জুমবাংলা কৃষি: যেদিকে চোখ যায় হলুদ আর হলুদ, মাঠজুড়ে যেন হলুদের সমারোহ। সেই সঙ্গে মৌমাছির গুঞ্জনে মুখরিত পুরো এলাকা। সরিষার হলুদ ফুলে ছেয়ে আছে মাঠের পর মাঠ। রঙের পাশাপাশি বাতাসে মৌ মৌ গন্ধ ছড়াচ্ছে সরিষার ফুল। ক্ষেতের আল ধরে হাঁটছেন পর্যটকরা। বন্ধুদের নিয়ে দল বেঁধে ঘুরছেন হলুদের রাজ্যে। এমন দৃশ্যের দেখা মিলবে শহরের কাছে কেরানীগঞ্জের মাঠ প্রান্তরে।
সরেজমিন সরিষাক্ষেতে গিয়ে দেখা যায়, ফুলের সৌন্দর্য উপভোগ করতে সরিষা মাঠজুড়ে ভিড় করছেন বিভিন্ন স্থান থেকে আসা বিভিন্ন বয়সের নারী, পুরুষ, শিশুসহ বিনোদনপ্রেমীরা। কেউ সরিষা মাঠ ঘুরে ঘুরে দেখছেন। কেউবা মোবাইল ফোনে ছবি তুলছেন।
রোদের ঝলমল আলোয় হলুদের আভায় সৌন্দর্য উপভোগ করতে এসেছেন অভিনেত্রী সামান্তা পারভেজ। তিনি প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, সরিষা ফুল আমার খুব পছন্দ। ঢাকার কাছেই কেরানীগঞ্জের মাঠজুড়ে সরিষা ফুলের এমন সৌন্দর্যের কথা আমার বন্ধুর কাছে শুনে এখানে এসেছি। এখানে যেদিকে তাকাই হলুদ আর হলুদ। সব মিলিয়ে অনেক ভালো লাগছে। অনেক ছবি তুলেছি।
কথা হয় ব্রেন উইথ আবির ফেসবুক পেজের ফুড ব্লগার আবির নিলয়ের সঙ্গে। তিনি জানান, দালান-কোঠার যান্ত্রিক শহরে কোথাও ফসলি জমি নেই। শহরের খুব কাছে কেরানীগঞ্জে এলে শান্তি পাই। চারদিকে হলুদ আর হলুদ। এমন দৃশ্য দেখে খুব ভালো লাগছে। ব্লগ করতে চলে এসেছি।
ঘুরতে আসা রাজু আহমেদ নামে একজন বলেন, গত বছরও এখানে ঘুরতে এসেছিলাম। গতবারের থেকে এবার একটু বেশি ভালো লাগছে।
মধু কিনতে এসেছেন রহমান। তিনি বলেন, সরিষাক্ষেতের পাশে বসানো হয়েছে মৌ বাক্স। ক্ষেত থেকে ফুলের খাঁটি মধু কিনতে এসেছি। ৫০০ টাকায় ১ কেজি মধু কিনলাম। মৌমাছির চাকসহ বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার টাকায়।
মধু সংগ্রহকারী প্রতিষ্ঠান তাওহীদ এন্টারপ্রাইজের মালিক এফ মোর্শেদ হাসান জানান, সরিষাক্ষেতের পাশে খোলা জায়গায় চাকভরা বাক্স ফেলে রেখেছি। বাক্সে মোম দিয়ে তৈরি ৮ থেকে ১০টি মৌচাকের ফ্রেম রাখা হয়। মৌমাছিরা ফুল থেকে মধু এনে বাক্সের ভেতরের চাকে জমা করে। সরিষা ফুলের মধু খাঁটি ও সুস্বাদু হওয়ায় দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্রির পাশাপাশি বিদেশেও রপ্তানি হচ্ছে।
একাধিক কৃষকের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এক সময় উপজেলায় ব্যাপক পরিমাণে সরিষার আবাদ হতো। সয়াবিনের ওপর নির্ভরতা বাড়ায় বর্তমানে অনেকটাই কমে গেছে সরিষার আবাদ। তবু অনেক চাষি ধান চাষের পাশাপাশি ডিসেম্বর থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত সরিষার চাষ করে থাকেন।
কৃষক জাকির হোসেন প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, সরিষা চাষ করতে প্রতি কানি জমিতে ৩ হাজার টাকা খরচ হয়। এবার মেঘ-বৃষ্টি না হলে আমরা লাভবান হব।
কৃষক জয়নাল হোসেন বলেন, প্রতিবছরই আমি সরিষা আবাদ করি। বড় কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হওয়ায় গত বছরের তুলনায় এ বছর ফসল ভালো হয়েছে।
কেরানীগঞ্জ উপজেলা কৃষি অফিসার মো. শহীদুল আমীন বলেন, আবহাওয়া অনুকূল থাকায় এবার লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি সরিষার আবাদ হয়েছে। এ বিষয়ে কৃষকদের আমরা সব ধরনের সহযোগিতা ও পরামর্শ দিচ্ছি। ইতোমধ্যে ১ হাজার কৃষককে ১ কেজি করে বীজ, ১০ কেজি ডিএপি সার ও ১০ কেজি এমওপি সার দেওয়া হয়েছে। চলতি মৌসুমে কেরানীগঞ্জে ২ হাজার ১৫০ হেক্টর জমিতে সরিষার আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। আবাদও হয়েছে ২ হাজার ১৬৫ হেক্টর জমিতে।#প্রতিদিনের বাংলাদেশ
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।