আমাদের মধ্যে স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন জাগতে পারে ল্যাপটপ থেকে বিকিরণের মধ্যে কোনটা ক্ষতিকর আর কোনটা ক্ষতিকর নয়? দেখতেই পাচ্ছেন, আপনার ল্যাপটপ থেকে বিভিন্ন ধরনের বিকিরণ বের হয়। কিন্তু এসব বিকিরণ এত কম কম্পাংক (ফ্রিকোয়েন্সি) ও কম তীব্রতার যে তা মানবদেহের পক্ষে তেমন ক্ষতিকর নয়। আবার ল্যাপটপ থেকে যেসব বিকিরণ বের হয়, তা অনন্যও নয়। মানে সেগুলো যে শুধু ল্যাপটপ থেকেই নিঃসৃত হয়, তা নয়; বরং দৈনন্দিন জীবনে আমরা প্রতিনিয়ত নানাভাবে এদের মুখোমুখি হচ্ছি।
শুরুতেই ল্যাপটপের পর্দার দৃশ্যমান আলোর কথা বলা যাক। যেসব বস্তু দৃশ্যমান আলো নিঃসরণ করে, স্বাভাবিকভাবেই সেগুলো বিকিরণ নিঃসরণ করে। কারণ আলো নিজেই একধরনের বিকিরণ। মানে বিদ্যুৎ-চুম্বকীয় বিকিরণ। এর মধ্যে রয়েছে মোমবাতি, আগুন, লাইট বাল্ব, টেলিভিশন, মোবাইল ফোন, ল্যাপটপ ও ডেস্কটপের পর্দা।
এবার আসি ইনফ্রারেড রেডিয়েশনের ব্যাপারে। সব বস্তুই তাপীয় বিকিরণ নিঃসরণ করে। পরমাণু দিয়ে গঠিত যেকোনো বস্তু এবং যার তাপমাত্রা আছে, তার জন্যই কথাটা সত্য। তাত্ত্বিকভাবে কোনো বস্তুর তাপমাত্রা যদি পরম শূন্য (মাইনাস ২৭৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস) হয়, তাহলে তা থেকে কোনো তাপীয় বিকিরণ নিঃসৃত হবে না। কিন্তু বাস্তবে কোনো বস্তুকে একদম পরম শূন্য তাপমাত্রায় নামিয়ে আনা সম্ভব নয়।
কাজেই সব বস্তু থেকে এ ধরনের বিকিরণ নিঃসৃত হবে, তাতে অবাক হওয়ার কিছু নেই। যেসব বস্তুর তাপমাত্রা মানুষের জন্য আরামদায়ক, সেসব বস্তু যে বিকিরণ নিঃসরণ করে, তার সিংহভাগই ইনফ্রারেড। তার চেয়ে বেশি উত্তপ্ত বস্তু থেকে দৃশ্যমান আলো ছাড়াও আল্ট্রাভায়োলেট বা অতিবেগুনি রশ্মি নিঃসৃত হতে পারে।
যেমন ইনক্যানডেসেন্ট লাইট বাল্ব থেকে এ ধরনের দৃশ্যমান আলো ও ইনফ্রারেড আলো নিঃসৃত হয়। আবার আপনার দেহ থেকেও সবসময় ইনফ্রারেড আলো বেরিয়ে আসছে। বিশেষ ধরনের ইনফ্রারেড ডিটেক্টরে তা শনাক্ত করা যায়। আবার আপনার বাসার টিভি বা এসির রিমোটও কাজ করে এই আলো ব্যবহার করে। (আপনার মোবাইল ফোনের ক্যামেরা দিয়ে তা শনাক্ত করতে পারবেন।) কাজেই ল্যাপটপের ইনফ্রারেড আলো নিয়ে দুশ্চিন্তার কিছু নেই।
যেসব যন্ত্রপাতি বিদ্যুৎ-চুম্বকীয় তরঙ্গ ব্যবহার করে যোগাযোগ করে বা অন্য যন্ত্রের সঙ্গে সংযুক্ত হয়, সেগুলোতে একটা অ্যান্টেনা, লেজার বা রেডিও তরঙ্গ নিঃসরণকারী বাল্ব, ইনফ্রারেড বা দৃশ্যমান বিকিরণ থাকে। এর মধ্যে রয়েছে ওয়াইফাই ও ব্লুটুথ ডিভাইস, ওয়াকিটকি, রেডিও, হ্যাম রেডিও, মোবাইল বা স্মার্ট ফোন, টেলিভিশনের রিমোট এবং রিমোট নিয়ন্ত্রিত খেলনা। কিন্তু এই তরঙ্গও আমাদের জন্য ক্ষতিকর নয়।
প্রায় সব ধরনের ইলেকট্রনিক সার্কিট থেকে সামান্য পরিমাণ নিম্ন কম্পাংকের রেডিও তরঙ্গ লিক হয়। সেটা অস্বাভাবিক কিছু নয়। আবার বাঁকানো তারের ভেতর দিয়ে বৈদ্যুতিক প্রবাহ যাওয়ার সময়ও অল্প পরিমাণ নিঃসৃত হয় বিদ্যুৎচুম্বকীয় বিকিরণ। এগুলোও মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর নয়।
বেশির ভাগ বস্তুতে খুবই সামান্য পরিমাণ হলেও প্রাকৃতিকভাবে সৃষ্ট তেজস্ক্রিয় পরমাণু থাকে। তাতে এসব অস্থিতিশীল আইসোটোপের তেজস্ক্রিয় ক্ষয় প্রক্রিয়ার কারণে খুব অল্প হলেও নিউক্লিয়ার রেডিয়েশন নিঃসৃত হয়। কিন্তু এতেও দুশ্চিন্তার কিছু নেই। কারণ বেশির ভাগ বস্তু থেকে যে নিউক্লিয়ার রেডিয়েশন বা বিকিরণ নিঃসৃত হয়, তা সাধারণত খুবই দুর্বল থাকে। আবার সেগুলো ব্যাকগ্রাউন্ড রেডিয়েশনের অংশ।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।