স্বাস্থ্য ডেস্ক : শরীরে ৯৮ দশমিক ৬ ডিগ্রি ফারেনহাইট পর্যন্ত তাপমাত্রা সাধারণ হিসেবে বিবেচিত হয়, যা নমনীয় হতে পারে। প্রত্যেকের নিজস্ব স্বাভাবিক একটি তাপমাত্রা থাকে, সারা দিন তাপমাত্রা এর আশপাশে ওঠানামা করে। খাবার খাওয়া, অতিরিক্ত পোশাক পরা, উত্তেজিত বোধ করা এবং জোরালো ব্যায়াম আপনার তাপমাত্রার স্পাইক বাড়িয়ে তুলতে পারে। কিন্তু যখন তাপমাত্রা ১০০ ডিগ্রি ফারেনহাইট স্পর্শ করবে, তখন এটিকে হালকা জ্বর বিবেচনা করুন, বলছিলেন নিউইয়র্কের লাথামের কমিউনিটি কেয়ার ফিজিশিয়ানস’র অভ্যন্তরীণ মেডিসিন বিশেষজ্ঞ এমডি নিতা পারিখ।
আপনি ফ্লু, ঠাণ্ডা, নিউমোনিয়া বা প্রদাহজনিত কোনো অবস্থার মোকাবেলা করছেন কিনা জেনে নিন। জ্বরে আপনার শরীর যখন তাপমাত্রার ভারসাম্য রক্ষার চেষ্টা করছে, তখন এ ঘরোয়া উপায়গুলো অবলম্বন করলে আপনাকে আরো ভালো বোধ করতে সহায়তা করবে।
প্রথমে আপনাকে নিশ্চিত হয়ে নিতে হবে, আপনি জ্বরে ভুগছেন কিনা। এটি জানতে থার্মোমিটার ব্যবহার করতে পারেন। তবে কিছু খাওয়া বা পান করা, ধূমপান করা, গরম পানি দিয়ে গোসল শেষে অন্তত ১৫ মিনিট অপেক্ষা করার পর থার্মোমিটার ব্যবহার করুন। কারণ এগুলো এমনিতেই কিছু সময়ের জন্য আপনার শরীরের তাপমাত্রা বাড়িয়ে দিতে পারে। থার্মোমিটার ব্যবহার করে শরীরের তাপমাত্রা পরিমাপ করে ১০০ ডিগ্রি ফারেনহাইটের কাছাকাছি বা তার বেশি পেলে জ্বরের বিষয়টি নিশ্চিত হন।
মনে রাখবেন জ্বর কোনো রোগ নয়, এটি রোগের লক্ষণ। তাই অপেক্ষা করুন এবং আপনার শরীরের বিরাজমান প্রতিরক্ষাগুলোকে কাজ করতে সময় দিন। এগুলো শরীরকে সুস্থ করতে এবং অ্যান্টিবায়োটিক শক্তি বাড়িয়ে তোলে। তাই আগেভাগে ওষুধ না খেয়ে শরীরের অ্যান্টিবায়োটিকগুলোকে কাজ করতে সময় দিন, অপেক্ষা করুন, বলেন ড. রোজেনবার্গ।
জ্বরে তাপমাত্রা বেশি থাকায় শরীরকে শীতল করতে অত্যধিক ঘাম ঝরে। তবে আপনি যদি খুব বেশি পরিমাণে শরীরের পানি হারান, তবে পানি হ্রাস রোধ করতে শরীর ঘামের নালিগুলো বন্ধ করে দেয়। এতে করে আপনি উচ্চ জ্বরে আক্রান্ত হতে পারেন। তখন জ্বর নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হয়ে পড়ে। তাই জ্বর হলে আপনাকে বেশি বেশি পানি ও পানিজাতীয় খাবার খেতে হবে। এজন্য খাবার পানি, জুস, শরবত ও লেবু চা খেতে পারেন। এক্ষেত্রে পানি পান করতে যদি খুব বেশি বমি বমি ভাব হয়, তাহলে বরফ চুষে খেতে পারেন। ভিন্নতা তৈরি করতে ফলের রস বরফ বানিয়ে চুষে খেতে পারেন।
ভেজা কাপড় দিয়ে শরীর মুছলে বাইরের তাপমাত্রা কমে যায়। আপনাকে হালকা চাপ দিয়ে মুছতে হবে। আর এটি গরম ভেজা কাপড় দিয়েও করতে পারেন। হাস্যকর মনে হলেও এটা ভালো কাজ করে। তবে গরম কাপড়ে অস্বস্তিবোধ হলে এটি পরিহার করা ভালো। জ্বর ১০৩ ডিগ্রি ফারেনহাইট ছাড়িয়ে গেলে এবং জ্বর না কমা পর্যন্ত ঠাণ্ডা ভেজা কাপড় ব্যবহার করুন।
শরীরের তাপমাত্রা অনুযায়ী নিজের কমন সেন্সকে কাজে লাগিয়ে পোশাক ও কম্বল ব্যবহার করুন। শরীরের তাপমাত্রা খুব বেশি হয়ে গেলে অতিরিক্ত কাপড় খুলে ফেলুন, যাতে শরীরের তাপ বাতাশে ছড়িয়ে যায়। তবে আপনার শরীর ঠাণ্ডা থাকলে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ অনুযায়ী কাপড় ব্যবহার করুন।
জ্বর থাকা অবস্থায় আপনি খেতে না পারলে হতাশ হবেন না। বেশির ভাগ মানুষ জ্বরের সময় খেতে চায় না, এটা স্বাভাবিক বিষয়। তবে খেয়াল রাখতে হবে আপনার শরীরে যেন তরলের ঘাটতি তৈরি না হয়। পরবর্তীতে ক্ষুধা লাগলে যা ইচ্ছা করবে, তা-ই খাবেন। টোস্ট, ডিম, মুরগির স্যুপ বা ভ্যানিলা পুডিং সবই আপনার সুস্থতার অংশ।
আপনার শরীরের তাপমাত্রা ১০২ ডিগ্রি ফারেনহাইট অতিক্রম করলে সেটি গুরুত্বর হতে পারে, বিশেষত যদি আপনি অন্যান্য লক্ষণের পাশাপাশি অসুস্থ বোধ করেন। প্রাপ্তবয়স্ক যারা হার্ট বা শ্বাসকষ্টজনিত দীর্ঘস্থায়ী রোগে ভুগছেন, তারা সাধারণত উচ্চ তাপমাত্রা সহ্য করতে সক্ষম না-ও হতে পারেন। তাই আপনাকে অবশ্যই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে। এছাড়া মারাত্মক কাশি, শ্বাস-প্রশ্বাসে সমস্যা, মুখমণ্ডলে ব্যথা, শরীরে ফুসকুড়ি, শরীর বিবর্ণ হওয়া, অনবরত ডায়রিয়া, ১০১ ডিগ্রি ফারেনহাইট তাপমাত্রা দুদিনের বেশি স্থায়ী থাকা ইত্যাদি লক্ষণ দেখা দিলে আপনাকে দ্রুত চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে।
সূত্র: প্রিভেনশন
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।