আন্তর্জাতিক ডেস্ক: দখলদার ইহুদিবাদী ইসরাইলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইয়ের লাপিদ দুদিনের রাষ্ট্রীয় সফরে সংযুক্ত আরব আমিরাতে গেছেন। এই সফরকালে তিনি আবুধাবিতে ইসরাইলি দূতাবাস এবং দুবাইয়ে কনস্যুলেট ভবন উদ্বোধন করেছেন। খবর পার্সটুডে’র।
পর্যবেক্ষকরা ইসরাইলের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সংযুক্ত আরব আমিরাত সম্পর্কে কয়েকটি দিক থেকে মূল্যায়ন করেছেন। প্রথমত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় ২০২০ সালের মার্চে আমিরাত ও দখলদার ইসরাইলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিকীকরণের বিষয়ে চুক্তি সইয়ের পর ইসরাইলের কোনো কর্মকর্তার এটাই প্রথম আনুষ্ঠানিক আমিরাত সফর।
দ্বিতীয় বিষয়টি হচ্ছে, ইয়ের লাপিদকে বহনকারী বিমানটি সৌদি আরবের আকাশসীমা ব্যবহার করে সংযুক্ত আরব আমিরাতে গেছে। এ থেকে বোঝা যায় দখলদার ইসরাইলের সঙ্গে অন্য আরব দেশগুলোর সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার উদ্যোগের প্রতি রিয়াদের পূর্ণ সমর্থন রয়েছে। কেননা সৌদি আরবও ইসরাইলের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনে খুবই আগ্রহী। আর এক্ষেত্রে নিজের পথ পরিষ্কার করার জন্য অন্য আরব দেশগুলোকে ইসরাইলের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপনের জন্য উৎসাহিত করছে যাতে ভবিষ্যতে তেলআবিবের সঙ্গে রিয়াদের সম্পর্ক স্থাপনের পথে আর কোনো বাধা না থাকে। ইসরাইলের সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু যিনি কিনা আরব দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপনের জন্য ব্যাপক চেষ্টা চালিয়েছেন তিনি গত মার্চে আমিরাত সফরে আসতে চেয়েছিলেন। কিন্তু জর্দান সরকার নেতানিয়াহুকে বহনকারী বিমান তাদের আকাশের উপর দিয়ে চলাচলের অনুমতি না দেয়ায় আমিরাত সফরের পরিকল্পনা বাতিল করেছিলেন নেতানিয়াহু।
তৃতীয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি হচ্ছে, হোয়াইট হাউসে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গে ইসরাইলের প্রেসিডেন্ট রবিন রিউলিনের সাক্ষাতের মাত্র একদিন পর ইসরাইলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী দূতাবাস উদ্বোধনের জন্য আমিরাত সফরে গেলেন। সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইসরাইলের সাথে আরব দেশগুলোর সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার প্রতি সমর্থন জানিয়ে বলেছিলেন, ‘সমগ্র পশ্চিম এশিয়াসহ আফ্রিকার দেশগুলোর সঙ্গে ইসরাইলের সম্পর্ক স্বাভাবিক করার উদ্যোগের প্রতি ওয়াশিংটনের পূর্ণ সমর্থন বজায় থাকবে।’ বর্তমান বাইডেন প্রশাসনও একই নীতি অনুসরণ করে যাচ্ছেন।
চতুর্থ বিষয়টি হচ্ছে, ইসরাইলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এমন সময় আমিরাত সফরে গেলেন যখন ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী নাফতালি বেন্ত দুই বছরের জন্য ক্ষমতায় থাকবেন। এই স্বল্প সময়ের মধ্যে তিনি একদিকে মার্কিন সমর্থন আদায় অন্যদিকে ইসরাইলের ভঙ্গুর ও দুর্বল মন্ত্রিসভার প্রতি আরব দেশগুলোর সমর্থন লাভের চেষ্টা করছেন যাতে সাম্প্রতিক এ যুদ্ধে ইসরাইলের বিভিন্ন শহরে ফিলিস্তিনের ইসলামী প্রতিরোধ সংগ্রামীদের ছোড়া মুহুর্মুহু ক্ষেপণাস্ত্র ও রকেট হামলায় নিজেদের ব্যর্থতাকে আড়াল করা যায় এবং ইসরাইলি মন্ত্রিসভাকে টিকিয়ে রাখা যায়। কেননা কোন কোন আরব দেশ এমন সময় দখলদার ইসরাইলের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপনের জন্য জোর কদমে এগিয়ে যাচ্ছে যখন সংগ্রামী ফিলিস্তিনিদের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় খোদ ইসরাইল অনিরাপদ হয়ে উঠেছে এবং সাম্প্রতিক যুদ্ধে সমগ্র ইসরাইল জুড়ে ব্যাপক আতঙ্ক তৈরি হয়েছিল। এমন এক অবস্থায় ইসরাইলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমিরাত সফরে গিয়ে ইসরাইলি নাগরিকদেরকে আশ্বস্ত করার চেষ্টা করেছেন।
পর্যবেক্ষকরা বলছেন বাহরাইন ও আমিরাতের মত দেশগুলো যারা কিনা ইসরাইলের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপনের চেষ্টা করলেও মিশর ও জর্দানের সঙ্গে ইসরাইলের অতীত সম্পর্কের অভিজ্ঞতার আলোকে বলা যায় এভাবে তারা নিজেদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারবেনা।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।