ওমর ফারুক হিমেল, জার্মানি: জার্মানির কোলন শহরের এহরেনফেল্ড এলাকায় অবস্থিত কেন্দ্রীয় মসজিদে আগামীকাল (শুক্রবার) থেকে শোনা যাবে জুমার আজান।
মাইকের মাধ্যমে এ মসজিদ থেকে জুমার নামাজের আজান দেয়া হবে। এক বছর আগেই জুমার আজান দেয়ার সিদ্ধান্তটি নিয়েছিলেন শহরের মেয়র হেনরিয়েট রেকার। তবে নানা বিতর্কের কারণে তা এতদিন আটকে ছিল।
বৃহস্পতিবার কোলন শহর কর্তৃপক্ষ ও জার্মানিতে বসবাসকারী তুরস্কের নাগরিকদের সংগঠন ‘দিতিব’-এর মধ্যে একটি সাধারণ চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে বলে জানিয়েছেন শহরের একজন মুখপাত্র। এর মধ্য দিয়ে মাইকে জুমার আজান দেয়ার বিষয়টি কার্যকর হয়েছে।
ওই মুখপাত্র আরও জানান, প্রতি শুক্রবার দুপুর ১২টা থেকে বেলা ৩টার মধ্যে সর্বোচ্চ ৫ মিনিট আজান দিতে পারবেন মুয়াজ্জিন। আজানের শব্দের মাত্রা ৬০ ডেসিবেলের মধ্যে সীমিত রাখতে হবে।
আনাদোলু এজেন্সির প্রতিবেদন অনুযায়ী, আপাতত আগামী দুই বছরের জন্য এ অনুমতি প্রযোজ্য থাকবে। শহরটির মুসলমানরা কর্তৃপক্ষের এ সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন।
তুর্কি-ইসলামিক ইউনিয়ন ফর রিলিজিয়াস অ্যাফেয়ার্সের (ডিআইটিআইবি) ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আবদুর রহমান আতাসয় বলেন, আগামী ১৪ অক্টোবর আমরা প্রথমবারের মতো লাউডস্পিকারের মাধ্যমে আজান দেব।
তিনি বলেন, অনেক প্রজন্ম ধরেই জার্মানিতে বসবাসরত মুসলিমরা সমাজের একটি স্বাভাবিক অংশ। আর জার্মানির সংবিধানে আগে থেকেই মুসলমানদের আজানের অধিকার দেয়া আছে।
মোশেফোরামের পরিচালক মুরাত সাহিনারসলান বলেন, গত বছরের নভেম্বরে শহর কর্তৃপক্ষের কাছে লাউডস্পিকারে আজান দেওয়ার জন্য আবেদন করা হয়েছিল। এর পরিপ্রেক্ষিতেই এ অনুমতি দেওয়া হয়েছে। তবে শর্ত দেয়া হয়েছে- প্রতি শুক্রবার দুপুর ১২টা থেকে বিকেল ৩টার মধ্যে মাইকে আজান দেয়া যাবে। আজান পাঁচ মিনিটের বেশি দীর্ঘ হতে পারবে না এবং প্রতিবেশীদের বিরক্তি এড়াতে একটি নির্দিষ্ট সীমার বেশি আওয়াজ হতে পারবে না।
প্রসঙ্গত, কোলনের অনেক মসজিদ আবেদন না করায় লাউডস্পিকার ব্যবহার করে আজান দেয়ার অনুমতি পায়নি। তবে উত্তর জার্মানির রেন্ডসবার্গ মসজিদে অনেক বছর ধরেই মাইকে আজান দেয়ার রেওয়াজ প্রচলিত আছে।
জার্মানির অভিবাসী ও শরণার্থীবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের দেয়া তথ্যানুযায়ী, এ মুহূর্তে দেশটিতে ৫০ লাখের বেশি মুসলমান বসবাস করছেন। দেশটির বিভিন্ন শহরে একাধিক মসজিদ রয়েছে। তবে সেখানে মাইক ব্যবহার করে আজান দেয়ার অনুমতি নেই।
কোলন শহর কর্তৃপক্ষের এ সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে তুরস্কের নাগরিকদের সংগঠন ‘দিতিব’। তাদের ভাষ্য, স্থানীয় অন্য ধর্মের মানুষদের আজান সম্পর্কে বোঝানোর জন্য লিফলেট বিলি করা হবে। এ ছাড়া ওই মসজিদে বৃহস্পতিবার বিকেলে একটি তথ্য প্রদান অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে।
জার্মানির আইন অনুযায়ী, দেশটিতে ধর্মীয় আচার অনুশীলনের স্বাধীনতা রয়েছে।
মাইকে আজানের সিদ্ধান্ত দেয়ার বিষয়ে মেয়র রেকার বলেছিলেন, তার এ উদ্যোগ আইনের ন্যায্যতা দিয়েছে। কোলন শহরে জন্ম নেয়া অনেক মুসলমান শহর ও সমাজের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ।
এদিকে মাইকে আজান দেয়ার বিষয়টিকে ‘রাজনীতিতে ইসলামের শক্তি প্রদর্শন’ বলে সমালোচনা করেছেন বার্লিনের ইসলামবিষয়ক বিশেষজ্ঞ আহমদ মনসুর।
তিনি মনে করেন, দিতিবের সাথে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়্যেব এরদোগানের যোগাযোগ রয়েছে। জার্মানি সফরকালে মসজিদটির উদ্বোধনও করেছিলেন এরদোগান।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।