আরএম সেলিম শাহী : শেরপুরে পুনর্বাসন ছাড়াই দুই ভূমিহীন পরিবারকে বাড়ি ভাঙ্গার নোটিশ দিয়েছে সড়ক ও জনপদ বিভাগ। ফলে উচ্ছেদ আতঙ্কে ভুগছে সহায় সম্বলহীন ২ ভূমিহীন পরিবার। ঘটনাটি ঘটে শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলার নয়াবিল ইউনিয়নের আন্ধারুপাড়া গ্রামে।
জানা গেছে,ওই গ্রামের মরহুম আকবর আলীর ছেলে রফিকুল ইসলাম ও তার বোন সাজেদা বেগম আন্ধারুপাড়া মৌজায় ২০৩২ দাগে ৪০ শতাংশ জমি পৈত্রিক সূত্রে প্রাপ্ত হয়ে দীর্ঘ ৪ যুগ ধরে ঘরবাড়ি নির্মান করে বসবাস করে আসছেন। রফিকুল ইসলাম জানান, ১৯৬৬ সালে আরওআর রেকর্ডের মালিক কেন্তু রাম শিং এর কাছ থেকে জমিটি ক্রয় করেন। ১৯৮৮ সালে পিতার কাছ থেকে ক্রয়সুত্রে রফিকুল ইসলাম ও বোন সাজেদা বেগম মালিকানা লাভ করেন। এ বাড়িতেই পরিবার পরিজন নিয়ে বসবাস করে আসছেন রফিকুল ইসলাম ও তার বোন সাজেদা বেগম। উক্ত জমির খাজনা-খারিজও পরিশোধ রয়েছে হাল নাগাদ পর্যন্ত। এ অভিযোগ ভুক্তভোগী ওই দুই পরিবারের ।
২০১৫ সালে ওই বাড়ির সামন দিয়ে হাইওয়ে সড়ক নির্মাণ করে সড়কও জনপদ বিভাগের। এসময় পাঁচ শতাংশ জমি অধিকগ্রহণ করেন সরকার। অধিকগ্রহণকৃত জমির তৎকালীন বাজারমূল্য হিসেবে ৪৫ হাজার টাকাও পান পরিবার দুইটি। অবশিষ্ট জমির উপর নির্মিত বসতবাড়ি ছাড়া সহায় সম্বল বলতে আর কিছুই নেই পরিবার দুইটির।
ভুক্তভোগী পরিবারের পক্ষথেকে রফিকুল ইসলাম ও তার বোন সাজেদার খাতুন জানান, ২০২১ সালে উক্ত জমির উপর দিয়ে এক্সেল লোড নির্মাণ প্রকল্পের কাজ হাতে নেয় সরকার। এক্সেল লোড নির্মাণের জন্য এখানে ২৪ পরিবারের কাছ থেকে ৬ একর জমিও অধিকগ্রহণ করা হয়। কিন্তু আজও জমির মালিকদের অনেকেই জমির ন্যায্য মূল্য পাননি।
জানা গেছে, অধিকগ্রহণকৃত জমির মালিকদের কাগজপত্রে জটিলতার কারনে অধিকগ্রহণের টাকা থেকেও বঞ্চিত হন তারা। এ অভিযোগ ভুক্তভোগীদের। অনেকেই জমির মূল্য না পেলেও তাদের আবাদি জমি দখলে নিয়ে সড়ক ও জনপদ বিভাগ এক্সেল রোড নির্মাণ কাজ শুরু করেছেন কিন্তু রফিকুল ইসলাম ও তার বোন সাজেদা বেগমের ওই জমির বাড়িঘর থাকায় জমি ছেড়ে দেয়া সম্ভব হয়নি। তাদের ঘরবাড়ি ও গাছপালার ক্ষতিপূরণের টাকা দেয়া হলেও জমির মূল্য দেয়া হয়নি। তাদেরকে যে টাকা দেয়া হয়েছে তা দিয়ে জমি ক্রয় করে ঘরবাড়ি নির্মান করাও সম্ভব না বলে জানান।
প্রশাসনের পক্ষ খাস জমি বন্দোবস্ত দিয়ে তাদের পুনর্বাসনের আশ্বাস দেয়া হলেও আজও পরিবার দুইটির ভাগ্যে জোটেনি সরকারি জমি। জমির ন্যয্য মূল্য পাওয়ার দাবিতে রফিকুল ইসলাম ও সাজেদা বেগমসহ ভূক্তভোগী পরিবারের সদস্যরা শেরপুরের জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে অধিগ্রহন এলএ শাখায় একটি মিস কেস করেন। বর্তমানে তা চলমান রয়েছে।
কিন্তু মোকদ্দমাটি নিষ্পত্তি না হতেই এবং পরিবার দুইটি পুর্নবাসনের ব্যবস্থা না করে, ১২ মার্চ তাদেরকে বাড়ি ভেঙে ছেড়ে যাওয়ার নোটিশ প্রদান করে সড়ক ও জনপদ বিভাগ। নোটিশে বলা হয়েছে রফিকুল ইসলাম তাদের ঘরবাড়ি, গাছ পালাসহ সকল স্থাপনা সরিয়ে নেওয়া না হলে তা গুড়িয়ে দেওয়া হবে। এ নোটিশ পাওয়ার পর থেকে পরিবার দুইটি উচ্ছেদ আতঙ্কে ভুগছেন।
এ অবস্থায় পরিবার দুইটি কোথায় যাবেন কি করবেন এ নিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন পরিবার দুইটি। রফিকুল ইসলাম আরো বলেন, ২০১৫ সালে একই জমির অংশ থেকে ৫ শতাংশ জমি অধিগ্রহণ করে আমাদের টাকা দেয়া হলেও বর্তমানে একই জমি অধিগ্রহণ করে আমাদের টাকা দেয়া হচ্ছে না।
তিনি বলেন, আমাদের জমি অধিগ্রহণের টাকা দেয়া হউক। অথবা জমি দিয়ে পুনর্বাসন করা হউক। এব্যাপারে শেরপুর সড়ক ও জনপদ বিভাগের উপ বিভাগীয় প্রকৌশলী মো, রুহুল আমীন খানের সাথে কথা হলে তিনি বলেন, জমির মালিকদের দায়ের করা মোকদ্দমাটি জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের এলএ শাখায় চলমান রয়েছে। এখনও নিষ্পত্তি হয়নি। কিন্তু ওই দুই পরিবারকে তাদের স্থাপনা সরিয়ে নেয়ার জন্য নোটিশ দেয়া হয়েছে প্রয়োজনের তাগিদে। কারন ওই জমি ছেড়ে না দেয়ায় এক্সেল রুট নির্মাণ কাজে বাধা গ্রস্ত হচ্ছে। এক্সেল রুট নির্মাণ কাজের ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান কাজ ছেড়ে দিয়ে চলে যাবে বলে জানাচ্ছেন। এ কারনে ওই দুই পরিবারকে তাদের ঘরবাড়ি সরিয়ে নেয়ার জন্য নোটিশ দেয়া হয়েছে।
তিনি আরও বলেন অধিগ্রহণ শাখা জমি অধিগ্রহনের সকল কাগজপত্র আমাদের কাছে হস্তান্তর করেন। জমির মালিকগন অধিগ্রহণের টাকা পেয়েছেন কি না এ টা আমাদের জানার বিষয় নয়।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।