সম্প্রতি অ্যাস্ট্রোফটোগ্রাফার অ্যাণ্ড্রু ম্যাকার্থি নিজ বাড়ির উঠোন থেকে সৌরকলঙ্কের ছবি তুলেছেন। তাঁর ছবি তোলা এই সৌরকলঙ্কের অঞ্চলের নাম ‘এআর৩৬৯৭’। অঞ্চলটি সূর্যের দক্ষিণ পাশে। যুক্তরাষ্ট্রের অ্যারিজোনা অঙ্গরাজ্যে নিজের বাড়ি থেকে ছবিটি তুলেছেন ম্যাকার্থি।
সৌরকলঙ্কের এ অঞ্চলটি আগে ‘এআর৩৬৬৪’ নামে পরিচিত ছিল। সম্প্রতি নতুন করে দৃশ্যপটে হাজির হয়েছে এটি। বেড়ে গেছে এর সক্রিয়তা। নির্গত করছে সৌরশিখা ও করোনাল ম্যাস ইজেকশন (সিএমই)। চলতি বছরের মে মাসে পৃথিবীর দক্ষিণ গোলার্ধের মেরুজ্যোতি বা আরোরা যে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে গিয়েছিল, দেখা গিয়েছিল পৃথিবীর বিভিন্ন জায়গা থেকে। সূর্যের এ সক্রিয়তা এর কারণ হতে পারে বলে ধারণা করছেন বিজ্ঞানীরা। আবার ভূ-চৌম্বকীয় ঝড়ও হতে পারে এর কারণ।
ম্যাকার্থির তোলা ছবিটি ও টাইমল্যাপস ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে সৌরকলঙ্কের বহুরূপী বৈশিষ্ট্য, প্লাজমা লুপ ও সৌরশিখার প্রদর্শনী। বর্তমানে এটি পৃথিবীর দিকে রয়েছে। ফলে জুনের শুরুর দিকে আরও বেশি ভূ-চৌম্বকীয় ঝড় এবং অরোরার দেখা মিলতে পারে।
সূর্যের বায়ুমণ্ডলে তৈরি সাময়িক কালো দাগকে বলা হয় সৌরকলঙ্ক। সূর্যের চৌম্বকীয় সক্রিয়তা বেড়ে গেলে এ ধরনের দাগ তৈরি হয়। আর সৌরকলঙ্কের চারপাশ থেকে হঠাৎ নির্গত অতি উজ্জ্বল আলোক বিস্ফোরণকে বলা হয় সৌরশিখা। একে দেয় সিএমই বা করোনাল ম্যাস ইজেকশন। এটা মূলত সৌরবায়ু ও চৌম্বকক্ষেত্রের উদ্গিরণ। করোনাল ম্যাস ইজেকশনের মাধ্যমে সূর্যের বায়ুমণ্ডল থেকে এ দুটি ছড়িয়ে পড়ে মহাকাশে।
‘এআর৩৬৯৭’-এর কারণে মে মাসে পৃথিবীতে শক্তিশালী ভূ-চৌম্বকীয় ঝড় হয়েছিল। করোনাল ম্যাস ইজেকশন ও পৃথিবীর চৌম্বকক্ষেত্রের মধ্যে সংঘর্ষের মাধ্যমে এই ঝড় হয়। ভূ-চৌম্বকীয় ঝড়টির কারণে কৃত্রিম উপগ্রহ, জিপিএস সিস্টেম, পাওয়ার গ্রিড ইত্যাদি পরিচালনায় কিছুটা বাধার সৃষ্টি হয়েছিল।
অবশ্য দৃষ্টিনন্দন অরোরাও দেখা গিয়েছিল একই কারণে। আগেই বলেছি, এই সৌরকলঙ্ক পৃথিবীর দিকে ঘুরে আছে। তাই সক্রিয়তা বেড়ে গেলে এর কারিকুরি দেখা যাবে জুন মাসেও। জুনের শুরুতে পৃথিবীতে আরও ভূ-চৌম্বকীয় ঝড় ও অরোরা তৈরি হতে পারে।
সূর্যের ছবি তোলা, বিশেষ করে সৌলকলঙ্ক দেখার কাজটি সহজ নয়। এ কাজে ম্যাকার্থি ব্যবহার করেছেন হাইড্রোজেন-আলফা ফিল্টারযুক্ত সৌরদুরবিনের মতো বিশেষ যন্ত্র। তোলেন সূর্যের ক্রোমোস্ফিয়ার বা বায়ুমণ্ডল ও পৃষ্ঠের বিশদ ছবি। তাঁর ধারণ করা টাইমল্যাপস ভিডিওতে প্লাজমা লুপ বা সৌরশিখার নড়াচড়া অনেকটা জীবন্ত হয়ে উঠেছে।
সূর্যের সক্রিয়তা পর্যবেক্ষণের জন্য ম্যাকার্থির কাজ বেশ গুরুত্বপূর্ণ। মহাকাশ অভিযান পরিচালনার জন্য সেখানকার আবহাওয়া বোঝা দরকার। সে জন্য সূর্যের আচরণ ও সক্রিয়তার পূর্বাভাস বোঝা জরুরি। এ ক্ষেত্রে ম্যাকার্থির ছবি বিজ্ঞানীদের যেমন কাজে লাগছে, তেমনি সাধারণ মানুষের কাছে তুলে ধরছে মহাবিশ্বের সৌন্দর্য ও শক্তি।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।