সরকার সম্প্রতি সরকারি চাকরি (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫ জারি করেছে, যা সচিবালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের চলমান আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে বিশেষ গুরুত্ব পেয়েছে। এই অধ্যাদেশ রাষ্ট্রপতির অধ্যাদেশ হিসেবে সংবিধানের ৯৩(১) ধারা অনুসারে জারি করা হয়েছে। এটি মূলত সরকারি চাকরি আইন, ২০১৮-এর একটি বিস্তৃত সংশোধন, যেখানে কর্মচারীদের আচরণ ও দণ্ড সংক্রান্ত কঠোর বিধান যুক্ত করা হয়েছে।
সরকারি চাকরি অধ্যাদেশ জারি: নতুন বিধানের মূল দিক
এই অধ্যাদেশে প্রথমবারের মতো স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে, যদি কোনো সরকারি কর্মচারী অনানুগত্যমূলক কর্মকাণ্ডে যুক্ত হন বা অন্যদের উসকানি দেন, তাহলে তা অসদাচরণ হিসেবে গণ্য হবে। এসব অপরাধের শাস্তির মধ্যে রয়েছে: চাকরি থেকে অপসারণ, বরখাস্ত অথবা নিম্নপদে অবনমিতকরণ।
Table of Contents
নতুন অধ্যাদেশে উল্লিখিত অপরাধসমূহ হলো:
- অনানুগত্য সৃষ্টি বা শৃঙ্খলা ভঙ্গকারী কার্যকলাপে লিপ্ত হওয়া
- অন্য কর্মচারীদের সঙ্গে যৌথভাবে বা এককভাবে কর্মবিরতি বা অনুপস্থিত থাকা
- অন্য কর্মচারীকে উসকানি প্রদান বা প্ররোচিত করা
- কর্মে বাধা প্রদান করা
এইসব অপরাধের জন্য দণ্ড আরোপের আগে সংশ্লিষ্ট কর্মচারীকে কারণ দর্শানোর সুযোগ দেওয়া হবে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে যদি উত্তর না দেওয়া হয়, তাহলে নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে পারবে।
অধ্যাদেশকে ঘিরে বিতর্ক ও সচিবালয়ের কর্মীদের প্রতিক্রিয়া
বাংলাদেশ সচিবালয় কর্মকর্তা-কর্মচারী সংযুক্ত পরিষদ এই অধ্যাদেশকে ‘কালো আইন’ আখ্যা দিয়ে এর প্রতিবাদে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে। তারা বলছেন, এটি সরকারি কর্মচারীদের মত প্রকাশের স্বাধীনতা ও যৌক্তিক দাবির আন্দোলনের পথ রুদ্ধ করবে। তাদের দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে এই আইন বাতিল করা এবং কর্মীদের ন্যায্য সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করা।
এই আন্দোলনের ফলে সচিবালয়ের প্রশাসনিক কার্যক্রমও আংশিকভাবে স্থবির হয়ে পড়েছে। আন্দোলনকারীরা স্পষ্ট ঘোষণা দিয়েছেন, দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত তারা মাঠ ছাড়বেন না।
গণবিজ্ঞপ্তিতে আবেদনকারীর বয়স গণনায় পরিবর্তন: শিক্ষক নিয়োগে বড় সিদ্ধান্ত
আইনি বিশ্লেষণ ও ভবিষ্যৎ প্রভাব
আইন বিশেষজ্ঞদের মতে, রাষ্ট্রপতির মাধ্যমে অধ্যাদেশ জারির সাংবিধানিক ভিত্তি থাকলেও এর প্রয়োগ নিয়ে বিতর্ক থাকতে পারে, বিশেষ করে যখন এটি একটি চলমান আন্দোলনের সময় জারি হয়। অনেকেই বলছেন, এটি শৃঙ্খলা রক্ষার নামে কর্মীদের অধিকারে হস্তক্ষেপ হতে পারে। সরকারি চাকরি আইন, ২০১৮-এর ধারা ৩৪ অনুসারে দণ্ডের বিরুদ্ধে আপিল করার সুযোগ রাখা হলেও রাষ্ট্রপতির আদেশের ক্ষেত্রে কোনো আপিলের সুযোগ নেই।
এর ফলে একদিকে যেমন প্রশাসনিক নিয়ন্ত্রণ শক্তিশালী হবে, অন্যদিকে কর্মচারীদের মধ্যে ভয় ও অসন্তোষ বাড়তে পারে, যা দীর্ঘমেয়াদে প্রভাব ফেলতে পারে কর্ম পরিবেশ ও প্রশাসনের স্বচ্ছতায়।
অভিযোগ ও শুনানির প্রক্রিয়া
নতুন বিধানে অভিযোগ গঠনের জন্য নির্দিষ্ট সময়সীমা ও প্রক্রিয়া নির্ধারণ করা হয়েছে। অভিযোগ পত্রের সাত কার্যদিবসের মধ্যে কর্মচারীকে কারণ দর্শানোর সুযোগ দেওয়া হবে এবং প্রয়োজনে ব্যক্তিগত শুনানির সুযোগও থাকবে। যথাযথ প্রক্রিয়ায় নোটিশ জারি না হলে তা বাতিল হওয়ার আশঙ্কা থাকে না, কারণ ইমেইল, পত্রিকায় বিজ্ঞাপন অথবা বাসস্থানে লটকানো মাধ্যমকে যথাযথ হিসেবে গণ্য করা হবে।
এই প্রক্রিয়া স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ হবে কি না তা ভবিষ্যতেই দেখা যাবে, তবে ইতিমধ্যে কর্মচারীদের মধ্যে এর প্রভাব স্পষ্টভাবে দেখা যাচ্ছে।
সরকারি চাকরিতে শৃঙ্খলা বনাম অধিকার
সরকারি চাকরিতে শৃঙ্খলা বজায় রাখা জরুরি হলেও অধিকার সংরক্ষণ করাও সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ। বর্তমান অধ্যাদেশে শৃঙ্খলার নামে কর্মীদের মৌলিক অধিকার যেমন মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, আন্দোলন করার অধিকার সীমিত হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। এ ধরনের পদক্ষেপ কর্মীদের মধ্যে অসন্তোষ সৃষ্টি করতে পারে, যার ফলে প্রশাসনিক কাঠামো দুর্বল হতে পারে।
কোন পথে সমাধান?
সকল পক্ষের অংশগ্রহণে আলোচনার মাধ্যমে এই সংকট সমাধান করা উচিত। একতরফা সিদ্ধান্তের ফলে কর্মীদের মধ্যে আস্থার সংকট তৈরি হয়। সরকারের উচিত হবে কর্মচারীদের অভিযোগ শুনে গঠনমূলক সমাধানের পথে এগোনো।
সরকারি চাকরি অধ্যাদেশ জারি দেশের প্রশাসনিক কাঠামোয় একটি গুরুত্বপূর্ণ বাঁক নির্দেশ করে। যদিও এর উদ্দেশ্য শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা, তবে এর প্রয়োগ যেন কর্মচারীদের মৌলিক অধিকার খর্ব না করে, সেটি নিশ্চিত করা জরুরি।
🤔 সাধারণ জিজ্ঞাসা (FAQs)
- সরকারি চাকরি অধ্যাদেশ জারি কী?
এটি ২০২৫ সালে রাষ্ট্রপতির মাধ্যমে জারি করা একটি অধ্যাদেশ, যা সরকারি চাকরি আইন, ২০১৮-এর সংশোধন। - এই অধ্যাদেশে কী নতুন রয়েছে?
নতুন ধারা অনুযায়ী সরকারি কর্মচারীদের আচরণ ও শাস্তি সংক্রান্ত কঠোর বিধান যুক্ত করা হয়েছে। - এই অধ্যাদেশে কী ধরনের শাস্তির কথা বলা হয়েছে?
অপসারণ, বরখাস্ত এবং নিম্নপদে অবনমিতকরণ উল্লেখযোগ্য শাস্তির মধ্যে রয়েছে। - কীভাবে অভিযোগ প্রক্রিয়া পরিচালিত হবে?
সংশ্লিষ্ট কর্মচারীকে অভিযোগের ভিত্তিতে কারণ দর্শানোর সুযোগ দেওয়া হবে এবং শুনানি হতে পারে। - এই অধ্যাদেশে আপিলের সুযোগ আছে কি?
রাষ্ট্রপতির আদেশ বাদে অন্যান্য আদেশের বিরুদ্ধে ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে আপিলের সুযোগ রাখা হয়েছে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।