জুমবাংলা ডেস্ক : রায় বাস্তবায়ন করে প্রতিবেদন না দেওয়ায় বরিশালের জেলা প্রশাসকের প্রতি উষ্মা করেছেন হাইকোর্ট। রাষ্ট্রপক্ষকে উদ্দেশ্য করে আদালত বলেছেন, ‘দেশ এটাই, এই দেশেই তো থাকতে হবে। লুট করে টাকা-পয়সা ইউরোপ-আমেরিকা নিয়ে যাবেন, সব রেখে দেবে। তাই পরিবেশটা ঠিক রাখতে বলেন।
‘
বরিশালের বানারীপাড়া সন্ধ্যা (কৃষ্ণকাঠি) নদীর জায়গায় থাকা দখল ও স্থাপনা উচ্ছেদ করে প্রতিবেদন না দেওয়ায় এসব কথা বলেন আদালত।
সন্ধ্যা নদী ভরাট করে আবাসন প্রকল্প তৈরি নিয়ে গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবর যুক্ত করে মানবাধিকার ও পরিবেশবাদী সংগঠন হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশ ২০০৯ সালে জনস্বার্থে রিট করে। প্রাথমিক শুনানির পর ওই বছরের ৩১ মে হাইকোর্ট রুল দেন। রুলের চূড়ান্ত শুনানি শেষে ২০১৮ সালের ১৪ মার্চ রায় দেওয়া হয়।
রায়ে বরিশালের বানারীপাড়া সন্ধ্যা নদী (কৃষ্ণকাঠি) নদীর জায়গায় ‘কাজলাহার আশ্রয়ণ’ প্রকল্প গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করাকে অবৈধ ঘোষণা করে সাত দফা নির্দেশনা দেন উচ্চ আদালত।
এসব নির্দেশনার মধ্যে ছিল- সিএস ও আরএস রেকর্ড অনুসারে তিন মাসের মধ্যে জরিপ করে অবৈধ দখলদারের তালিকা করা। নদীর জায়গায় থাকা দখল ও স্থাপনা চার মাসের মধ্যে উচ্ছেদ করা। আইন অনুসারে ওই প্রকল্পে যেসব গরিব লোকদের আবাসনের প্রস্তাব করা হয়েছিল, তাদের অন্য সরকারি জমিতে পুনর্বাসন করা।
আইন ভঙ্গ করে নদীর জায়গা ভরাটকারীদের বিরুদ্ধে পরিবেশ আইনের ৭ ধারা অনুসারে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া।
এসব নির্দেশ বাস্তবায়ন করে প্রতিবেদন না দেওয়ায় গত ফেব্রুয়ারিতে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার অভিযোগ আনতে হাইকোর্টে আবেদন করে রিটকারী পক্ষ।
আজ রবিবার সে আবেদনটিই বিচারপতি কে এম কামরুল কাদের ও বিচারপতি মোহাম্মদ শওকত আলী চৌধুরীর দ্বৈত বেঞ্চে শুনানির জন্য ওঠে।
আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মনজিল মোরসেদ। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল জুলফিয়া আক্তার।
শুনানিতে হাইকোর্ট প্রতিবেদনের বিষয়ে জানতে চাইলে সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ‘প্রতিবেদনের জন্য আমাদের সময় দিন, যোগাযোগ করি।’ তখন আইনজীবী মনজিল মোরসেদ বলেন, ‘আদেশ নিয়ে ডিসি এক ধরনের খেলা খেলছে।’
আদালত বলেন, ‘যা দেখবে তাই তো শিখবে। সচিবরা যা করে তারা তো তাই…। আদালত অবমাননার হাজার হাজার মামলা পড়ে আছে।’
মনজিল মোরসেদ বলেন, ‘আমরা তাহলে কোথায় যাব?’ আদালত বলেন, ‘আপনারা কনটেম্পট (আদালত অবমাননা এখতিয়ার সম্পন্ন) কোর্টে যান।’
মনজিল মোরসেদ বলেন, ‘আদালতের যদি অস্তিত্ব রাখতে হয় তাহলে সংবিধানের ১০৮ অনুচ্ছেদের ক্ষমতা (আদালত অবমাননা সংক্রান্ত) সেটা প্রয়োগ করতে হবে। তা না হলে তো আইনের শাসন থাকবে না। জনগণ, কেউ কোনো বিচার পাবে না। রাষ্ট্র কলাপস করলে জনগণ ক্ষতিগ্রস্থ হবে।’
এ পর্যায়ে রাষ্ট্রপক্ষের কাছে প্রতিবেদন না দেওয়ার কারণ জানতে চাইলে সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল কারণ না জানিয়ে বলেন, ‘আমাদের সর্বশেষ সময় দেওয়া হোক।’
তখন আদালত বলেন, ‘আপনি যদি এক শ বছরও সময় নেন লাভ হবে না। দেশ এটাই, এ দেশেই তো থাকতে হবে। লুট করে টাকা-পয়সা আমেরিকা নিয়ে যাবেন, সব রেখে দেবে। তাই পরিবেশটা ঠিক রাখতে বলেন। ১৮ জুন রাখলাম। ভালো করে বুঝিয়ে বলেন। সম্মানের জায়গাটা ঠিক রাখতে বলবেন। নিজের সম্মান নিজেকেই রক্ষা করতে হবে। না হলে আমরা আদেশ দেব, এসে জবাব দিতে হবে।’
পরে সাংবাদিকদের মনজিল মোরসেদ বলেন, ‘আদালতের রায় বাস্তবায়নে জেলা প্রশাসক বারবার সময় নিচ্ছেন। কিন্তু রায়ের নির্দেশ বাস্তবায়ন করছেন না। যে কারণে উষ্মা প্রকাশ করেছেন। শেষ বারের মতো সময় নেওয়া হয়েছে।’
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।