জুমবাংলা ডেস্ক : নাটোরের বড়াইগ্রামে সুদ ব্যবসায়ীদের চাপে টাকা পরিশোধের জন্য ২২দিন বয়সী শিশু কন্যা চাঁদনী খাতুনকে বিক্রি করতে বাধ্য হয়েছেন বাবা। মাত্র ১ লাখ ১০ হাজার টাকায় শিশুটি বিক্রি হওয়ার পর সেই টাকা ভাগাভাগি করে নিয়েছেন সুদ ব্যবসায়ীরা।
এমন ঘটনা ঘটেছে নাটোরের বড়াইগ্রাম উপজেলার নগর ইউনিয়নের কয়েন গ্রামে। সোমবার (০১ মার্চ) সন্ধ্যায় ঘটনাটি প্রকাশ হলে এলাকায় তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে।
তবে শিশুটির পিতা ভ্যানচালক রেজাউল করিম তার শিশু কন্যাকে বিক্রি নয়, দত্তক দেওয়ার কথা স্বীকার করেছেন।
আর প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছে, শিশু কন্যাকে বিক্রির কথা। এ ঘটনায় পুলিশ সোমবার রাতে সুদ ব্যবসায়ী একই গ্রামের দুর্লভ প্রামাণিকের ছেলে আব্দুস সামাদ ও সানোয়ার হোসেনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় নিয়ে আসলে রাতেই জিজ্ঞাসাবাদ শেষে পুলিশ তাদের ছেড়ে দিয়েছে।
স্থানীয়রা জানান, কয়েক মাস আগে ভ্যানচালক রেজাউল করিম তার প্রতিবেশী সুদি কারবারী কালাম হোসেন এবং আব্দুস সামাদ ও তার ভাই সানোয়ার হোসেনের কাছ থেকে কিছু পরিমাণ টাকা ধার করেন। এর মধ্যে কিছু সুদ পরিশোধ করলেও চক্রবৃদ্ধি হারে বেড়ে তার ঋণের পরিমাণ ৮০ হাজার টাকায় দাঁড়ায়।
এসব টাকা পরিশোধের জন্য সুদ কারবারিরা চাপ দিয়ে আসছিল। এমনকি তার আয়ের একমাত্র উৎস একটি ভ্যান কয়েকদিন আগে কালাম হোসেন জোর করে নিয়ে নেয়। তারপরও টাকা পরিশোধের জন্য মহাজনরা চাপ দিলে এক পর্যায়ে রেজাউল তার ২২ দিন বয়সের শিশুকন্যাকে বিক্রির সিদ্ধান্ত নেন। কিন্তু স্ত্রী ফুলজান বেগম তাতে বাঁধা দেয়ায় রেজাউল ধারালো অস্ত্র দিয়ে ঘরের বেড়া কুপিয়ে কাটার পাশাপাশি নিজের পায়েও কোপ দেন।
একপর্যায়ে তিনি নিজেকে শেষ করে দেয়ার হুমকি দেন। এতে বাধ্য হয়ে তার স্ত্রী শিশুটিকে দিয়ে দিলে সুদ কারবারি আব্দুস সামাদের আত্মীয় পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলার সরাইকান্দি কারিগরপাড়ার মৃত মোভাক্ষর হোসেনের ছেলে রফিকুল ইসলামের কাছে এক লাখ ১০ হাজার টাকায় বিক্রি করেন। পরে আব্দুস সামাদসহ অন্যান্য সুদ কারবারিরা তাদের পাওনা টাকা ভাগাভাগি করে নেয়া পরে অবশিষ্ট টাকায় রেজাউল ইসলামকে একটি ভ্যান কিনে দেন।
প্রত্যক্ষদর্শী মশিউর রহমান বলেন, ভ্যান চলক রেজাউল ইসলাম সুদ ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে টাকা ধার নেয়। কিন্তু সময় মতো তা পরিশোধ করতে পারেনি। যার কারনে চক্রবৃদ্ধি হারে বাড়তে থাকে। সুদের টাকার জন্য কয়েকদিন যাবত মহাজনরা রেজাউলের বাড়িতে এসে হৈচৈ করছিল। পরে শুনেছি রেজাউল সুদ কারবারি আব্দুস সামাদের মাধ্যমে তার এক আত্মীর কাছে এক লাখ দশ হাজার টাকায় শিশুটিকে বিক্রি করে দেয়।
কয়েন বাজারের রিকশাভ্যান বিক্রেতা আফতাব উদ্দিন বলেন, সোমবার রেজাউলকে সঙ্গে করে আব্দুস সামাদ আমার কাছে এসে একটি ভ্যান কেনার জন্য ২৮ হাজার টাকা দিয়েছেন। রেজাউলের মেয়েকে বিক্রির টাকা থেকে এ টাকা দিয়েছে বলে শুনেছি।
এ ব্যাপারে রেজাউল করিমের স্ত্রীর কাছে জানতে চাইলে তিনি কোনো কথা বলতে রাজি হননি। তবে রেজাউল করিম তার শিশু সন্তানকে একজনকে দেয়ার বিষয়টি স্বীকার করলেও টাকা নেয়া হয়নি বলে দাবি করেন।
এব্যাপারে জেলা পুলিশ সুপার লিটন কুমার সাহা জানান, ঘটনাটি জানার পর স্থানীয় পুলিশ দুজন সুদ ব্যবসায়ী সহ পরিবারকে থানায় নিয়ে আসে। তাদের জিজ্ঞাসাবাদে শিশু কন্যাকে দত্তক দেওয়ার কথা জানান শিশুটির বাবা। এ সংক্রান্ত ষ্ট্যাম্পে একটি অঙ্গীকার নামা দেখানো হয়েছে। তবে ঘটনাটি অধিকতর তদন্ত করছে পুলিশ।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।