সহানুভূতির সঙ্গে ‘সংক্রামক হাই তোলা’র সম্পর্ককে আরও মজবুত করে এ তথ্য। কারণ, অচেনা মানুষের তুলনায় বন্ধুবান্ধব বা পরিবারের সদস্যদের অনুভূতি আমরা ভালো বুঝতে পারি। তাই তাদের হাই তোলা দেখলে আমাদের মধ্যে সহানুভূতির পরিমাণ বাড়ে। ফলাফল—হাই তোলার সম্ভাবনা বেড়ে যায়।
সংক্রামক হাই তোলার এই বিষয়টি আমাদের সামাজিক বন্ধন ও সহযোগিতার মনোভাবকে আরও শক্তিশালী করে তোলে। অর্থাৎ, এর মাধ্যমে মস্তিষ্কে অন্যদের সঙ্গে বন্ধন তৈরি সহজ হয়।
বিজ্ঞানীরা দেখেছেন, কেবল মানুষই নয়, পাখি, সরীসৃপ বা মাছের মতো প্রাণীদের হাই তোলা দেখলেও মানুষের হাই পেতে পারে। (হ্যাঁ, মাছও হাই তোলে, সত্যি। এ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল লাইব্রেরি অব মেডিসিনে গবেষণাপত্রও আছে রীতিমতো!) মানুষ ছাড়াও কুকুর এবং শিম্পাঞ্জীর মতো প্রাণীদের মধ্যে সংক্রামক হাই তোলার বিষয়টি দেখা যায়। একটা শিম্পাঞ্জীকে হাই তুলতে দেখলে আরেকটা শিম্পাঞ্জীর মধ্যেও হাই তোলার প্রবণতা তৈরি হয়। আমাদের মতো ওদের ক্ষেত্রেও বিষয়টি সামাজিক বন্ধন তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। গবেষণায় আরও উঠে এসেছে, মানুষ ও অন্যান্য প্রাণীদের মধ্যে যারা শক্তিশালী সামাজিক বন্ধনে আবদ্ধ, তাদের মধ্যে সংক্রামক হাই তোলার প্রবণতা বেশি।
মানুষের বয়স বাড়তে থাকলে তাদের মধ্যে সহানুভূতির পরিমাণও বাড়তে থাকে। ফলে, তাদের মধ্যে সংক্রামক হাই তোলার প্রবণতাও বেড়ে যায়। তবে বৃদ্ধ বয়সে এর পরিমাণ আবার কমতে পারে, সংবেদনশীলতা কমার কারণে। স্বাভাবিক, আমরা জানি, বৃদ্ধ বয়সে মানুষ ধীরে ধীরে শিশুর মতো অবুঝ আচরণ করতে থাকে। কারণ, সংবেদনশীলতা, সহ্যক্ষমতা ও চিন্তাশক্তির তীব্রতা কমে আসতে থাকে এ সময়। মানুষ ও শিম্পাঞ্জী—উভয়ের মধ্যেই সংক্রামক হাই তোলার প্রবণতার এই উত্থান-পতন দেখা যায় বয়সভেদে।
শুধু যে পরিচিত মানুষ বা পোষা প্রাণীকে হাই তুলতে দেখলে মানুষের মধ্যে হাই তোলার অনুভূতি তৈরি হয়, তা নয়। অচেনা বিভিন্ন ধরনের প্রাণীকে হাই তুলতে দেখেও নিজের মধ্যে হাই তোলার অনুভূতি তৈরি হতে পারে। এসব তথ্য থেকে বোঝা যায়, হাই তোলার মাধ্যমে একে অন্যকে বোঝা ও পারষ্পারিক বন্ধন তৈরির কাজটি সহজ হয়, হোক সেটা মানুষ বা অন্য কোনো প্রাণী।
মস্তিষ্কে বিশেষ ধরনের কিছু কোষ আছে, যাদেরকে মিরর নিউরন বলা হয়। বাংলায় চাইলে বিম্ব নিউরন বলতে পারেন। আমরা যখন কাউকে কিছু করতে দেখি, তখন এ নিউরনগুলো সক্রিয় হয়। এদের সক্রিয়তার কারণে মনে হয়, আমাদেরও এমন কিছু করা উচিত। যেমন হাই তোলা বা পাশের কেউ কোনো একদিকে কিছু সময় তাকিয়ে থাকলে কিংবা আশপাশের মানুষ হাসলে মিরর নিউরন সক্রিয় হয়। তখন প্রায় সময়ই আমরা একই কাজ করি। অর্থাৎ আমাদের মস্তিষ্ক অন্য মানুষ কী করছে, তা করার চেষ্টা করে নানা সময়।
তবে আপনি যদি সক্রিয়ভাবে এ প্রবণতা ঠেকাতে চেষ্টা করেন, তাহলে অন্য কথা। সেটা সম্ভব। যেমন কাউকে হাসতে দেখে হাসি পেলেও তা আটকে রাখা যায় অনেক ক্ষেত্রে। কিংবা অন্যদিকে কাউকে তাকিয়ে থাকতে দেখে সেদিকে তাকানোর কৌতূহল হলেও তা দমানো যায়। হাই তোলার জন্যও এ কথা সত্যি। আবার এই বিষয়ক বিভিন্ন গবেষণায় সংক্রামক হাই তোলার প্রবল সম্ভাব্যতা দেখা গেলেও শতভাগ ক্ষেত্রেই যে কাউকে হাই তুলতে দেখলে আপনিও হাই তুলবেন, এ কথা নিশ্চিত করে বলা যায় না। তবে এ প্রবণতা বেশির ভাগের ক্ষেত্রেই কাজ করে।
তাই পরবর্তীতে যখন কাউকে হাই তুলতে দেখলে নিজের হাই পাবে, ধরে নিতেই পারেন, আপনার মস্তিষ্ক ওই মানুষটির সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তোলার একটা অবচেতন চেষ্টা করছে। প্রাণীদের ক্ষেত্রেও কথাটি একইভাবে সত্যি। এই লেখা পড়তে পড়তেও হয়তো হাই তুলতে পারেন আপনি। সেটা ঠেকানোর চেষ্টা করার দরকার নেই। মস্তিষ্কের অক্সিজেনের চাহিদা পূর্ণ করা তো মন্দ নয়!
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।