জুমবাংলা ডেস্ক : ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে পতন হয়েছে শেখ হাসিনা সরকারের। দলটির নেতা-কর্মীদের পাশাপাশি এরপর থেকে সারা দেশে বেকায়দায় আছেন পুলিশ ও প্রশাসনের বড় কর্মকর্তারা। পুলিশে এরই মধ্যে বড় রদবদল হয়েছে। প্রশাসনেও রদবদল চলছে। এর অংশ হিসেবে এবার সারা দেশ থেকে সব জেলা প্রশাসকদের (ডিসি) প্রত্যাহার করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। আজ মঙ্গলবারের মধ্যে এ বিষয়ে ঘোষণা আসতে পারে।
জানতে চাইলে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (জেলা ও মাঠ প্রশাসন) মো. হামিদুল হক গতকাল নিজ দপ্তরে গণমাধ্যমকে বলেন, ‘ডিসিদের কেউ কেউ কিছু সমস্যার বিষয় আমাদের অবহিত করেছেন। সেগুলো নিয়ে কাজ চলছে, শিগগির দৃশ্যমান হবে।’
ডিসিদের প্রত্যাহারের সিদ্ধান্তের পাশাপাশি বিদ্যমান জেলা প্রশাসক পদায়ন নীতিমালা এবং আগের তৈরি ডিসি ফিলিং বাতিল করা হয়েছে। বিসিএস ২৪, ২৫ ও ২৭ ব্যাচের কর্মকর্তাদের মধ্য থেকে নতুন ডিসি দু-এক দিনের মধ্যেই নিয়োগ দেওয়া হবে বলে জানা গেছে।
নতুন ডিসিদের নিয়োগের মানদণ্ড হবে মেধা, দক্ষতা ও সততা। এই মানদণ্ড নির্ধারণে সরকারকে সহযোগিতা দিতে বিগত সরকারের আমলে বঞ্চিত ওই তিন ব্যাচের ৫ কর্মকর্তাকে সমন্বয়ক করা হয়েছে। তাঁরা হলেন বিসিএস ২৪ ব্যাচের নুরজাহান খানম ও নজরুল ইসলাম, ২৫ ব্যাচের নুরুল করিম ভুইয়া ও ফরিদা খানম এবং ২৭ ব্যাচের সারোয়ার আলম।
ডিসিদের প্রত্যাহার এবং নতুন ডিসিদের নিয়োগ নিয়ে গতকাল সোমবার রাতে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেনের কক্ষে এই পাঁচ সমন্বয়কের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে তাঁদের উল্লিখিত সিদ্ধান্ত জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব। এ সময় উপস্থিত ছিলেন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মোহাম্মদ মেজবাহ উদ্দিন চৌধুরী, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব ড. মোহাম্মদ আবদুল মোমেন, অর্থসচিব ড. খায়েরুজ্জামান মজুমদারসহ এসএসবির একাধিক সদস্য।
এ সময় তাঁরা জানান, সরকার বিদ্যমান জেলা প্রশাসক পদায়ন নীতিমালা, ২০২২ এবং আগের তৈরি ডিসি ফিলিং বাতিল করেছে। মঙ্গলবারের মধ্যে সব জেলা প্রশাসকদের প্রত্যাহার করা হবে। বিসিএস ২৪, ২৫ ও ২৭ ব্যাচের কর্মকর্তাদের মধ্য থেকে নতুন ডিসিদের দু-এক দিনের মধ্যেই নিয়োগ দেওয়া হবে। এ কাজে এই পাঁচ সমন্বয়ক সরকারকে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা দেবেন। তবে উল্লিখিত বিষয়ে নাম প্রকাশ করে কথা বলতে রাজি হননি দায়িত্বশীল কোনো কর্মকর্তা।
এর আগে গতকাল বিকেলে আগের তৈরি করা ডিসি ফিলিং থেকে কোনো কর্মকর্তাকে নতুন ডিসি হিসেবে নিয়োগ দেওয়া যাবে না বলে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সচিবের দপ্তরে প্রতিবাদ করেন শেখ হাসিনা সরকারের আমলে বঞ্চিত কর্মকর্তারা। তাঁরা জনপ্রশাসনসচিব ও এপিডি অনুবিভাগের কর্মকর্তাদের কাছে বিদ্যমান জেলা প্রশাসক পদায়ন নীতিমালা এবং আগের তৈরি ডিসি ফিলিং বাতিলের দাবি জানান। এ সময় তিন ব্যাচের ৫ কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলেন জনপ্রশাসনসচিব। এরপরই বিষয়টি প্রধান উপদেষ্টাসহ সংশ্লিষ্টদের অবহিত করেন। সরকারের শীর্ষ মহলের সম্মতি পাওয়ার পরই এই ৫ সমন্বয়কের সঙ্গে বৈঠক করেন মন্ত্রিপরিষদ সচিবসহ সংশ্লিষ্টরা।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক কর্মকর্তা জানান, আগামী বৃহস্পতিবারের মধ্যে ডিসিদের ঢাকায় ফেরত আসার সার্বিক প্রস্তুতি রাখতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। গতকাল বিকেলে ডিসি হতে ইচ্ছুক প্রশাসনের কর্মকর্তাদের মৌখিক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সদ্য পদোন্নতি পাওয়া উপসচিবসহ বিসিএস ২৪, ২৫ ও ২৭ ব্যাচের কর্মকর্তাদের মধ্য থেকে নতুন ডিসিদের নিয়োগ দেওয়া হবে।
ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে ৫ আগস্ট পতন হয় শেখ হাসিনা সরকারের। এ সময় সরকারের নির্দেশে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে মাঠ প্রশাসনের বিভাগীয় কমিশনার ও ডিসিরাও আন্দোলনে বাধা সৃষ্টি করেন বলে অভিযোগ আন্দোলনকারীদের।
বর্তমানে বিভাগীয় কমিশনার পদে ঢাকা ও খুলনার বিভাগীয় কমিশনার ১৫ ব্যাচের এবং বাকিগুলোতে ১৭তম ব্যাচের কর্মকর্তারা দায়িত্ব পালন করছেন। এ ছাড়া জেলা প্রশাসক পদে বর্তমানে বিসিএস ২৪, ২৫ ও ২৭তম ব্যাচের কর্মকর্তারা দায়িত্ব পালন করছেন। মাঠ প্রশাসনের এসব কর্মকর্তার অধীনেই অনুষ্ঠিত হয়েছে দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচন।
আন্দোলনে শিক্ষার্থীর মুখ চেপে ধরা সেই পুলিশ পরিদর্শক বরখাস্ত
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।