লাইলাতুল কদরের নামাজের নিয়ত ও পড়ার নিয়ম
রমজানের শেষ দশ রাত মানেই অন্যরকম এক অনুভূতির রাত। আর এই রাতগুলোর মাঝেই লুকিয়ে আছে এক অতুলনীয় ফজিলতের রাত—শবে কদরের রাত। এই রাতকে কেন্দ্র করে মুসলিম উম্মাহর মধ্যে এক বিশেষ উদ্দীপনা দেখা যায়। পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে, “লাইলাতুল কদর হাজার মাসের চেয়ে উত্তম।” আর এই রাতেই আল্লাহ তা’আলা কোরআন নাজিল করেছেন, যা এই রাতকে দিয়েছে এক অনন্য মহিমা।
এই রাতটি যেহেতু নির্দিষ্ট করে বলা হয়নি, তাই নবী করিম (সা.) রমজানের শেষ দশকের বেজোড় রাতগুলোতে শবে কদরের নামাজ আদায়ের মাধ্যমে কদর তালাশ করতে বলেছেন। তাই প্রতি বছর বিশ্বের কোটি কোটি মুসলমান এই রাতটিতে লাইলাতুল কদরে নামাজ, নফল ইবাদত, দোয়া, কোরআন তেলাওয়াত এবং বিশেষ করে শবে কদরের নামাজ আদায়ে রত থাকেন।
Table of Contents
শবে কদরের নামাজের নিয়ত
শবে কদরের নামাজ পড়ার পূর্বে নিয়ত করাটাই ইবাদতের শুরু। নিয়তটি আরবিতে এমন হয়:
‘নাওয়াইতু আন উছাল্লিয়া লিল্লাহি তায়া’লা রাকআ’তাই ছালাতি লাইলাতিল কদর-নাফলি, মুতাওয়াজ্জিহান ইলা-জিহাতিল্ কা’বাতিশ্ শারীফাতি আল্লাহু আকবার।’
এর বাংলা অর্থ: “আমি কাবামুখী হয়ে আল্লাহর (সন্তুষ্টির) জন্য শবে কদরের দুই রাকাত নফল নামাজ পড়ার নিয়ত করলাম, আল্লাহু আকবার।”
নিয়তের সময় নিজের অন্তরে এই কথা দৃঢ়ভাবে স্থাপন করাটাই মুখ্য। যেহেতু লাইলাতুল কদরে নামাজ নফল, তাই নিয়তে সামান্য ভুল হলেও তা ক্ষমাযোগ্য।
শবে কদরের নামাজ পড়ার নিয়ম
শবে কদরের নামাজ আদায়ে নির্দিষ্ট কোনো রাকাত সংখ্যা বা নির্দিষ্ট সূরা পড়ার বিধান নেই। তবে হাদিস অনুযায়ী, এই রাতে যত বেশি সম্ভব দুই রাকাত করে নামাজ পড়া সুন্নাত। আপনি ২ রাকাত, ৪ রাকাত, ৮ রাকাত বা তার চেয়ে বেশি পড়তে পারেন—তবে লাইলাতুল কদরে নামাজ মনোযোগ ও আন্তরিকতা থাকা আবশ্যক।
এই নামাজ পড়ার সময় করণীয়:
- সুন্দর করে অজু করে নামাজে দাঁড়ান
- প্রতিটি রাকাতে সূরা ফাতিহার পর কোরআনের যেকোনো সূরা পড়তে পারেন
- চাইলে সুরা কদর ও সুরা ইখলাস বারবার পড়া যেতে পারে
- নামাজ শেষে দোয়া ও ইস্তেগফার করা উত্তম
- নিজের ও পরিবার-পরিজনের জন্য দোয়া করুন, রহমত ও মাগফিরাত প্রার্থনা করুন
এছাড়াও, নামাজ শেষে নিচের দোয়াটি কমপক্ষে ১০০ বার পড়া অনেক ফজিলতপূর্ণ বলে বিবেচিত:
‘সুব্হানাল্লাহি ওয়াল হাম্দু লিল্লাহি ওয়া লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবর, লা হা’ওলা কুয়্যাতা ইল্লাবিল্লাহিল্ আলীয়্যিল আযীম।’
শবে কদরের সবচেয়ে ফজিলতপূর্ণ দোয়া
হাদিসে এসেছে, হজরত আয়েশা (রা.) রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে জিজ্ঞেস করেছিলেন, শবে কদরের রাতে কোন দোয়া পড়া উচিত? উত্তরে তিনি বলেছিলেন, এই দোয়াটি বেশি বেশি পড়ো:
‘আল্লাহুম্মা ইন্নাকা আফুউন তুহিব্বুল আফওয়া ফাফু আন্নি।’
অর্থ: “হে আল্লাহ! আপনি ক্ষমাশীল এবং ক্ষমা করতে ভালোবাসেন। তাই আপনি আমাকে ক্ষমা করে দিন।”
এই সংক্ষিপ্ত কিন্তু গভীর অর্থবোধক দোয়াটি হৃদয় দিয়ে পড়লে, আল্লাহ অবশ্যই মাফ করে দিবেন ইনশাআল্লাহ।
শবে কদরের রাতে আরও কিছু করণীয়
শবে কদরের নামাজ ছাড়াও এই রাতে কিছু আমল করলে তা দ্বিগুণ-তিনগুণ সাওয়াব বয়ে আনতে পারে। যেমন:
- বেশি বেশি কোরআন তেলাওয়াত করা
- নিজে ও পরিবারের জন্য দোয়া করা
- গোনাহের জন্য কেঁদে কেঁদে ক্ষমা চাওয়া
- দরিদ্রদের জন্য দোয়া ও সদকা দেওয়ার সংকল্প
এই সব আমল মানুষকে আল্লাহর নৈকট্যে নিয়ে যায়, যা শবে কদরের মূল বার্তাও।
লাইলাতুল কদর রাতের ফজিলত: হাজার মাসের চেয়েও উত্তম রহমতের রাত
শবে কদরের নামাজ হলো এমন এক ইবাদত, যা মানুষকে আল্লাহর আরও কাছে নিয়ে যায়। নির্দিষ্ট পদ্ধতি না থাকলেও, হৃদয় থেকে পড়া লাইলাতুল কদরে নামাজ এই রাতের বরকত লাভের পথে সহায়ক হয়। সারা বছর যারা ইবাদতে একটু ঢিলেমি করে ফেলেছি, তাদের জন্য শবে কদর এক সুবর্ণ সুযোগ। এই রাতে নিজেকে পরিশুদ্ধ করে তোলার মাধ্যমে আমরা আল্লাহর অনুগ্রহের আশা করতে পারি।
চলুন, এই মহান রাতে শবে কদরের নামাজ আদায় করে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের চেষ্টা করি। আপনারা এই আর্টিকেলটি শেয়ার করুন, যেন আরও অনেকেই শবে কদরের ফজিলত ও নামাজের নিয়ম সম্পর্কে জানতে পারেন।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।