জুমবাংলা ডেস্ক : তাইওয়ানের একটি স্কুলে ছেলেদের এবং মেয়েদের জন্য যে পোশাক নির্ধারিত, তার বাইরেও তারা যেতে পারে, এমন একটি জেন্ডার নিউট্রাল ইউনিফর্ম প্ল্যান করা হয়েছে। ছেলেদের ইউনিফর্ম ট্রাউজার আর শার্ট, মেয়েদের ইউনিফর্ম স্কার্ট আর শার্ট। কিছু ছেলে স্কার্ট পরতে চায়।ওদের আগ্রহ দেখে স্কুলটিতে নতুন নিয়ম আসছে, যার যে ইউনিফর্ম পরতে ইচ্ছে, সে সেটা পরতে পারবে। মেয়েরা চাইলে ছেলেদের ট্রাউজার পরতে পারবে, ছেলেরা চাইলে মেয়েদের স্কার্ট পরতে পারবে। মেয়েরা তো ট্রাউজার পরেই, তাতে কোনও অ’সুবিধে হচ্ছে না।কিন্তু অনেক ছেলেই দিব্যি স্কার্ট পরতে শুরু করেছে। আমি ওদের ছবি টুইটারে দিয়েছি। ও মা। কী’ ছি ছি শুরু হয়ে গেল। বমি করে দিচ্ছে কেউ কেউ। কেন, ছেলেরা স্কার্ট পরবে কেন? স্কার্ট তো মেয়েদের পোশাক। তাই বুঝি? ইতিহাস বলে, আবহমান কাল ধরে ছেলেরা স্কার্ট পরছে। প্রাচীন মিশর বা প্রাচীন গ্রীসের লোকেরা কী’ পরতো? স্কার্ট। স্কটল্যান্ডের পুরুষদের জাতীয় পোশাক হলো কিল্ট। ওটাও স্কার্ট। আলবেনিয়াতেও পুরুষেরা স্কার্ট পরতো। দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার লোকেরা স্কার্ট পরছে। ধুতি লুংগি সারং।
এসব তো স্কার্টই। শ্রীলংকা, বাংলাদেশ, ইন্দোনেশিয়া,মালয়েশিয়া, বার্মা, থাইল্যান্ড, মালদ্বীপ,ভারত — এসব দেশেও পুরুষেরা স্কার্ট পরে। কেরালা আর তামিল নাডুতে লম্বা স্কার্টগুলো ভাঁজ করে যখন পুরুষরা পরে, রীতিমত মিনিস্কার্ট। ওদের স্কার্টের নাম মুন্ডু। ওদিকে আফ্রিকায় পুরুষের স্কার্টের নাম কাঙ্গা, চিতেঞ্জে, কিকয়, লাপ্পা। মাদাগাস্কারে পুরুষদের স্কার্টের নাম লাম্বা, সামোয়য় নাম লাভালাভা, ফিজিতে ভাকাতাগা, জা’পানে হাকামা, ভুটানে ঘো। প্রাচীন চীনে পুরুষেরা যে স্কার্ট পরতো, তার নাম ছিল চাং।তাহলে কেন আমাদের উপমহাদেশের লোকেরা স্কুলের ছেলেদের স্কার্ট পরা মেনে নিতে পারে না? তবে কি এই কারণ যে স্কুলের ছেলেরা যদি স্কার্ট পরে, সেই স্কার্ট আর ছেলেদের পোশাক নয়, সেটা মেয়েদের পোশাক, সে কারণেই ছি ছি। কেরালার রাস্তায় যদি কোনও মেয়ে মুণ্ডু পরে হাঁটে, বা মুণ্ডু ভাঁজ করে পরে হাঁটে, তাকে কী’ রকম অ’পদস্ত হতে হবে, ভাবা যায়। পুরুষেরা স্কার্ট পরে ঠিকই, তবে সেটা যেন মেয়েদের স্কার্ট না হয়। আর মেয়েরা স্কার্ট পরুক, পুরুষের স্কার্ট যেন না পরে। কোনটা পুরুষের স্কার্ট , কোনটা মেয়েদের স্কার্ট –এটা পুরুষেরা নিজেদের মতো করে বুঝে নিয়েছে। মেয়েরা পুরুষের পোশাক পরলে জাত যায় না।
কিন্তু পুরুষেরা মেয়েদের পোশাক পরলে শুধু জাত নয় , অনেক কিছুই যায়। মান সম্মান নিয়ে বেঁচে থাকাই দুরূহ হয়ে ওঠে। মেয়েরা সমাজে নিচু শ্রেণীর। তাই তার পোশাক পরা মানে, অনেকের মতে, নিচুতে নেমে যাওয়া। ছেলেরা আর যেখানেই নামুক, মেয়েদের লেভেলে নামতে চায় না।পৃথিবীর সব স্কুলের ইউনিফর্ম এরকম জেন্ডার নিউট্রাল করে দিলে চমৎকার হয়। প্রথম প্রথম ছেলেদের স্কার্ট নিয়ে লোকের অস্বস্তি হবে, ধীরে ধীরে ও সয়ে যাবে। আমি বুঝি না, ছেলেরা শাড়ি পরে না কেন, শাড়ি এত সুন্দর পোশাক!
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।