সেকেন্ড, এবং f = তরঙ্গের কম্পাঙ্ক। শক্তির উভয় সমীকরণের সাম্যতা বিবেচনা করে লেখা যায়, mc2 = hf। আলোর তরঙ্গদৈর্ঘ্য যদি L হয়, কম্পাঙ্ক যদি f হয়, তাহলে আলোর বেগ c = Lf; যা থেকে লেখা যায় f = c/L; কম্পাঙ্কের মান বসানোর পর সমীকরণ দাঁড়ায়, mc2 = hc/L, যেখান থেকে লেখা যায়, L = h/mc, অর্থাৎ বস্তুর তরঙ্গদৈর্ঘ্য = প্ল্যাঙ্কের ধ্রুবক/বস্তুর ভরবেগ।
১৯২৪ সালে লুই ডি ব্রগলি তাঁর পিএইচডি থিসিস প্রকাশ করলেন। ইউরোপের অনেক বিজ্ঞানীর চোখেই পড়েছে তাঁর বস্তু-তরঙ্গের সূত্র, কিন্তু কেউই খুব একটা পাত্তা দিলেন না। কিন্তু আইনস্টাইন আর শ্রোডিঙ্গার খুবই গুরুত্বের সঙ্গে নিলেন তাঁর এই তত্ত্ব। শ্রোডিঙ্গার তাঁর ওয়েভ মেকানিকসে লুই ডি ব্রগলির বস্তু–তরঙ্গ তত্ত্ব প্রয়োগ করলেন।
পদার্থবিজ্ঞানের তত্ত্ব যতক্ষণ পর্যন্ত পরীক্ষণের সাহায্যে প্রমাণিত নয়, ততক্ষণ পর্যন্ত সেই তত্ত্ব খুব একটা গুরুত্ব পায় না। অনেক বিজ্ঞানীকে বছরের পর বছর অপেক্ষা করতে হয় তাঁদের তত্ত্ব প্রমাণিত হওয়ার জন্য। পিটার হিগস ১৯৬৫ সালে যে হিগস বোসন তত্ত্ব দিয়েছিলেন, তার ৪৭ বছর পর হিগস বোসন কণা পাওয়া গেছে। লুই ডি ব্রগলিকে বেশি দিন অপেক্ষা করতে হয়নি। মাত্র তিন বছরের মধ্যেই তাঁর তত্ত্ব প্রমাণিত হয়ে গেল।
১৯২৭ সালে আমেরিকার পদার্থবিজ্ঞানী ক্লিনটন ডেভিডসন ও লেস্টার জারমার এবং ব্রিটিশ পদার্থবিজ্ঞানী জর্জ থমসন পরীক্ষণের সাহায্যে প্রমাণ করেন যে ইলেকট্রনও তরঙ্গের ধর্ম প্রদর্শন করে। পরে ইলেকট্রনের ধর্মাবলি বিশ্লেষণের ক্ষেত্রে লুই ডি ব্রগলির তত্ত্ব বিশেষ ভূমিকা রেখেছে। ডি ব্রগলির তত্ত্ব থেকেই পাওয়া গেছে ম্যাগনেটিক লেন্স, যা কাজে লাগিয়ে উদ্ভাবিত হয়েছে ইলেকট্রন মাইক্রোস্কোপ।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।