জুমবাংলা ডেস্ক: ভবন নির্মাণের প্রধান কাঁচামাল রডের দাম বৃহস্পতিবার সর্বকালের সর্বোচ্চে পৌঁছেছে।
বৃহস্পতিবার মিল গেটে প্রতি টন ৭৫ গ্রেডের এমএস (মাইল্ড স্টিল) রড বিক্রি হয় ৯০ হাজার থেকে ৯৩ হাজার টাকায়। যা গত সপ্তাহের তুলনায় প্রায় ৫ হাজার টাকা বেশি। টিবিএস-এর প্রতিবেদক ওমর ফারুক-এর প্রতিবেদনে উঠে এসেছে বিস্তারিত।
অটো অথবা সেমি-অটো মিলে উৎপাদিত ৬০ গ্রেডের এমএস রডের দামও প্রত টনে ৫ হাজার থেকে ৬ হাজার টাকা পর্যন্ত বেড়ে গেছে।
এর আগে ২০২০ সালের নভেম্বর থেকে প্রায় দেড় বছর টানা বেড়ে চলতি বছরের মার্চে ৭৫ গ্রেডের এমএস রডের দাম ঠেকে টনপ্রতি ৯২ হাজার টাকায়। এপ্রিল মাস থেকে কমে জুলাইয়ের প্রথম সপ্তাহে রডের দাম নেমেছিল টনপ্রতি ৮২-৮৪ হাজার টাকায়।
অবশ্য ২০২০ সালের অক্টোবর পর্যন্ত অন্যতম এই কাঁচামালের দাম ৫৫ হাজার টাকার আশপাশেই ওঠানামা করছিল।
দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডের সঙ্গে কথা বলার সময় কারখানা মালিকরা জানান, ডলার সংকটে পণ্য আমদানির কড়াকড়িতে প্রধান কাঁচামাল স্ক্র্যাপের আমদানি কমে যাওয়া এবং সাম্প্রতিক জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধির কারণে রডের দাম আবারও রেকর্ড ছাড়িয়েছে। যদিও স্থানীয় ব্যবসায়ীরা বলছেন, রডের মূল্য বেড়েছে কারখানা মালিকদের কারণে।
এইচএম স্টিল অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি লিমিটেডের পরিচালক মোহাম্মদ সরওয়ার আলম বলেন, ‘ইস্পাত খাত এখন দুঃসময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। ডলারের বিনিময়মূল্যের অস্বাভাবিক উত্থানে আমদানি দায় পরিশোধের সময় লোকসান দিতে হচ্ছে। ডলার-সংকটে নতুন করে কাঁচামাল আমদানিতেও এখন আগের চেয়ে বেশি সময় লাগছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আবার গ্যাসের চাপ কম থাকায় এবং বিদ্যুৎ-সংকটে উৎপাদন ব্যাহত হওয়ায় উৎপাদন খরচ বেড়ে যাচ্ছে।’ এসবই রডের মূল্যবৃদ্ধির কারণ বলে মন্তব্য করেন তিনি।
ইস্পাত খাতের আরও কয়েকজন উদ্যোক্তা ও ব্যবসায়ীরা জানান, প্রায় তিন মাস নিম্নমুখী থাকার পর গত এক মাস ধরে ফের বাড়তে শুরু করে রডের বাজার। এই এক মাসের মধ্যে রডের দাম বেড়েছে ১০ হাজার টাকা।
চট্টগ্রাম নগরীর কর্ণেল হাট এলাকার রড ব্যবসায়ী ও মেসার্স খাজা মেটালের স্বত্বাধিকারী হুমায়ুন কবির বলেন, মাঝখানে তিন মাস নিম্নমুখী থাকলেও মূলত গত দেড় বছরের বেশি সময় ধরে অস্থির ইস্পাতের বাজার।
তিনি বলেন, ‘বিশ্ববাজারে স্ক্র্যাপের দাম, ডলার সংকট ও জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধির প্রভাবে রডের দাম কিছুটা বাড়বে, স্বাভাবিক। কিন্তু তার চেয়ে বেশি অস্থির হয়েছে রড উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর সিন্ডিকেট করে কারসাজির কারণে।’
একসময় শুধু চট্টগ্রামেই ছোট-বড় অর্ধশতাধিক রড উৎপাদনকারী কারখানা ছিল। কিন্তু গত কয়েক বছর ধরে বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের উৎপাদন বন্ধ রয়েছে। এখন রডের বাজার ১০-১৫টি প্রতিষ্ঠানের আধিপত্য।
এদিকে বেড়ে গেছে স্থানীয় স্ক্র্যাপ, প্লেট ও বিলেটের দামও। গত এক সপ্তাহে এসব কাঁচামালের দাম টনে ৫ হাজার থেকে ৭ হাজার টাকা পর্যন্ত বৃদ্ধি পেয়েছে।
শিপ ব্রেকিং ইয়ার্ডগুলোতে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বর্তমানে ইয়ার্ডে প্রতি টন স্ক্র্যাপ বিক্রি হচ্ছে ৬৫ হাজার টাকা দামে। অথচ ঈদুল আজহার আগেও প্রতি টন স্ক্র্যাপের দাম ছিল মাত্র ৪৫ হাজার টাকা।
স্ক্র্যাপের পাশাপাশি বেড়েছে ইস্পাতের কাঁচামাল প্লেট ও বিলেটের দামও। প্লেট ও বিলেটের দাম টনে বেড়েছে ৬-৭ হাজার টাকা। বর্তমানে বাজারে প্রতি টন প্লেট ৮০ হাজার টাকা ও বিলেট ৮১ হাজার টাকায় বিক্রি হয়েছে। এক সপ্তাহ আগে বাজারে প্রতি টন প্লেট ৭৩ হাজার টাকা ও বিলেট ৭৫ হাজার টাকায় বিক্রি হয়েছে। ঈদুল আজহার আগে প্রতি টন প্লেট ৬০ হাজার টাকা ও বিলেট ৬২ হাজার টাকায় বিক্রি হতো।
রড উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোতে স্ক্র্যাপ সরবরাহকারী শিপ ব্রেকিং খাতের উদ্যোক্তারা জানিয়েছেন, আন্তর্জাতিক বাজারে চলতি বছরের মার্চ থেকে এপ্রিল পর্যন্ত স্ক্র্যাপ জাহাজের বুকিং দর বেশি থাকায় আমদানি কিছুটা কম হয়েছে।
তবে মে মাসের শুরু থেকে বিশ্ববাজারে স্ক্র্যাপের দাম উল্লেখযোগ্য হারে কমে যাওয়ায় এই সময়ে বাংলাদেশে আমদানি বৃদ্ধি পাওয়ায় কথা। কিন্তু তা না হয়ে উল্টো এই সময়েও পণ্যটির আমদানি কমে গেছে।
মহরম শিপ রিসাইক্লিং ইন্ডাস্ট্রিজের স্বত্বাধিকারী কামাল পাশা বলেন, ‘ডলার সংকটের কারণে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনা অনুযায়ী পণ্য আমদানিতে কড়াকড়ি করছে বাণিজিক ব্যাংকগুলো। এতে অন্যান্য পণ্যের মতো গত তিন মাসে ইস্পাতের কাঁচামাল স্ক্র্যাপের আমদানিও উল্লেখযোগ্য হারে কমে গেছে। ফলে আন্তর্জাতিক বাজারে স্ক্র্যাপের বড় দরপতন হলেও দেশীয় বাজারে উল্টো বেড়ে গেছে পণ্যটির দাম। সেই প্রভাবে বেড়েছে এমএস রডের দামও।’
কে আর শিপ ব্রেকিং ইয়ার্ডের স্বত্বাধিকারী সেকান্দার হোসেন জানান, বিশ্ববাজারে গত তিন-চার মাস ধরে স্ক্র্যাপ ও পুরোনো জাহাজের দাম অনেক কমেছে। ‘এখন আমদানি বাড়াতে পারলে স্ক্র্যাপ ও রড দুটোর দামই কমে আসত স্থানীয় বাজারে,’ বলেন তিনি।
কম পুঁজিতে অনেক বেশি লাভ: লাল শাক চাষে স্বপ্ন দেখছেন কৃষক আতাউর
Get the latest News first— Follow us on Zoombangla Google News, Zoombangla X(Twitter) , Zoombangla Facebook, Zoombangla Telegram and subscribe to our Zoombangla Youtube Channel.