জুমবাংলা ডেস্ক : বাংলাদেশিদের জন্য আবারও উজ্জ্বল এক আশার আলো নিয়ে এসেছে সংযুক্ত আরব আমিরাত। দীর্ঘদিন নানা ধরনের বিধিনিষেধ ও জটিলতার পর, এবার দেশটির পক্ষ থেকে বাংলাদেশিদের জন্য সীমিত পরিসরে পুনরায় ভিজিট (ভ্রমণ) ভিসা চালুর ঘোষণা এসেছে। এটি নিঃসন্দেহে এমন এক খুশির খবর যা বহু প্রবাসী ও সম্ভাব্য যাত্রীদের অপেক্ষার অবসান ঘটিয়েছে। সংযুক্ত আরব আমিরাত ভিসা এখন প্রতিদিন গড়ে ৩০ থেকে ৫০ জন বাংলাদেশিকে দেওয়া হচ্ছে বলে জানানো হয়েছে ঢাকায় নিযুক্ত দেশটির রাষ্ট্রদূতের পক্ষ থেকে। এটি শুধু একটি ভিসা প্রক্রিয়ার খবর নয়, বরং বাংলাদেশ ও ইউএইর মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্কের আরেকটি মাইলফলক।
Table of Contents
সংযুক্ত আরব আমিরাত ভিসা চালু: বাংলাদেশিদের জন্য বড় সুযোগ
সংযুক্ত আরব আমিরাত ভিসা ইস্যু প্রক্রিয়ায় যে অগ্রগতি এসেছে, তা দীর্ঘদিন ধরে চলা অনিশ্চয়তার ইতি টেনেছে। ইউএইতে বসবাসরত প্রবাসী বাংলাদেশি পরিবারগুলো যেমন স্বজনদের পুনরায় কাছে পাওয়ার সুযোগ পাচ্ছে, তেমনি নতুন করে ব্যবসা, পর্যটন ও কর্মসংস্থান সংশ্লিষ্ট নানা সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন হয়েছে। ঢাকাস্থ সংযুক্ত আরব আমিরাত দূতাবাস প্রতিদিন গড়ে ৩০ থেকে ৫০টি ভিজিট ভিসা ইস্যু করছে, যা আগের যেকোনো সময়ের তুলনায় উল্লেখযোগ্য উন্নয়ন।
রাষ্ট্রদূত আবদুল্লাহ আলী আল হামুদি নিজেই জানিয়েছেন, এই উদ্যোগ দুই দেশের পারস্পরিক সহযোগিতা এবং যোগাযোগ বৃদ্ধির অংশ। বিশেষ করে সাম্প্রতিক সময়ে প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ দূত লুৎফে সিদ্দিকীর সক্রিয় ভূমিকা ও ইউএই সরকারের সঙ্গে তার ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ এই অগ্রগতিকে তরান্বিত করেছে।
ভিজিট ভিসার পাশাপাশি, ইউএই সরকারের মানবসম্পদ মন্ত্রণালয় এখন দক্ষ কর্মী নিয়োগেও জোর দিচ্ছে। হোটেল কর্মী, নিরাপত্তারক্ষী এবং মার্কেটিং ম্যানেজার পদের জন্য ইতিমধ্যে শত শত বাংলাদেশিকে ভিসা দেওয়া হয়েছে। ইউএইতে যে ৫০০ নিরাপত্তাকর্মী ইতিমধ্যে গেছেন, তাদের সফল প্রেরণ আরও ১,০০০ নতুন ভিসা অনুমোদনে সহায়তা করেছে।
ব্যবসায়ী প্রতিনিধি এবং বাল্ক ভিসার গুরুত্ব
বাংলাদেশ থেকে বাণিজ্যিক প্রতিনিধি দলগুলোর জন্য বাল্ক ভিসা প্রক্রিয়া দ্রুত করা হয়েছে। এতে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যিক সম্পর্ক যেমন জোরদার হচ্ছে, তেমনি বাংলাদেশি ব্যবসায়ীরা ইউএইর সঙ্গে নানা ধরনের বাণিজ্যিক ও বিনিয়োগ চুক্তিতে আরও সরাসরি অংশ নিতে পারছেন।
দূতাবাসের পক্ষ থেকে নিশ্চিত করা হয়েছে যে, বাংলাদেশি ব্যবসায়ী ও বিনিয়োগকারীদের জন্য আলাদাভাবে ভিসা আবেদন প্রক্রিয়া সহজ করা হয়েছে। বিশেষ করে যারা আগেই ইউএইতে ব্যবসা করেছেন বা আগ্রহী, তাদের জন্য এই প্রক্রিয়া অনেক সহজ ও দ্রুত হয়েছে।
এই উদ্যোগ শুধুমাত্র ভ্রমণ বা কর্মসংস্থানের নয়, বরং দুই দেশের জনগণের মধ্যে বাস্তবিক সংযোগ ও বন্ধনের প্রতীক। ঢাকার ইউএই দূতাবাস এখন পুরো প্রক্রিয়াকে আরও স্বচ্ছ ও সিস্টেমেটিক করার দিকে অগ্রসর হচ্ছে।
দক্ষ কর্মসংস্থান ভিসায় নতুন দিগন্ত
ইতিমধ্যে সংযুক্ত আরব আমিরাত তাদের অনলাইন ভিসা সিস্টেমকে পুনরায় চালু করেছে দক্ষ কর্মীদের জন্য। এতে হোটেল ম্যানেজার, বিপণন ব্যবস্থাপক, হাউজকিপার, রন্ধনশিল্পী, নিরাপত্তারক্ষী, কনস্ট্রাকশন ওয়ার্কার এবং টেকনিক্যাল কর্মীদের জন্য আবেদন করার সুযোগ তৈরি হয়েছে। বাংলাদেশ থেকে এসব খাতে অভিজ্ঞ পেশাজীবীরা সহজেই আবেদন করে ইউএইতে কাজের সুযোগ পেতে পারেন।
বিশেষত ইউএইর “হিউম্যান রিসোর্স মিনিস্ট্রি”-এর এই উদ্যোগ পেশাদার কর্মীদের জন্য একটি নির্ভরযোগ্য পথ উন্মুক্ত করেছে। এতে যেমন বৈধ উপায়ে বিদেশে কর্মসংস্থানের সুযোগ বাড়ছে, তেমনি বাংলাদেশ সরকারও বৈদেশিক রেমিট্যান্স অর্জনে সুবিধা পাচ্ছে।
এই উন্নয়নের সঙ্গে তাল মিলিয়ে ইউএইর বাজারে বর্তমানে যেসব দক্ষ কর্মীর চাহিদা রয়েছে, তার মধ্যে রয়েছে:
হোটেল ও হসপিটালিটি স্টাফ
নিরাপত্তারক্ষী (Security Guard)
টেকনিশিয়ান ও নির্মাণ শ্রমিক
বিপণন ও বিক্রয় কর্মী
চালক ও লজিস্টিক স্টাফ
এছাড়াও ইউএই সরকার চাচ্ছে দীর্ঘমেয়াদে বাংলাদেশ থেকে আরো বেশি সংখ্যক দক্ষ কর্মীকে ভিসা দিতে। তাই এখন থেকেই দক্ষতা উন্নয়ন প্রশিক্ষণ ও সনদপত্র সংগ্রহে আগ্রহী হওয়াটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
মানবিক ও বিশেষ বিবেচনায় ভিসা সহজীকরণ
রাষ্ট্রদূত আরও জানিয়েছেন যে, বাংলাদেশি কর্তৃপক্ষ কর্তৃক চিহ্নিত বিশেষ মানবিক ও সহানুভূতিশীল মামলাগুলোতে ইউএই সরকার নমনীয়তা প্রদর্শন করছে। এটি এমন এক গুরুত্বপূর্ণ বার্তা যা বোঝায়—ভবিষ্যতে বিশেষ প্রয়োজনে অনেকেই সাহায্য পাবেন।
বিশেষ করে পারিবারিক পুনর্মিলন, অসুস্থ স্বজনের পাশে থাকা বা বিশেষ প্রয়োজনে বিদেশ ভ্রমণের ক্ষেত্রে এই ভিসা নমনীয়তা ভুক্তভোগীদের অনেকটাই স্বস্তি দেবে। এই মানবিক সুবিধাগুলো দীর্ঘমেয়াদে ইউএই-বাংলাদেশ কূটনৈতিক সম্পর্ক আরও মজবুত করবে।
সম্ভাব্য সিইপিএ চুক্তি: অর্থনৈতিক সহযোগিতায় নতুন অধ্যায়
প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ দূত লুৎফে সিদ্দিকী রাষ্ট্রদূতের কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন একটি বিস্তৃত অর্থনৈতিক অংশীদারিত্ব চুক্তি (সিইপিএ) আলোচনার প্রসঙ্গে। এই চুক্তি কার্যকর হলে দুই দেশের মধ্যে শুল্ক, বাণিজ্য, বিনিয়োগ, কর্মসংস্থান, প্রযুক্তি আদান-প্রদানসহ নানা ক্ষেত্রে এক বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসবে।
আগামী মাসেই একটি উচ্চপর্যায়ের ইউএই প্রতিনিধি দল বাংলাদেশ সফর করবে—এটাও সেই অংশীদারিত্বের পথ সুগম করার একটি বড় পদক্ষেপ।
ইউএই ভিসা সংক্রান্ত আরও তথ্য ও সহায়তা
প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় এবং ইউএই দূতাবাসের যৌথ উদ্যোগে এখন একটি হেল্পডেস্কও চালু রয়েছে। বাংলাদেশিরা সেখান থেকে ভিসা, কাজ, আবাসন, অধিকার ও সুরক্ষা সংক্রান্ত বিস্তারিত তথ্য জানতে পারছেন।
সংযুক্ত আরব আমিরাত ভিসা এখন বাংলাদেশের জন্য এক নতুন সম্ভাবনার দুয়ার উন্মোচন করেছে। এটি শুধু একটি প্রশাসনিক উন্নয়ন নয়, বরং দুই দেশের সম্পর্কের একটি নতুন দিগন্ত যা ব্যক্তিগত, পেশাগত ও অর্থনৈতিকভাবে উভয় পক্ষকে লাভবান করবে।
রাজশাহীতে বনলতা এক্সপ্রেসের বগি লাইনচ্যুত: ঢাকাগামী ট্রেন দুর্ঘটনা
🤔 FAQs Section (প্রশ্নোত্তর)
১. এখন কি বাংলাদেশিরা ইউএই ভিজিট ভিসা পাচ্ছেন?
হ্যাঁ, ইউএই এখন প্রতিদিন গড়ে ৩০–৫০টি ভিজিট ভিসা বাংলাদেশিদের ইস্যু করছে।
২. কোন পেশার বাংলাদেশিদের জন্য ইউএই ভিসা সহজ হয়েছে?
হোটেল কর্মী, নিরাপত্তারক্ষী, মার্কেটিং ম্যানেজার এবং নির্মাণ শ্রমিকদের জন্য ভিসা প্রক্রিয়া সহজ করা হয়েছে।
৩. ব্যবসায়ী প্রতিনিধি দলের জন্য কী সুবিধা আছে?
বাল্ক ভিসা প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করা হয়েছে, যাতে ব্যবসায়ীরা দ্রুত ইউএই ভ্রমণ ও চুক্তি করতে পারেন।
৪. মানবিক বিবেচনায় ভিসা কতটা সহজ হচ্ছে?
বিশেষ প্রয়োজনে যেমন অসুস্থ স্বজনের পাশে থাকার জন্য বা পারিবারিক পুনর্মিলনের ক্ষেত্রে ভিসা নমনীয়তা দেওয়া হচ্ছে।
৫. ইউএইতে কাজ করতে কীভাবে আবেদন করব?
সরকার অনুমোদিত রিক্রুটিং এজেন্সি বা দূতাবাসের মাধ্যমে আবেদন করা সবচেয়ে নিরাপদ পদ্ধতি।
৬. সিইপিএ চুক্তি কীভাবে বাংলাদেশিদের উপকারে আসবে?
এটি দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য ও বিনিয়োগে ব্যাপক সুযোগ সৃষ্টি করবে, যার ফলে কর্মসংস্থান ও অর্থনৈতিক উন্নয়ন হবে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।