জুমবাংলা ডেস্ক : দুই বছরের জন্য বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালকের দায়িত্ব নিচ্ছেন নাট্যনির্দেশক ও শিক্ষক সৈয়দ জামিল আহমেদ। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে একটি প্রজ্ঞাপন জারি করেছে আজ (৯ সেপ্টেম্বর)।
সৈয়দ জামিল আহমেদের জন্ম ঢাকায় ১৯৫৫ সালের ৭ এপ্রিল। মাত্র ষোল বছর বয়সে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেয়া সৈয়দ জামিল আহমেদ, ১৯৭৮ সালে ভারতের ন্যাশনাল স্কুল অফ ড্রামার স্নাতক হন প্রথম শ্রেণিতে প্রথম হয়ে।একই বছরে তিনি ফিল্ম এন্ড টেলিভিশন ইন্সটিটিউট অফ ইন্ডিয়ার টেলিভিশন প্রডিউসারস ট্রেইনিং-এও প্রথম হন। অতুল মেধার স্বাক্ষর রেখে ১৯৮৯ সালে তিনি ইংল্যান্ডের ইউনিভার্সিটি অফ ওয়ারউইক থেকে থিয়েটার আর্টস এ স্নাতকোত্তর ডিগ্রী অর্জন করেন এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৯৭ সালে অর্জন করেন পিএইচডি ডিগ্রী।
ড. সৈয়দ জামিল আহমেদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের থিয়েটার এন্ড পারফর্মেন্স স্টাডিজ বিভাগের প্রতিষ্ঠাতা, তিরিশ বছরের বেশি সময় ধরে এ বিভাগেই শিক্ষকতা করেছেন। ইংরেজিতে প্রকাশিত তাঁর আলোচিত বইয়ের মধ্যে রয়েছে, অচিনপাখি ইনফিনিটি; ইনডিজেনাস থিয়েটার ইন বাংলাদেশ, ইন প্রেইজ অফ নিরঞ্জন; ইসলাম থিয়েটার, এন্ড বাংলাদেশ, রিডিং এগেইন্সট দ্যা ওরিয়েন্টালিস্ট গ্রেইন; পারফর্মেন্স এন্ড পলিটিকস এন্টুইনড উইথ আ বুদ্ধিস্ট স্ট্রেইন এবং এপ্লাইড থিয়েট্রিক্স; এসেস ইন রিফিউসাল। বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি, ইউপিএল ও এন্ডারসেনের মতো মর্যাদাপূর্ণ প্রকাশকরা প্রকাশ করেছে তাঁর বই। ষাটটিরও বেশি একাডেমিক প্রবন্ধ তাঁর প্রকাশিত হয়েছে মঞ্চনাটক, প্রায়োগিক মঞ্চনির্দেশনা, লোককথা ও সংস্কৃতি অধ্যয়নের ওপর। এসব প্রকাশিত হয়েছে বাংলা ইংরেজি ছাড়াও ফরাসী, নরওয়েজিয়ান, রাশিয়ান, চিনা ও কোরিয়ান ভাষায়।
সদা নবজ্ঞানসন্ধানে ব্রতী সৈয়দ জামিল আহমেদ নর্থ আমেরিকা, ইউরোপ, এশিয়া এবং আফ্রিকার নানা দেশে সেমিনারে বক্তৃতা করেছেন, সেমিনার ও কনফারেন্স পরিচালনা করেছেন। তার নির্দেশিত অনেকগুলো প্রযোজনা রয়েছে, যাদের বিস্তৃতি দেশ ছাড়িয়ে বিদেশেও কুড়িয়েছে সুনাম। ভারত পাকিস্তান এবং আমেরিকায় মঞ্চস্থ হয়েছে তাঁর প্রযোজনা, হয়েছে প্রশংসিত।
নির্দেশক হিসেবে সৈয়দ জামিল আহমেদের স্বাতন্ত্র্য আদতে চিহ্নিত করা যায় ঐতিহ্যবাহী বাংলা নাট্যের ভাষা ও এ অঞ্চলের আদিবাসী চরিত্রাবলীর আদান প্রদানের মধ্য দিয়ে, দৃশ্যরূপগত বহুরৈখিক বর্ণনামূলক প্রক্রিয়ায়, উত্তর নাটকীয় কাঠামোতে। তাঁর বিশটিরও বেশি নির্দেশিত নাটক এই কথাকেই সমর্থন করবে। এর মধ্যে রয়েছে, দেশে ও দেশের বাইরে করা সেলিম আল দীনের চাকা, মীর মশাররফ হোসেনের বিষাদসিন্ধু, পালাগান থেকে করা ‘কমলা রানীর সাগর দিঘী’, মনসা মঙ্গল থেকে ‘বেহুলার ভাসান’, সংযাত্রা থেকে সংভংচং, রবীঠাকুর অবলম্বনে শ্যামার উড়াল, কাশ্মিরী কবি আগা শহীদ খানের কাব্য অবলম্বনে ‘রিজওয়ান’, শহিদুল জহিরের উপন্যাস অবলম্বনে ‘জীবন ও রাজনৈতিক বাস্তবতা’ এবং সবশেষ সারাহ কেইনের ‘ফোর পয়েন্ট ফোর এইট সাইকোসিস’ অবলম্বনে ‘চার দশমিক চার আট, মন্ত্রাস’।
৭০টির বেশি মঞ্চ প্রযোজনার আলোক নির্দেশনা ও ৮০টিরও বেশি নাটকের মঞ্চপরিকল্পনা করেছেন সৈয়দ জামিল আহমেদ। দেশে বিদেশে অসংখ্যা কর্মশালা করিয়েছেন, একাধিক গবেষণার জন্য পেয়েছেন ফেলোশিপ। নিজের বিভাগ ছাড়াও দেশের বড় বড় নাট্যদলগুলোর জন্য প্রযোজনা নির্দেশনা দিয়েছেন, ২০১৮ সালের ১২ সেপ্টেম্বর তাঁর নেতৃত্বে গঠিত হয়েছে অলাভজনক ও পেশাদার নাট্যদল ‘স্পর্ধা; ইনডিপেনডেন্ট থিয়েটার কালেকটিভ’। এই দলটি এরই মধ্যে অনেকগুলো আলোচিত প্রযোজনা মঞ্চে এনেছে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।