বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ডেস্ক : এটা প্রযুক্তির যুগ। এখনকার মানুষ চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের যুগে বাস করে। প্রতিদিনই বিচিত্র সব প্রযুক্তির সান্নিধ্যে কাটাতে হয় মানুষকে। আর এসব প্রযুক্তির একটি বড় অংশের সাথেই যুক্ত সফটওয়্যার, যাকে ধরা যায় না, ছোঁয়া যায় না, কিন্তু যা আদতে প্রাণভোমরা হিসেবে কাজ করে।
প্রযুক্তিকেন্দ্রিক শিল্পের সাথে তাই অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িয়ে থাকেন এই সফটওয়্যার নির্মাতারা, যাদের বলা হয় সফটওয়্যার ডেভেলপার। মুশকিল হলো নিত্যই বহু প্রযুক্তি ব্যবহারে অভ্যস্ত হলেও এই সফটওয়্যার ডেভেলপারদের নিয়ে নানা প্রতিষ্ঠানের কর্তাব্যক্তিদের মধ্যেই রয়েছে ভুল ধারণা। এটি অবশ্য জনপরিসরে বিদ্যমান ধারণার কারণেই ঘটে, যার কিছু কিছু এমনকি খোদ সফটওয়্যার নির্মাতাদের মধ্যেও থাকে। কী সেই সব ভুর ধারণা? চলুন জেনে নেওয়া যাক–
সেরা প্রোগামিং ল্যাঙ্গুয়েজ
পৃথিবীতে সেরা বলে কিছু হয় না। এই কথাটি সফটওয়্যার লেঙ্গুয়েজের ক্ষেত্রেও সত্য। কিন্তু বহু ডেভেলপারকেই দেখা যায় বিশেষ কোনো প্রোগ্রামিং ভাষার প্রতিই দুর্বলতা ও পক্ষপাত প্রদর্শন করতে। এই সময়ে যেমন, পাইথনের জয়জয়কার। কিন্তু সি++ কম নয় কোনোমতেই।
সত্যটা হচ্ছে–প্রতিটি প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজের জন্ম হয়েছে বিশেষ প্রয়োজন থেকেই। ফলে একেকটি প্রোগ্রামিং ভাষা একেকটি কাজে বেশি দক্ষ। ফলে কোনো একটি ভাষা থেকে অন্য একটি ভাষা সেরা–এটি বলার কোনো সুযোগ নেই। এটি মূলত নির্ভর করে কাজের ওপর। কোন উদ্দেশ্যে কোন ভাষাটি ব্যবহার করা হবে–তা নির্ণয় করাটাই মুখ্য।
বেশি ডেভেলপার মানেই বেশি অগ্রগতি নয়
সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্টের সবচেয়ে জটিল ধাপটি হচ্ছে পরিকল্পনা। যদি একটি প্রজেক্ট যথাযথভাবে পরিকল্পনা করা না হয়, তাহলে হাজার প্রোগ্রামার নিযুক্ত করেও তা থেকে ভালো ফল পাওয়া সম্ভব নয়।
মনে রাখা জরুরি যে, সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট বা তৈরি করাটা সাবান বা এ ধরনের কোনো পণ্য উৎপাদনের মতো কোনো বিষয় নয়। ফলে অধিক জনবল মানেই সুফল বয়ে আনা নয় বা বেশি বেশি উৎপাদন নয়। এ ক্ষেত্রে সঠিক পরিকল্পনা মতো পর্যাপ্ত জনবল নিয়োগই মুখ্য বিষয়। এ কাজটি শুরুতেই করতে হয়। একটি প্রজেক্ট শুরু করে পরে তার সাথে একজন একজন করে প্রোগ্রামার নিয়োগ সময়ের অপব্যয় বাড়াতে পারে।
ডেভেলপারকে অফিসেই আনতে হবে
অনেকেই মনে করেন ডেভেলপারকে কাছেপিঠে রেখে কাজ করাতে হবে, যাতে কেউ ফাঁকি না দেয়। অনেকটা সাবেকী ধাঁচের নিয়ন্ত্রণমূলক কর্মপরিবেশের চর্চার কারণেই এ ধারণা এখনো রয়ে গেছে। চমৎকার ব্যবস্থাপনা ও আধুনিক যোগাযোগ ব্যবস্থা থাকলে এর কোনো প্রয়োজনই নেই।
উদাহরণ হিসেবে সিলিকন ভ্যালির বহু আলোড়ন তোলা স্টার্টআপের কথা বলা যাবে, যাদের রিমোট ডেভেলপাররা অফিস ডেভেলপারদের চেয়ে এগিয়ে ছিল। ওয়েব ও মোবাইল অ্যাপ ডেভেলপাররা ছড়িয়ে আছে গোটা পৃথিবীতে। বাংলাদেশের বহু তরুণ বিদেশের কোম্পানিতে রিমোট ওয়ার্ক করছেন।
প্রোগ্রামিং একটি কাঠামোবদ্ধ বিষয়
এ ধারণার পুরোটাই গলদে পরিপূর্ণ। আগেই বলা হয়েছে সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট আর আর পণ্য উৎপাদনের মতো কোনো বিষয় নয়। সঠিক পরিকল্পনা থাকলে নানাভাবেই কাজটি করা যায়। কিন্তু কখনো কখনো এমনও দেখা যায় যে, পরিকল্পনা অনুযায়ী সবকিছু এগোচ্ছে না। তখন বদল আনতে হয়।
মোদ্দা কথা হচ্ছে যে সফটওয়্যার যত সৃজনশীল, তার নির্মাণের পদ্ধতিতেও তত সৃজনশীলতা প্রয়োজন। হয়তো শুরুতে একভাবে ভাবা হলো, পরে দেখা গেল অন্য পন্থায় সহজে কাজটি হয়ে যাচ্ছে। সে ক্ষেত্রে ওই সহজ পদ্ধতি অনুসরণ না করাটা মুর্খামি ছাড়া আর কিছু নয়।
প্রোগ্রামার মানেই পাগলাটে
জনপরিসরে একটা ধারণা আছে যে, প্রোগ্রামার মানেই যেন পাগলাটে একটা কিছু থাকবে। কিন্তু এটি অতি সরলীকরণের দোষে দুষ্ট। প্রোগ্রামিং বিষয়টি যেমন অনেকভাবে করা যায়, তেমনি প্রোগ্রামাররাও অনেক রকম হয়।
এ ধরনের ধারণা ছড়িয়ে পড়ার পেছনে কারণ হচ্ছে হলিউডি সিনেমা। বহু জনপ্রিয় সিনেমাতেই প্রোগ্রামার বলতে একটু পাগলাটে ধাঁচের তরুণ–যুবাদের উপস্থাপন করা হয়েছে। এই চল এখনো আছে। সত্য হচ্ছে–দেখতে বা আচরণে পাগলাটে হোক বা না হোক, বুদ্ধি ও সৃজনশীলতা রয়েছে এমন যে কেউ সংশ্লিষ্ট প্রোগ্রামিং ভাষা জেনে প্রোগ্রাম তৈরি করতে পারে।
অঙ্কে ভালো হতেই হবে
এটি আরেকটি ভুল ধারণা। এটি এতটাই জনপ্রিয় একটি ধারণা যে, অনেককে হাতা গুটিয়ে তর্কও করতে দেখা যায়। ফল হচ্ছে, অনেক সম্ভাবনাময় শুধু অঙ্কে কিছুটা দুর্বল হওয়ার কারণেই হয়তো নিজে থেকেই এই পথে হাঁটতে চান না।
এটা ঠিক যে, বিশ্বের বহু বড় প্রোগ্রামার অঙ্কে ভালো ছিলেন এবং আছেন। কিন্তু অঙ্কে আহামরি কিছু না হয়েও প্রোগ্রামিংয়ের দিকে এগোনো যেতে পারে। যুক্তি ও ভাষা দক্ষতাই এখানে মুখ্য বিষয়। অঙ্কে ভালো হওয়াটা এ ক্ষেত্রে সহায়ক হতে পারে। এর চেয়ে বেশি কিছু নয়।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।