জুমবাংলা ডেস্ক : অ্যাম্বুলেন্সের খোঁজে মা তানজিলা বাইরে ছোটাছুটি করছেন। আর হাসপাতালের বারান্দায় বাবার মরদেহ আগলে নিয়ে বসে আছে সাত বছরের শিশুকন্যা। শিশুটির সামনে স্ট্রেচারে রাখা বাবার নিথর দেহ। বাড়ি থেকে আসা ব্যাগপত্র নিয়ে মেঝেতে বসা সে। কাপড়-চোপড়ের সাথে বাবাকে বাতাস করার জন্য হাতপাখাটিও আনতে ভোলেনি। সেটিও আগলে রেখেছে। কিন্তু বাবা আর নেই! দু’চোখে ঝরছে পানি। কষ্টে নীল হয়ে গেছে ভেতরটাও। বাবার তীব্র শ্বাসকষ্ট আর যন্ত্রণা শুধু নীরবেই দেখে গেল সে।
সোমবার (৫ জুলাই) দুপুর ১২টার দিকে নওগাঁর পোরশা উপজেলা থেকে সর্দি জ্বর ও শ্বাসকষ্ট নিয়ে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এসেছিলেন মেয়েটির বাবা মুজিবুর রহমান। কিন্তু হাসপাতালে ভর্তির আগেই জরুরি বিভাগের সামনে মারা যান তিনি।
জানা যায়, এক সপ্তাহ আগে সর্দিকাশি হাওয়ায় বাড়িতে থেকে ওষুধ খাচ্ছিলেন। কিন্তু সমস্যা বাড়তে থাকে; দেখা দেয় শ্বাসকষ্টও। এরপরই হাসপাতালে আনা হয়েছিল তাকে। কিন্তু বাবাকে সুস্থ করে আর বাড়ি ফিরিয়ে নিয়ে যেতে পারল না শিশুটি। রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এ রকম বহু মৃত্যুর পেছনে আছে মানুষের বুকফাটা আর্তনাদ!
রাজশাহী মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ ডা. নওশাদ আলী বলেন, ‘এখনও রাজশাহীর অবস্থা খারাপের দিকে। আশপাশের বিভিন্ন উপজেলা থেকে প্রচুর রোগী আসছে। কমবেশি সবারই সর্দি-জ্বর ছিল।’
তিনি বলেন, ‘সবাই প্রথমে ভাবে সাধারণ নিয়মে ওষুধ খেলেই সেরে যাবে। কিন্তু তারা যে করোনায় আক্রান্ত হয়েছিলেন, সেটা খুব কম মানুষই ভাবে। ফলে যখন হাসপাতালে নিয়ে আসে তখন শারীরিক অবস্থা খারাপ থাকে। কোন কোন সময় আমরা টেস্ট করারও
সুযোগ পাচ্ছি না। মারা যাচ্ছে।’
জানা যায়, জুন মাসেই রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের করোনা ওয়ার্ডে ৪০৫ জন রোগীর মৃত্যু হয়েছে। আর চলতি মাসের প্রথম ছয়দিনেই মারা গেছে ১০১ জন। কয়েকদিন পর পরই করোনা ওয়ার্ডের পরিসর বাড়ানো হচ্ছে। সাধারণ
রোগীদের ছুটি দিয়ে ওয়ার্ড খালি করা হচ্ছে। এরপরও করোনার রোগীদের শয্যা দেয়া যাচ্ছে না। বর্তমানে ৪০৫ টি বেডের বিপরীতে হাসপাতালে ভর্তি আছেন ৫৮৯ জন। হাসপাতালে ২০টি আইসিইউ’র কোনোটিই খালি নেই। পড়ে আছে লম্বা সিরিয়াল।
রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম ইয়াজদানী জানান, গ্রামে বসবাস করায় করোনা সর্ম্পকে বেশিরভাগেরই ধারণা স্পষ্ট নয়। সে কারণে নমুনা পরীক্ষা বা চিকিৎসায় খুব বেশি আগ্রহী হন না। যখন অবস্থা সংকটাপন্ন হয় তখন হাসপাতালে আসেন। তখন অক্সিজেন ছাড়া কোনো উপায় থাকে না।
তিনি বলেন, আমরা সাধ্যমতো চেষ্টা করে যাচ্ছি চিকিৎসা দেওয়ার। কিন্তু সংক্রমণ কমানো না গেলে মৃত্যুহার কমানো যাবে না। এজন্য স্বাস্থ্যবিধি না মানার বিকল্প নেই।
জনস্বাস্থ্যবিদরা মনে করছেন, গ্রামে অল্পসংখ্যক করোনা পরীক্ষায় হওয়ায় মনে হচ্ছে আক্রান্তের হার কম। একই সাথে গ্রামের মানুষের মধ্যে চিকিৎসা পদ্ধতি ও করোনা নিয়ে ধারণা না থাকায় মৃত্যুর হার বেড়েছে। এক্ষেত্রে পরীক্ষার সংখ্যা বাড়ানো গেলে পরিস্থিতি সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা পাওয়া সম্ভব হতো। তবে হাসপাতালে ভর্তি রোগী ও মৃত্যু হার থেকে অনুমান করা হচ্ছে সংক্রমণ আগের চেয়েও দ্রুত গতি পেয়েছে।
জনস্বাস্থ্যবিদ ডা. চিন্ময় কান্তি দাস বলেন, ‘যেখানে হাতে গোনা টেস্ট, সেখানে কীভাবে বলা সম্ভব হয় সংক্রমণ কমছে। আগে টেস্ট বাড়াতে হবে। তারপর দেখতে হবে ধারাবাহিকভাবে সংক্রমণ কমছে কিনা। এ জন্য বেশি বেশি টেস্টের প্রয়োজন।’
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।