জুমবাংলা ডেস্ক: জ্যৈষ্ঠের দারুণ দহনে দগ্ধ হচ্ছে চারপাশ। একই সঙ্গে গ্রীষ্ম তার ডালা সাজাতে শুরু করেছে নানান স্বাদের ফলসম্ভারে। বাজারে ঝুড়ির ভেতর থেকে এরই মধ্যে উঁকি দিতে শুরু করেছে পাকা আম। আর পাড়া-মহল্লার ফল বিক্রেতাদের ভ্যানগাড়িতে ডাবের পাশাপাশি মিলছে রসাল কচি তালশাঁস। তীব্র গরমে তৃষ্ণা মেটাতে শহুরে মানুষের কাছে বেড়েছে এই তালশাঁসের কদর।
সুস্বাদু, আর কচি তালের শাঁসে জলীয় অংশ বেশি থাকায়, তা দেহের পানি শূন্যতা অনেকটাই পূরণ করে। এছাড়াও এই ফলটিতে ক্যালসিয়াম, শর্করাসহ নানা ধরনের পুষ্টিকর উপাদান থাকায় শরীরের চাহিদাও মিটছে তালশাঁসে।
কালের বিবর্তনে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার বিভিন্ন এলাকায় কমে গেছে তাল গাছের সংখ্যা। তবুও বর্তমানে অনেকেই তালের আঁটি রোপণ করে তাল গাছ ফিরিয়ে আনার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। এমনকি বজ্রপাত রোধে বিভিন্ন রাস্তার ধারে তালগাছ রোপণ করছে কৃষি অফিস ও বিভিন্ন সংস্থা।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ শহরের নিউ মার্কেট এলাকায় তালশাঁস বিক্রি করছিলেন জামাল উদ্দিন। তিনি চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার বড়পুকুরিয়া এলাকার বাসিন্দা। বছরের অন্যান্য সময় কৃষিকাজ করলেও এই সময়টাতে তিনি তালের শাঁস বিক্রি করেন। সদর উপজেলার বরেন্দ্র এলাকাতে তার বাড়ি হওয়ায় খুব সহজেই পেয়ে যান তাল গাছের খোঁজ।
জামাল উদ্দিন বলেন, একটি তাল থেকে দুই থেকে তিনটি শাঁস পাওয়া যায়। প্রতি পিস এখন ৫ থেকে ৬ টাকায় বিক্রি হয়। গ্রামে গ্রামে ঘুরে কচি তাল কিনে এনে বাজারে বিক্রি করি। তালের সংখ্যা ভেদে একটি গাছের দাম পড়ে ৫০০ থেকে হাজার টাকা পর্যন্ত। প্রতিদিন ৭০০ থেকে হাজার টাকার তালশাঁস বিক্রি করে লাভবান হচ্ছি। লাভের ওই টাকা দিয়ে আমার সংসার চলছে।
সদর উপজেলার বাসিন্দা রনি আহম্মেদ। তিনিও জেলা নির্বাচন অফিসের সামনে তালশাঁস বিক্রি করছেন। নির্বাচন অফিসে সেবা নিতে আসা গ্রহীতাসহ পথচারীরা তার কাছ থেকে শাঁস কিনছেন। জ্যৈষ্ঠে মাসের গরমে অস্থির মানুষগুলো সাময়িক সময়ের জন্য হলেও তালশাঁস খেয়ে স্বস্তির নিশ্বাস নিচ্ছেন।
তালের শাঁস বিক্রেতা রনি আহম্মেদ বলেন, কেউ একটু তরল, আবার কেউ একটু শক্ত শাঁস পছন্দ করেন। তবে অধিকাংশ মানুষ তরল ধরণের শাঁস পছন্দ করেন। প্রতিদিন ৩০ থেকে ৫০ কাঁদি (ছড়া) তাল বিক্রি হয়। তালের মৌসুম শুধু তাল বিক্রি করি, তবে বছরের অনান্য সময় বিভিন্ন কাজে জড়িত থাকি। গাছ থেকে তালের কাঁদি কেটে তা আবার নামানো, বাজারে বয়ে আনা, তারপর কাটাকুটি করে তবেই ক্রেতার হাতে দিতে হয়। কষ্ট হলেও বেশ লাভ হয়।
কচি তালের শাঁস খাওয়ার উপকারিতা জানতে চাইলে জেলা সিভিল সার্জন এসএম মাহমুদুর রশিদ বলেন, একটি তালের শাঁসে ৯২ শতাংশই জলীয় অংশ। এতে আছে ক্যালরি, শর্করা, ক্যালসিয়াম, খনিজ, ভিটামিন সি। সব বয়সী মানুষের এই তালের শাঁস খাওয়া উচিৎ বলে মনে করেন তিনি।
তিনি বলেন, বেশির ভাগ অংশ জলীয় হওয়ায় শরীরে পানির চাহিদা মেটাতে সক্ষম তালের শাঁস। যদি আবহাওয়ার কারণে দ্রুত শরীর থেকে পানি বের হয়ে যায় সেটিও পূরণ করতে পারে এই ফলটির শাঁস। তাছাড়া তালের শাঁস শরীরকে দ্রুত শীতল করে। অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ হওয়ায় শরীরের কোষের ক্ষয় প্রতিরোধ করে। শরীর থেকে বিষাক্ত পদার্থও বের করে দেয়। তবে কিছু কিছু মানুষের ঠান্ডার সমস্যা থাকতে পারে তাদের তালের শাঁস খাওয়ার ক্ষেত্রে সাবধান থাকা উচিত।
এদিকে, বজ্রপাত রোধে বিভিন্ন রাস্তার ধারে তালগাছ রোপণ করা হচ্ছে। কৃষি অফিস ও বিভিন্ন সংগঠনের আলাদাভাবে তালের গাছ রোপণ করে আসছে। এসব গাছের তাল পাকানোর জন্য সংরক্ষণ করা হচ্ছে, যাতে বীজ করা যায় বলে জানান চাঁপাইনবাবগঞ্জ কৃষিসম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক পলাশ সরকার।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।