জুমবাংলা ডেস্ক: আমাদের সমাজে অনেক নারী আছেন যারা কেবলমাত্র নিজের একাগ্রতা, উদ্যম ও প্রত্যয় দিয়ে পেয়েছেন প্রতিষ্ঠা, হয়েছেন স্বাবলম্বী। জীবন সংগ্রামে সব প্রতিকুলতা পেরিয়েছেন। বিশেষ করে দরিদ্র পরিবারে জন্ম গ্রহণ করে বার বার সমাজের নির্মম কষাঘাতের শিকার হয়েছেন। কিন্তু সংগ্রাম করে হয়েছেন সফল। নিজের ইচ্ছাকে সম্বল করে সাহসিকতার সঙ্গে এগিয়ে গেছেন, দাঁড়িয়েছেন নিজ পায়ে, পেয়েছেন সাফল্য। তেমনই একজন সংগ্রামী ও সফল নারী নিলুফার আক্তার। বাড়ি বিশোরগঞ্জ জেলার পাকুন্দিয়ায়। চরম প্রতিকুলতাকে জয় করে জীবন যুদ্ধে আজ নারী সমাজের কাছে পথিকৃৎ তিনি। নতুন জীবন শুরু করতে যাওয়া অনেকেই আজ কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়া উপজেলার বুরুদিয়া ইউনিয়েনের সালুয়াদি গ্রামের এই নারীকে অনুসরন করছেন।
অভাব-অনটনের সংসারে নিলুফার বাবা খাইরুজ্জামান আবস্মিকভাবে মারা যান। খাইরুজ্জামান প্রয়াত হওয়ার পর তিন ছেলে ও তিন মেয়েকে নিয়ে সংসারে খাবার যোগাতে হিমশিম খেতে হতো স্ত্রী চ¤পা আক্তারকে। অভাবের তাড়নায় কঠিন বাস্তবতায় অস্টম শ্রেনীতে পড়া অবস্থায়ই বন্ধ হয়ে যায় কন্যা নিলুফারের পড়াশোনা। এমন অবস্থায় অল্প বয়সেই তাকে বসতে হয় বিয়ের পিঁড়িতে। মূলত গরীব মায়ের কথা চিন্তা করেই বিয়েতে রাজি হন নিলুফা। ২০১৫ সালে অল্প বয়সে তার বিয়ে হয় পার্শবর্তী পাটুয়াভাঙ্গা এলাকার এক গার্মেন্টস কর্মীর সঙ্গে। সেখানে স্বামী আর শাশুড়ির অত্যাচার, নির্যাতনে অতিষ্ঠ হয়ে ওঠে তার জীবন। নির্যাতনের এক পর্যায়ে তার গর্ভের সন্তানও নষ্ঠ হয়ে যায়। স্বামী তালাক দিলে ফিরে যায় বাবার বাড়িতে। ভাইয়ের সংসারে বোঝা হয়ে থেকে তার মন বিষিয়ে ওঠে। হতাশার অতল গহবরে যখন তিনি ক্রমেই ডুবতে বসেছেন তখন সময় পরিচয় হয় সরকারের মা ও শিশু স্বাস্থ্য বিষয়ক ‘নতুন দিন’ প্রকল্পের কমিউনিটি মোবিলাইজার সালেহা বেগমের সাথে।
সালেহার আমন্ত্রনে ২০১৭ সালের দিকে এসএমসির তত্বাবধানে পপুলেশন সার্ভিসেস সেন্টারের (পিএসটিসি) নতুন দিন প্রকল্পের উঠান বৈঠকে উপস্থিত হন নিলুফা। সেখান থেকে উদ্বুদ্ধ হয়ে এসএমপির পন্য বিক্রয় প্রতিনিধি গোল্ড স্টার মেম্বার হিসেবে কাজ শুরু করেন তিনি। দিনরাত অত্যন্ত পরিশ্রম করে উঠান বৈঠক ও বাড়ি বাড়ি গিয়ে জন্মবিরতিকরণ পিল, কনডম, ফেমিকন, স্যানিটারি ন্যাপকিন, জয়া ওরস্যালাইন, মনিমিক্স ইত্যাদি পন্য বিক্রি করেন এবং মা ও শিশু স্বাস্থ্য বিষয়ক পরামর্শ দিতে থাকেন তৃণমূলের গ্রামবামীকে। আর এভাবেই ঘুরতে থাকে তার ভাগ্যের চাকা। পন্য বিক্রি করে প্রতি মাসে ছয় থেকে সাত হাজার টাকা লাভ হয়। এতেই তার সংসার চলে এবং জীবন যুদ্ধে জয়ী হয়ে আজ তিনি স্বাবলম্বী। এলাকায় এখন তিনি নতুন পরিচিতি পেয়েছেন ‘নতুন দিনের ডাক্তার আপা কিংবা জয়া আপা।’ অদম্য এই নিলুফা এখন নির্যাতনের শিকার ভাগ্য বিড়ম্বিত হাজারো নারীর ঘুরে দাঁড়ানোর অনুপোরণা। করোনার এই মহামারির সময়েও তিনি কঠোরস্বাস্থ্য বিধি অনুসরণ ও পালন করে কাজ চালিয়ে গেছেন। তার সাথে গ্রামের সাধারন গৃহিণীরাও উপকৃত হচ্ছেন।
উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা স্বপন দত্ত বলেন, একজন স্বামী পরিত্যক্তা, অস্বচ্ছল পরিবারে তার জন্ম। তবুও জীবন সংগ্রামে তিনি থেমে যাননি। কঠোর পরিশ্রম, একাগ্রতা আর অদম্য মনোবল তাকে আজকের পর্যায়ে নিয়ে এসেছে। নির্যাতনের বিভীষিকা ভুলে নতুন উদ্যমে জীবন শুরু করা নিলুফা তার কাজের স্বীকৃতি হিসেবে নারী ক্যাটাগরিতে উপজেলা ও জেলা পর্যায়ে সেরা জয়ীতা পুরস্কারে ভুষিত হয়েছেন। সূত্র: বাসস
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।