জুমবাংলা ডেস্ক : সরকারি প্রকল্পের উপজেলা পর্যায়ের একজন প্রকৌশলীর কাছে সম্প্রতি একটি ফোন আসে। অন্য পাশ থেকে নিজেকে আমাদের সময়ের সংবাদকর্মী দাবি করে এক ব্যক্তি বলেন, ‘বরাদ্দকৃত প্রকল্পের কাজ ২০/৩০ ভাগ হলেও কাগজপত্রে শেষ দেখিয়ে লাখ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছেন। আপনার পছন্দের ঠিকাদারদের ২০ শতাংশ ঘুষের বিনিময়ে কাজ দিয়েছেন, সবই আমরা জানি। রিপোর্ট বন্ধ করতে চাইলে আমার বিকাশ অ্যাকাউন্টে ৪০ হাজার টাকা পাঠান।’
ওই প্রকৌশলী বিষয়টি দেশের জনপ্রিয় দৈনিক আমাদের সময় কর্তৃপক্ষকে জানালে নেওয়া হয় আইনি পদক্ষেপ। এর পরই এ প্রতারকচক্রকে ধরতে ফাঁদ পাতে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। অবশেষে চক্রের মূল হোতাসহ দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ গ্রেপ্তার অভিযানে নেতৃত্ব দেন গোয়েন্দা পুলিশের এডিসি (পশ্চিম) গোলাম মোস্তফা রাসেল ও শাহাদাত হোসেন সুমা। গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন- প্রতারকচক্রের মূল হোতা মো. শিবলু ও তার সহযোগী মো. সোহাগ।
গ্রেপ্তারকৃতদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে ডিবি জানিয়েছে, শিবলুর নেতৃত্বে এ চক্রটি নিজেদের সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে প্রায় দুই বছর ধরে এ অপকর্ম চালিয়ে আসছে। মাদকাসক্ত শিবলু ও সোহাগ প্রতিদিনই কোনো না কোনো কর্মকর্তাকে ফোন করে নিজেদের সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে নানা হুমকি দিত এবং বিকাশ নম্বর দিয়ে টাকা চাইত। তাদের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে আরও তথ্য বেরিয়ে আসবে।
ডিবি জানায়, গতকাল শুক্রবার সকালে রাজধানীর গুলিস্তান এলাকা থেকে শিবলু ও সোহাগকে তারা গ্রেপ্তার করেন।
পরে ওইদিনই তাদের দুজনের বিরুদ্ধে রাজধানীর তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানায় মামলা করেন আমাদের সময়ের মানবসম্পদ বিভাগের কর্মকর্তা এবিএম সিদ্দীক। এর পর বিকালে তাদের দুজনকে তিন দিনের রিমান্ড চেয়ে ঢাকা মহানগর হাকিম আদালতে পাঠানো হয়। শুনানি শেষে আদালত দুই প্রতারকের একদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
মামলার এজাহারে বলা হয়, গত ৫ আগস্ট থেকে দৈনিক আমাদের সময়ের সংবাদকর্মীর পরিচয় দিয়ে শিবলু ও সোহাগ কখনো প্রকৌশলী, কখনো খাদ্য বিভাগের কর্মকর্তা, যুগ্ম সচিব, উপসচিব, বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তা, পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাসহ সামরিক-বেসামরিক বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে প্রতারণা করে আসছিল। তারা নিজেদের কখনো অপরাধবিষয়ক প্রতিবেদক, কখনো বার্তা সম্পাদক পরিচয় দিত। এতে আমাদের সময়ের সুনাম ও মর্যাদা নষ্ট হয়েছে। অভিযোগ ওঠার পরপরই গত ২০ আগস্ট তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানায় জিডি করে আমাদের সময় কর্তৃপক্ষ।
পুলিশ জানায়, গ্রেপ্তারকৃতদের কাছ থেকে বেশ কয়েকটি মোবাইল ফোন, সিম ও কিছু চিরকুট জব্দ করা হয়েছে। কোন কর্মকর্তাকে ফোন করে কী বলতে হবে, সেসব চিরকুটে লেখা রয়েছে। এ ছাড়া তাদের কাছ থেকে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের ওয়ার্ড কাউন্সিলরদের একটি তালিকাও জব্দ করা হয়েছে। এ পর্যন্ত এমন শতাধিক ঘটনার মাধ্যমে টাকা হাতিয়ে নেওয়ার কথা স্বীকার করেছে শিবলু ও সোহাগ। এ টাকা দিয়ে তারা প্রতিদিন ৫/৬ বার হেরোইন সেবন করত। প্রতারণার জন্য বিভিন্ন ওয়েবসাইট থেকে সরকারি কর্মকর্তাদের নম্বর সংগ্রহ করত বলেও জানিয়েছে তারা।
ডিবি পশ্চিমের উপকমিশনার (ডিসি) মোখলেসুর রহমান বলেন, তাদের দুজনকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করলে আরও বিস্তারিত তথ্য বেরিয়ে আসবে বলে আমরা আশা করছি।
এদিকে এ ধরনের প্রতারকদের বিষয়ে সতর্ক থাকতে সংশ্লিষ্ট সবাইকে অনুরোধ জানিয়েছে আমাদের সময় কর্তৃপক্ষ। প্রতিবেদন প্রকাশের ভয় দেখিয়ে কোনো ধরনের প্রতারণা ও হুমকি দেওয়া হলে দ্রুত তা আমাদের সময়ের অফিসিয়াল টেলিফোন, ফ্যাক্স অথবা ই-মেইলের মাধ্যমে জানানোর অনুরোধ করা হচ্ছে। সূত্র : আমাদের সময়
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।