আমাদের দেশের জাতীয় ফুল শাপলার দেখা মিলে বর্ষাকালে। সে সময় গ্রাম-গঞ্জের বিলে আর ঝিলে শাপলা উঁকি দেয়। পানিতে থাকা শাপলার সৌন্দর্য মুগ্ধ করে সবাইকে। বাংলাদেশের জাতীয় এই ফুলটি শুধু দেখতেই সুন্দর নয়, এই ফুলের ডাঁটা সবজি হিসেবে খাওয়ার প্রচলন রয়েছে অনেক আগে থেকেই। আবার পানি থেকে তুলে শাপলা ফুলের লম্বা ডাঁটা খাওয়া হয় সবজি হিসেবে। বাজারেও মিলে এই শাপলার ডাঁটা।
সহজলভ্য শাপলা ডাঁটা স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত উপকারী। প্রতি ১০০ গ্রাম শাপলা লতায় ১ দশমিক ৩ গ্রাম খনিজ পদার্থ, ১ দশমিক ১ গ্রাম আঁশ, ৩ দশমিক ১ গ্রাম ক্যালরি ও প্রোটিন, ৩১ দশমিক ৭ গ্রাম শর্করা, ৭৬ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম রয়েছে। এ ছাড়া ভিটামিন সি, ভিটামিন বি১, ভিটামিন বি৭, ফসফরাসও মেলে শাপলা ডাঁটায়। বলা হয়ে থাকে, আলুর চেয়েও সাত গুণ বেশি ক্যালসিয়াম রয়েছে শাপলা ডাঁটায়। এটি রান্না করাও বেশ সহজ, আর সময়ও লাগে বেশ কম। চলুন জেনে নিই শাপলা ডাঁটার স্বাস্থ্যে উপকারিতা এবং শাপলা ডাঁটার চচ্চড়ি রান্নার সহজ রেসিপি।
শাপলা ডাঁটায় থাকা খাদ্য উপাদানের উপকারিতা—
শরীরের কোষ গঠন, ক্ষয়পূরণের জন্য প্রোটিনের প্রয়োজন। শাপলা ডাঁটা থেকে প্রোটিন পাওয়া যায় যা শরীরের প্রয়োজনীয় কাজ সম্পাদন করে।
শাপলা ডাঁটাতে রয়েছে ভিটামিন সি। ভিটামিন সি শরীরের রোগের বিরুদ্ধে লড়াই করতে সাহায্য করে।
শাপলা ডাঁটাতে থাকা ভিটামিন বি১ শরীরের কার্বোহাইড্রেটকে শক্তি হিসেবে ব্যবহার করতে সাহায্য করে। এটি গ্লুকোজ বিপাকের জন্য প্রয়োজনীয়। শাপলা ডাঁটার পুষ্টি উপাদানগুলো ইনসুলিনের স্তর স্থিতিশীল রেখে রক্তে শর্করার পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে রাখে।
ভিটামিন বি৭ বা বায়োটিন একটি পানিতে দ্রবণীয় ভিটামিন। এটি শরীরের বিপাক এবং কার্যক্ষমতার উন্নতি ঘটায়। শাপলা ডাঁটা থেকে শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় এই বায়োটিন পাওয়া যায়।
শাপলা ডাঁটাতে রয়েছে একটি বিশেষ উপাদান ফ্লেভনল গ্লাইকোসাইট। এটি মাথার রক্ত সঞ্চালন স্বাভাবিক রাখে এবং মাথা ঠান্ডা রাখতে সহায়তা করে।
শাপলা ডাটার উপাদান সমূহ স্নায়ু, পেশী, হার্টের কার্যক্রমে ও হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
যকৃতের সুরক্ষায় ভূমিকা রাখে শাপলা ডাঁটা। এটি যকৃতের ক্ষতি প্রতিরোধ করে যকৃতকে সুস্থ রাখে।
শাপলা ডাঁটা খেলে ত্বক মসৃণ ও উজ্জ্বল হয়। এটি ত্বকের কোষ গুলোকে হাইড্রিয়েটিং এবং স্বাস্থ্যকর করে তোলে।
চুলের সৌন্দর্য বজায় রাখতেও ভূমিকা রাখে শাপলা ডাঁটা। নিয়মিত এ সবজি খেলে চুল হবে প্রাণবন্ত এবং মসৃণ।
শাপলাতে আছে গ্যালিক এসিড নামক এনজাইম, যা ক্যানসার প্রতিরোধে সহায়তা করে।
শাপলা ডাঁটাতে পর্যাপ্ত পরিমাণ ক্যালসিয়াম পাওয়া যায়। ক্যালসিয়াম হাড়, দাঁত মজবুতসহ নানাবিধ কাজ করে থাকে।
অ্যাসিডিটি, রক্ত আমাশয়, চুলকানি ইত্যাদি প্রকৃতির রোগ প্রতিরোধ হয় শাপলা ডাঁটা খেলে।
এক আঁটি শাপলার ডাঁটা আঁশ পরিষ্কার করে ছোট ছোট টুকরো করে নিন। তারপর এতে দুই টেবিল চামচ নারকেল বাটা, এক টেবিল চামচ সরিষা বাটা, তিন-চারটা কাঁচা মরিচ আর স্বাদ মতো লবণ দিয়ে দিন। হলুদ ও মরিচ গুঁড়া আধা চা-চামচ করে যোগ করুন।
চচ্চড়ির স্বাদ যদি আরেকটু বাড়াতে চাইলে আধা কাপ কুঁচো চিংড়ি যোগ করতে পারেন। এবার দুই টেবিল চামচ তেল দিয়ে সবগুলো উপকরণ ভালোভাবে মেখে চুলার আঁচ কমিয়ে চুলায় বসিয়ে দিন। শাপলার ডাটা থেকে পানি বের হবেই, তাই অতিরিক্ত পানি দিতে হবে না। পানি একদম শুকিয়ে এলে নামিয়ে গরম ভাতের সঙ্গে পরিবেশন করুন শাপলা ডাঁটার চচ্চড়ি।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।