জুমবাংলা ডেস্ক: গোপালগঞ্জের পাঁচ উপজেলার একটি বিশাল অংশজুড়ে নিম্ন জলাভূমি। সেখানে বছরে সাত-আট মাস জলমগ্ন থাকে, জন্ম নেয় প্রচুর কচুরিপানা। ফলে এসব জমিতে ফসল হয় না। সম্প্রতি এসব জলাভূমিতে ‘ভাসমান বেড পদ্ধতিতে’ চাষাবাদ হচ্ছে, তৈরি হয়েছে নতুন সম্ভাবনা। ভাসমান বেডে সবজি, ফল ও মসলা চাষ সম্প্রসারিত হচ্ছে, জলাভূমি আসছে চাষের আওতায়।
বর্ষা মৌসুমে কৃষকরা কচুরিপানা দিয়ে পানির ওপর ভাসমান বেড তৈরি করেন চাষিরা। কিছুদিন পর কচুরিপানা পচে এসব বেড সবজি চাষের উপযোগী হয়। তখন সেখানে শাক, সবজি, ফল ও মসলার আবাদ করেন কৃষকরা। জুন থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ভাসমান বেডে চলে চাষাবাদ।
ভাসমান বেডে চাষাবাদে রাসায়নিক সার বা কীটনাশক ব্যবহার করা হয় না। এখানে উৎপাদিত ফসল নিরাপদ। চাষিরা এসব ফসল পরিবারের পুষ্টির চাহিদা পূরণ এবং বাড়তি ফসল বাজারে বিক্রি করছেন।
গোপালগঞ্জ সদর উপজেলা কৃষি অফিসার মাফরোজা আক্তার বলেন, গোপালগঞ্জ সদর উপজেলায় জলাবদ্ধ অনাবাদী জমি বেশি। এ জমি চাষাবাদের আওয়াতায় আনতে সরকার ভাসমান বেডে সবজি ও মসলা চাষ সম্প্রসারণ এবং জনপ্রিয়করণ প্রকল্প গ্রহণ করেছে।
‘এই প্রকল্পের আওতায় আমরা গত বছর ২৬ একরে ভাসমান বেড করে দিয়েছিলাম। এই বছর প্রায় ৩০ একর বেডে চাষাবাদ করা হবে। এখান থেকে ৫৪০ টন ফসল উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। যার বাজারমূল্য প্রায় ১ কোটি ৩৫ লাখ টাকা।’
মাফরোজা আক্তার আরো বলেন, ১ হাজার কৃষক এ চাষাবাদর সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়েছেন। প্রকল্প থেকে কৃষকদের বীজ, সার, ট্রে, নেটসহ ভাসমান বেড তৈরির উপকরণ সহায়তা দেওয়া হয়। এছাড়া তাদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে।’
ভাসমান বেডে শাক, সবজি, ফল ও মসলা আবাদ দেশের কৃষি উৎপাদনে ভূমিকা রাখছে। গতিশীল হচ্ছে কৃষি অর্থনীতির চাকা। গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার রঘুনাথপুর ব্লকের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা প্রদীপ হালদার বলেন, ভাসমান বেডে ফসল উৎপাদনে কোনো রাসায়নিক সার বা কীটনাশক ব্যবহার হয় না। তাই ভাসমান বেডের ফসল দেহের জন্য নিরাপদ।
গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার সিলনা গ্রামের কৃষাণী আলোমতি ওঝা (৪৫) বলেন, ‘কৃষি অফিসের সহায়তা, প্রশিক্ষণ ও পরামর্শ নিয়ে ১০টি ভাসমান বেড করেছি। এ বেড থেকে ৮ হাজার টাকার লাল শাক বিক্রি করেছি। আগামী ৪-৫ দিরে মধ্যে আরো ৫ হাজার টাকার লাল শাক বিক্রি করব। এছাড়া ওই বেডে ঘি-কাঞ্চন শাক, পাটশাক, ঢ্যাঁড়স, কচুর আবাদ করেছি।’
তিনি আরো বলেন, ‘আগামী ডিসেম্বর পর্যন্ত এখান থেকে অত্যন্ত ১ লাখ টাকার শাক, সবজি, ফল ও হলুদ বিক্রি করব। ১০টি বেড থেকে খরচ বাদে আয় হবে ৫০ হাজার টাকা। এছাড়া এখানে উৎপাদিত শাকসবজি নিজেরা খাচ্ছি ও আত্মীয়-স্বজনদের দিচ্ছি।’
টুঙ্গিপাড়া উপজেলার গুয়াধানা গ্রামের কৃষক অনিল চন্দ্র বিশ্বাস (৫০) বলেন, ‘১০ বছর ধরে ভাসমান বেডে ফসল উৎপাদন করছি। গত বছর ৪৫টি বেড করেছিলাম। এ বছর ৯০টি বেড করেছি। এখানে লাল শাক, ঢ্যাঁড়স, সাম্মামসহ বিভিন্ন শাক, সবজি ও ফলের আবাদ করছি। এখানে উৎপাদিত ফসলে কোনো কেমিক্যাল সার বা কীটনাশক ব্যবহার করি না।’
তিনি আরো বলেন, ‘ভাসমান বেডে চাষাবাদের সময় আমাদের কোনো কাজ থাকে না। তাই এ পদ্ধতিতে চাষাবাদ করে আমরা জলাবদ্ধ অনাবাদী জমি চাষাবাদের আওতায় আনতে পারছি। আধুনিক প্রযুক্তির সহায়তায় সঠিকভাবে চাষাবাদ করতে পারলে এ পদ্ধতি খুবই লাভজনক।’
ভাসমান বেডে সবজি ও মসলা চাষ সম্প্রসারণ এবং জনপ্রিয়করণ প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক ড. বিজয় কৃষ্ণ বিশ্বাস বলেন, ভাসমান বেডে চাষ পদ্ধতির মাধ্যমে জলাবদ্ধ অনাবাদী জমি চাষের আওতায় আনা সম্ভব হয়েছে। এতে দেশে ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধি পাচ্ছে। তাই আমরা ভাসমান কৃষির আধুনিক চাষ পদ্ধতি উদ্ভাবন করে কৃষকের কাছে প্রযুক্তি হস্তান্তর করছি। কৃষক এ নতুন প্রযুক্তি প্রয়োগ করে শাক, সবজির পাশাপাশি উচ্চ মূল্যের ফসল উৎপাদন করছেন। এ পদ্ধতির চাষাবাদ কৃষিকে আরো সমৃদ্ধ করছে।
মুকসুদপুর উপজেলা কৃষি অফিসার মো. বাহাউদ্দিন সেখ বলেন, কৃষকরা ভাসমান বেডে ফসল উৎপাদন প্রযুক্তি গ্রহণ করেছেন। প্রতি বছরই এ পদ্ধতিতে চাষাবাদ বৃদ্ধি পাচ্ছে।
গোপালগঞ্জ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক আ. কাদের সরদার বলেন, ভাসমান বেডের শাক, সবজি, ফল খেতে সুস্বাদু। তাই বাজারে ভাসমান বেডের সবজি ও ফলের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। ভাসমান বেডের ফসল বাজারে বেশি দামে বিক্রি হয়। তাই কৃষক এ পদ্ধতিতে চাষাবাদ করে লাভবান হচ্ছে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।