জুমবাংলা ডেস্ক: বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদকে পিটিয়ে হত্যার দু’দিন পর বিক্ষুদ্ধ শিক্ষার্থীদের সামনে আসেন উপাচার্য অধ্যাপক সাইফুল ইসলাম।
সন্ধ্যা ৬টায় তিনি তার কার্যালয় থেকে বেরিয়ে এলে শিক্ষার্থীদের তোপের মুখে পড়েন। এ সময় শিক্ষার্থীরা তার কাছে জানতে চান, এত সময় ধরে তিনি কোথায় ছিলেন। এক পর্যায়ে তিনি মাইকে শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে কথা বলতে চান। কথার শুরুতেই তিনি বলেন, আবরারের মৃত্যু হয়েছে। তখন শিক্ষার্থীরা মৃত্যু নয় খুন হয়েছে বলে চিৎকার করতে থাকেন। এক পর্যায় তিনি বলেন, ঠিক আছে খুনই হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘ঘটনার পর থেকে আমি অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছি। সর্বোচ্চ ব্যবস্থা নিয়েছি। প্রেস বিজ্ঞপ্তি দিয়েছি। ৫-৬ জনকে নিয়ে বসেছি। সবতো আমার হাতে নেই, যেগুলো আমার হাতে আছে সেগুলো আমি করছি। আমি শিক্ষা-উপমন্ত্রীর সাথে তোমাদের দাবি-দাওয়া নিয়ে কথা বলেছি। তোমাদের দাবিগুলোর সঙ্গে নীতিগতভাবে আমরা একমত। তবে আমার হাতে সব ক্ষমতা নেই। ক্ষমতা অনুযায়ী তোমাদের দাবিগুলো মেনে নেবো।’
এ সময় আবরার হত্যায় জড়িতদের বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম অনুসারে বহিষ্কার করা হবে বলে জানান উপাচার্য অধ্যাপক সাইফুল ইসলাম।
এ সময় শিক্ষার্থীরা তাদের দাবির বিষয়ে সিন্ধান্ত না দিয়ে ভিসিকে ক্যাম্পাস না ছাড়ার দাবি জানান। এ সময় তিনি বলেন, ‘আমি তো কোনো অন্যায় করিনি’। তখন শিক্ষার্থীরা উপাচার্য অধ্যাপক সাইফুল ইসলাম উদ্দেশ্য করে ‘ভুয়া ভুয়া’ করে স্লোগান দেন। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত শিক্ষাথীরা ভিসির কার্যালয়ের সামনে অবস্থান করছেন।
শিক্ষার্থীদের দাবিগুলো ছিল- খুনিদের সর্বোচ্চ শাস্তি ও আজীবন বহিষ্কার করতে হবে, আবাসিক হলগুলোতে র্যাগিংয়ের নামে ও ভিন্নমত থামানোর নামে নির্যাতন বন্ধে প্রশাসনের সক্রিয় ভূমিকা নিশ্চিত করতে হবে, আগের ঘটনাগুলোর বিচার করতে হবে, আবরার ফাহাদের মামলার খরচ এবং তার পরিবারকে ব্যয় চালানোর মতো খরচ দিতে হবে, ভিসিকে বিকাল ৫টার মধ্যে ক্যাম্পাসে এসে জবাবদিহিতা করতে হবে এবং শেরে বাংলা হলের প্রভোস্টকে আগামী ১১ অক্টোবরের মধ্যে প্রত্যাহার করতে হবে।
আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা জানান, বিকাল ৫টার দিকে বুয়েটের নিজ কার্যালয়ে এসেছেন উপাচার্য। তারপর আধাঘণ্টা অপেক্ষা করা হয়। কিন্তু তিনি শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনার ব্যাপারে কোনও সিদ্ধান্ত না নেওয়ায় তার রুমে বাইরে থেকে তালা দেওয়া হয়।
মঙ্গলবার বিকাল ৫টার মধ্যে বুয়েট ক্যাম্পাসে উপস্থিত হয়ে উপাচার্যকে জবাবদিহিতার ব্যাপারে আল্টিমেটাম দিয়েছিল শিক্ষার্থীরা। সকালে এই আল্টিমেটাম দেওয়ার পর বিকাল ৪টার দিকে আন্দোলনকারীদের প্রতিনিধির সঙ্গে আলোচনা করতে ছাত্র কল্যাণ পরিষদের পরিচালক মিজানুর রহমানের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের কাছে প্রস্তাব পাঠান ভিসি। কিন্তু আন্দোলনকারীরা শুধু কয়েকজন প্রতিনিধির মাধ্যমে আলোচনার বিষয়টি প্রত্যাখ্যান করেন। তারা ভিসির সঙ্গে সরাসরি আলোচনা করতে চান।
ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দেওয়ার জের ধরে আবরার ফাহাদকে রবিবার (৬ অক্টোবর) রাতে ডেকে নিয়ে যায় বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতাকর্মী। এরপর রাত ৩টার দিকে শেরেবাংলা হলের নিচতলা ও দুইতলার সিঁড়ির করিডোর থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।
সোমবার দুপুর দেড়টার দিকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতাল মর্গে আবরারের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়। ফরেনসিক বিভাগের প্রধান ডা. সোহেল মাহমুদ লাশের ময়নাতদন্ত করেন। তিনি বলেন, ‘ছেলেটিকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে।’
এই ঘটনায় আবরারের বাবা বরকত উল্লাহ বাদী হয়ে ১৯ জনকে আসামি করে রাজধানীর চকবাজার থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। সন্ধ্যা পর্যন্ত ১১ জন ছাত্রলীগ নেতাকে আটক করেছে পুলিশ।
নি’হত আবরার বুয়েটের ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। তিনি শেরেবাংলা হলের ১০১১ নম্বর কক্ষে থাকতেন।
এই হত্যাকাণ্ডে সংশ্লিষ্টতার দায়ে ছাত্রলীগ থেকেও স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হয়েছে বুয়েট ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদকসহ ১১ নেতাকে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।