নিজস্ব প্রতিবেদক : দেশের বাণিজ্যিক ব্যাংকে গেল দেড় দশক লুটপাটের মহোৎসব চলেছে। সেই থাবা থেকে রক্ষা পায়নি অনেকটা আড়ালে থাকা বাংলাদেশ সমবায় ব্যাংক লিমিটেডও। ২০২০ সালের মার্চ মাস থেকে একই বছরের জুন মাসের মধ্যে ব্যাংকটি থেকে লুট হয়েছে ১২ হাজার ভরি স্বর্ণ।
সোমবার (২৯ সেপ্টেম্বর) অন্তর্বর্তী সরকারের স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় উপদেষ্টা এ এফ হাসান আরিফ কুমিল্লায় এক অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ সমবায় ব্যাংক থেকে ১২ হাজার ভরি স্বর্ণ লুটের কথা তুলে ধরলে মিডিয়া পাড়ায় আলোচনার ঝড় শুরু হয়।
উপদেষ্টা বলেন, সমবায় ব্যাংকের ১২ হাজার ভরি স্বর্ণের খোঁজ এখনও পাওয়া যাচ্ছে না। অনিয়ম-অব্যবস্থাপনার জন্যই ডুবতে বসেছে ব্যাংকটি।
এতো স্বর্ণ কারা রেখেছিল-এই প্রশ্নের উত্তর জানতে সমবায় ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে গেলে জানা যায়, সমবায় ব্যাংকের লকার থেকে খোয়া যাওয়া ওই ১২ হাজার ভরি স্বর্ণের মালিক নারায়ণগঞ্জ কো অপারেটিভ ক্রেডিট লিমিটেড। তারা তাদের গ্রাহকদের স্বর্ণ বন্ধক রেখে ব্যাংক থেকে প্রায় ১২ কোটি টাকা নিয়েছিল, যার সুদের পরিমাণ ১০ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে।
প্রতিষ্ঠানটি স্বাধীনতা পূর্বকাল ১৯৫৭ সাল থেকে সমবায়ের সঙ্গে এমন বন্ধকী ব্যবসা করে আসছিল। ২০১২-১৩ সালের দিকে তারা কাস্টমারের স্বর্ণ মেরে লাপাত্ত হয়ে যায়। এ জন্য তাদের বিরুদ্ধে একটি ডিসপিউট মামলা করা হয়। মামলার রায় হলে তাদের সঙ্গে ব্যাংকের প্রধান কার্যালয় থেকে যোগাযোগও করা হয়েছে। কিন্তু সেই স্বর্ণগুলো নিতে নায়রায়ণগঞ্জ কো অপারেটিভ লিমিটেডের কেউ নিতে আসেনি।
ব্যাংক সূত্র থেকে জানা যায়, গ্রাহক নিখোঁজের সুযোগটি কাজে লাগায় ব্যাংকের একটি চক্র। গ্রাহকের পরিচয়পত্র নকল করে সমবায় ব্যাংকে আবেদন করার নাটক সাজায় চক্রটি। স্বর্ণ ফেরত পেতে এক হাজার ৯৮৪টি আবেদন করেন গ্রাহকরা। কিন্তু এর বেশিরভাগই ছিল ভুয়া।
এ ঘটনায় এরই মধ্যে চার্জশিট দিয়েছে দুদক। মামলার আসামি করা হয়েছে সমবায় ব্যাংকের ৭ কর্মকর্তাকে। যদিও এখন পর্যন্ত উদ্ধার হয়নি একরত্তি স্বর্ণও।
দায়িত্বশীল সূত্র আরও জানায়, জালিয়াতির ওই ঘটনার সঙ্গে জড়িত ছিল ব্যাংকের দুটি বিভাগ। একটি স্বর্ণ বিভাগ ও অপরটি হিসাব বিভাগ। সমবায় আইন অনুযায়ী বিভাগীয় সার্বিক কাজের দায়িত্ব ও তত্ত্বাবধান সংশ্লিষ্ট বিভাগের ডিজিএম বা উপ-মহাব্যবস্থাপকের ওপর বর্তায়। তারা কোনো সমস্যায় পড়লে জিএম বা চেয়ারম্যান বরাবর লিখিত চিঠি দেওয়ার বিধান রয়েছে। কিন্তু স্বর্ণ আত্মসাতের ঘটনা দুদক পর্যন্ত গড়ালেও ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানাননি ডিজিএম।
এ ঘটনায় দুদকের করা মামলায় সেই সময় গ্রেপ্তার হন সমবায় ব্যাংকের উপ-মহাব্যবস্থাপক আব্দুল আলিম, সহকারী মহাব্যবস্থাপক (হিসাব) হেদায়েত কবীর, সাবেক প্রিন্সিপাল অফিসার ও সমবায় ভূমি উন্নয়ন ব্যাংকের এস এস রোড শাখার ব্যবস্থাপক মো. মাহাবুবুল হক, প্রিন্সিপাল অফিসার মো. ওমর ফারুক ও সিনিয়র অফিসার (ক্যাশ) নূর মোহাম্মদ।
ব্যাংকটির ভারপ্রাপ্ত মহাব্যবস্থাপক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আহসানুল গনি জানান, বর্তমানে ব্যাংকটির এমডি পদ শূন্য রয়েছে। স্বর্ণ খোয়া যাওয়ার বিষয়ে তিনি কিছুই জানেন না। তবে এনিয়ে দুদকে একটি মামলা চলমান রয়েছে।
প্রতিষ্ঠানটির সাবেক ভারপ্রাপ্ত মহাব্যবস্থাপক ও বর্তমান এজিএম ঝর্ণা প্রভা দেবী জুমবাংলাকে, করোনা মহামারির প্রকোপ শুরু হওয়ার পর ২০২০ সালের মার্চ মাস থেকে জুন মাস পর্যন্ত এই স্বর্ণ লুটপাটের ঘটনা ঘটেছে। ব্যাংকের ভল্ট থেকে তুলে নেওয়া ওই ১২ হাজার ভরি স্বর্ণের মালিক ভুয়া ছিল।
বরিশালে ইলিশের কেজি ১৭০০ টাকা, একই ইলিশ ভারতে যাচ্ছে ৫০০ টাকা কমে
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।